মোঃ কামাল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি
অভয়নগরে মোবাইল আসক্তিতে ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ। সর্বপ্রথম ১৯৭৩ সালে মার্টিন কুপার মোবাইল আবিষ্কার করেন । তখন মোবাইল আবিষ্কার হলেও বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরু হয় ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে । মূলত তিনি মোবাইল ফোন আবিষ্কার করেছিলেন মানুষের উপকারের জন্য। অবশ্যই তিনি সেটা পেরেছেন। মোবাইলের উপকারিতা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু মোবাইলের অপব্যবহারে অভয়নগর উপজেলাসহ সারা দেশে আজ উপকারের চাইতে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। আর এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উঠতি বয়সের যুবক যুবতীরা।
যুবক যুবতীরা মোবাইল ফোন অপব্যবহার করে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে । ছাত্র জীবনের চিন্তা ভাবনা থেকে শুরু করে ভবিষ্যৎ জীবনের চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে ধ্বংসের লীলাখেলায় মেতে উঠেছে যুব সমাজ। একাটা দেশের মেরুদণ্ড হলো যুব সমাজ। অদম্য সাহস আর শক্তি দিয়েই অসাধ্যকে সাধন করে দেশকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা একমাত্র যুব সমাজেরই আছে। আর এই যুব সমাজ আজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হলো মোবাইল। অথচ একই প্রযুক্তিকে সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের অনেক দেশ দ্রুত উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে। এখানে পার্থক্য আসলে দৃষ্টিভঙ্গি এবং ব্যবহারের।
মোবাইলে যেভাবে ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ –
অভয়নগর উপজেলায় ৮০ শতাংশ যুবক সুযোগ পেলে মোবাইল এ পর্ণ ছবি বা ভিডিও দেখে। ফলে লেখাপড়া বাদ দিয়ে তারা যৌনতার বিষয়ে আগ্রহী ও তৎপর হয়ে উঠছে । যার পরিণতিতে চরিত্রের দিক থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যুব সমাজের বিরাট অংশ। আর যুব সমাজ ধ্বংস হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো এটা । মোবাইলে পর্ণ ছবি বা ভিডিও দেখে তারা যৌন উত্তেজনায় উত্তেজিত হয়ে ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত হচ্ছে। মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে মেয়েরাও এ বিষয়ে পিছিয়ে নেই। আর এ কারণে অভয়নগর উপজেলাসহ সারা দেশে ১ বছরের শিশু থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। পাশাপাশি মাদক সেবনসহ বাড়ছে বিভিন্ন অপরাধ। আর এটার জন্য অনেকটাই দায়ী মোবাইল।
এমনকি ক্লাসে বসেই ৫০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী পর্ণ ছবি বা ভিডিও দেখে। মোবাইলের কারণে আজ তাদের লেখাপড়ার অবস্থা অনেকটা খারাপ। আর মোবাইল এ ক্যামেরা থাকায় হুট হাট করে ক্লাসে বসে থাকা বা রাস্তায় হেটে যাওয়া কোনো মেয়ের ছবি তুলে নিচ্ছে। আবার সেই ছবি তারা ভাইরাল করছে বিভিন্ন ওয়েব সাইটের মাধ্যমে।
অভয়নগর উপজেলায় প্রাই ৪০ শতাংশ যুবক প্রেম করার উদ্দেশ্যে মোবাইল ব্যবহার করে। রাতের পর রাত জেগে কথা বলতে বলতে তাদের স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে। কারণ ম্যাসেন্জারসহ নানা প্রকার অনলাইনে ফোনের মাধ্যমে অধিক কথা বলা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর ।বিশেষ করে ব্রেনের ও হার্ট এর অনেক ক্ষতি করে এটি। ফোনে কথা বলার এক পর্যায়ে তারা অশ্লীল কথা বলা শুরু করে । আবার সেই কথা রেকর্ড বা স্কিন সট দিয়ে সংগ্রহ করে রাখে এসব যুবক যুবতীর ফোনে। আবার ভালোবাসায় বিভোর হয়ে একে অপরের সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়। তাদের সেই কাজগুলো তারা তাদের ফোন দিয়ে ভিডিও করে রাখে। আর এ দিক থেকে মেয়েরাও পিছিয়ে থাকছে না। এক সময় কোন কারণে তাদের সম্পর্ক যখন নষ্ট হয় তখন সেই রেকর্ড করা ভিডিও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভাইরাল করে দেয়। আর এর কারণে অনেক প্রেমের শেষ পরিণতি হয়ে দাড়ায় আত্মহত্যা। আর অভয়নগরে এমন ঘটনার দৃষ্টান্ত রয়েছে অনেক।
মোবাইলের এ সময়ের আলোচিত এক সমস্যার প্রতিচ্ছবি হলো পরকীয়া। যার কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে অনেক সংসার। প্রতিদিন পরকীয়ার কারণে সন্তান ও সাজানো সংসার ফেলে অন্ধকার পৃথিবীর দিকে পাড়ি দিচ্ছে শ’শ নারী পুরুষ । আর এই কাজের সাথে আজ বেশি জড়িয়ে পড়ছে যুব সমাজ। আর এই পরকীয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মোবাইল।
মোবাইলের কারণে আজ অনেক দূর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের। বাসা-বাড়ি, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ অফিসে ও মার্কেটে তো বটেই, রাস্তায় চলতে চলতেও মোবাইলে কথা বলছে মানুষ। আইনে নিষিদ্ধ করা হলেও ব্যক্তি মালিক থেকে শুরু করে, বাস-ট্রাকের চালক গাড়ি চালানোর সময়ও মোবাইলে কথা বলছে। এর ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে যখন-তখন এবং যেখানে-সেখানে।
এখানে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে জানানো দরকার, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলায় যেসব দুর্ঘটনা ঘটে সেগুলোতে শুধু চালকদেরই অপমৃত্যু ঘটে না, মারা যায় অনেক পথচারী এবং অন্য গাড়ির লোকজনও। দূর্ঘটনার শিকার হয়ে বহু মানুষকে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। অনেকে এমনকি সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্বও বরণ করে। আবার পথে-ঘাটে এই দুর্ঘটনার কারণে প্রাণ চলে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষের। এর কারণ একমাত্র এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন।