শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
দুপচাঁচিয়ায় শ্রী শ্রী বাসন্তী পূজা অনুষ্ঠিত বাংলার জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ন দাস আর নেই : নওগাঁর মহাদেবপুরে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত নওগাঁ ভুয়া সিআইডি পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতার দুপচাঁচিয়ায় প্রাণিসম্পদ সেবা ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত মধুপুর সহকারী পুলিশ সুপারের আবারও বিশাল অর্জন সরিষাবাড়ীতে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে নওগাঁর সাপাহারে আদিবাসী মঙ্গল টুডু নামে এক কৃষকের আম বাগানের গাছ কর্তনের অভিযোগ দুপচাঁচিয়ায় থানা পুলিশের অভিযানে ১০ জন গ্রেপ্তার নওগাঁয় প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়াই নবম শ্রেণীর ছাত্রীকে তুলেনিয়ে ধর্ষণ বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় মুজিবনগর দিবস উদযাপিত নাট্যকার অমৃতলাল বসুর জন্মদিন আজ : নওগাঁ জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় মোহাধুমধামে চৈত্র মাসে শুক্লপক্ষে বাসন্তী পূজা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত নওগাঁ ঐতিহ্যবাহী ৫ শ বছরের পুরনো রঘুনাথ মন্দিরে রামনবমী জন্ম উৎসব উপলক্ষে ভক্তদের ঢল নেমেছে কালাইয়ে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪ অনুষ্ঠিত বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন কালাইয়ে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২৪ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নওগাঁর মহাদেবপুরে বিএনপি ও জামাতনেতা সহ ২১ জনের মনোনয় পত্র দাখিল বগুড়ায় ২২ কেজি গাঁজাসহ ২ জন গ্রেফতার তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ কালাইয়ের জনগণ

এখন সৌদি খেজুর চাষ হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২১ এপ্রিল, ২০২১
  • ১৯২ বার পঠিত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্রভূমিতে সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে মধ্যপ্রাচ্যের খেজুর চাষ। উৎপাদন, বাজারজাত ও মুনাফাসহ সবদিক দিয়ে এটি আশাব্যঞ্জক। গবেষকদের মতে, আমদানি করা খেজুরের চেয়ে এই ফল সুস্বাদু। দেশে উৎপাদিত খেজুরের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন তারা। তাই বরেন্দ্র এলাকার উঁচু জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে এর বাগান।

সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে আশা করছেন। জানা গেছে, বরেন্দ্রর উষ্ণ আবহাওয়া ও রুক্ষ মাটিতে ধান ও আমের পাশাপাশি অর্থকরী ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে মরুর খেজুর। অন্যান্য ফলের চেয়ে এর সংরক্ষণকাল, চাহিদা ও বাজারমূল্য বেশি।

তাই বাণিজ্যিকভাবে খেজুর বাগান করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন স্থানীয় চাষিরা। নাচোলের এই খেজুর বাগানে এবার ধরেছে প্রচুর খেজুর। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ভেরেন্ডি এলাকায় সর্বপ্রথম ২০১৭ সালে বাণিজ্যিকভাবে সৌদি খেজুরের বাগান করে সফলতা পান চাষি ওবায়দুল ইসলাম রুবেল। এর মধ্যে গত বছর দুয়েকটি গাছে খেজুর এসেছিল। এবার তার বাগানে খেজুর ধরেছে প্রচুর।

এগুলো আকার ও স্বাদে সৌদি খেজুরের মতো হওয়ায় বাজারে চাহিদা বেশি। রুবেলের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ ও লালচে খেজুর সুবাস ছড়াচ্ছে। থোকায় থোকায় দুলছে সুককারি, বারোহি, আম্বার ও মরিয়মসহ বিভিন্ন জাতের খেজুর। চাষি রুবেল ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারেন, দেশেই মধ্যপ্রাচ্যের খেজুর চাষ হচ্ছে।

এজন্য বরেন্দ্রভূমিতে এই ফল চাষে আগ্রহী হন তিনি। ২০১৭ সালে সৌদি আরব থেকে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে অর্ধশত জাতের বীজ সংগ্রহ করে বাড়ির পাশেই তিন বিঘা জমিতে খেজুরের বাগান গড়ে তোলেন। সঠিক পরিচর্যা ও অক্লান্ত পরিশ্রমে এসেছে কাঙ্ক্ষিত ফল। ৬০০ চারা নিয়ে যাত্রা শুরু করা তার বাগানে এখন গাছের সংখ্যা প্রায় চার হাজার।

আর বীজ থেকে চারা উৎপাদন করেছেন আরও ৭-৮ হাজারের মতো। খেজুর চাষে উদ্বুদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে রুবেল বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে ধান ও আম ছাড়া অন্য কোনও ফসল তেমন হয় না। যদিও সম্প্রতি পেয়ারা, মাল্টা, ড্রাগনসহ বিভিন্ন ফলের চাষ বেড়েছে।

কিন্তু সবজি চাষ করে এই অঞ্চলের কৃষকরা তেমন লাভবান হতে পারেন না। উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে অন্যান্য ফল ও সবজি চাষে খরচ অনেক। কিন্তু সেই তুলনায় লাভ অনেক কম। অন্যান্য ফসলের সংরক্ষণকাল অনেক কম।

jagonews24

খেজুর চাষের জন্য এখানকার আবহাওয়া উপযোগী এবং সংরক্ষণকাল, চাহিদা ও বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে খেজুর বাগান করতে উদ্বুদ্ধ হয়ে সফলতা পেয়েছি।’ রুবেলের বাগানে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ১১ লাখ টাকা। যদিও বিনিয়োগের বেশিরভাগ টাকাই চারা বিক্রি থেকে ফিরে এসেছে। তিনি মনে করেন, চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে এই খেজুর চাষ করে লাভবান হতে পারেন। তবে রুবেল আগ্রহী চাষিদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘বাগান করলাম আর পরের বছরই লাভ পেতে শুরু করবো, বিষয়টি কিন্তু এমন নয়।

এজন্য কিছুটা সময় লাগবে। দিনে দিনে গাছ যেমন বড় হয়, তেমনই ফল আসার পরিমাণ বাড়ে। একটি খেজুর গাছ থেকে প্রতিবছর আড়াই থেকে তিন মন খেজুর পাওয়া যায়। একটি খেজুর গাছ বহু বছর ফল দেয়। তাই এটা অনেকটা রয়্যালটি আয়ের মতো।’ রুবেলের বাগানের খেজুর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২-৩ হাজার টাকায়। আর বীজ থেকে পাওয়া চারা সর্বনিম্ন ২৫০ থেকে ৫ হাজার টাকা এবং মাতৃগাছের শাখা চারা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তার এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থানীয় অনেকেই গড়ে তুলছেন খেজুর বাগান।

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তার বাগান থেকে খেজুর গাছের চারা কিনে নেয়া হচ্ছে। এবার তার তিন বিঘা জমিতে মোট খরচ হয়েছে প্রায় তিন লাখ টাকা। সব মিলিয়ে খেজুর বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরছেন ২৫-৩০ মণ। টাকার পরিমাণ প্রায় দুই লাখ ১০ হাজার টাকা। এছাড়া বিপুল পরিমাণ গাছের চারাও বিক্রি করছেন তিনি। রুবেলের কাছ থেকে ২৫০টি চারা সংগ্রহ করে নিজে একটি বাগান গড়ে তোলেন ভেরেন্ডি গ্রামের কৃষক তোফাজ্জল হোসেন। তার আশা, ‘বরেন্দ্রর উষ্ণ আবহাওয়ায় খেজুর চাষ ভালো হবে বলেই বাগান করছি। এখন পর্যন্ত যা বুঝতে পারছি, রুবেলের মতো আমিও খেজুর চাষে লাভবান হবো।’

একইরকম আশাবাদী নাচোল উপজেলার সমাসপুর গ্রামের চাষি আফজাল হোসেন। তিনিও রুবেলের কাছ থেকে ২০০ চারা কিনে গড়ে তুলেছেন খেজুর বাগান। এছাড়া জেলার জামতালা, কল্যাণপুর ও গোবরাতলায় চাষ হচ্ছে মরুর খেজুর।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের জার্ম প্লাজম অফিসার জহুরুল ইসলাম জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে খেজুর চাষের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা ব্যাপক। এখানকার চাষিদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের খেজুর নতুন অর্থকরী ফসল হিসেবে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। এজন্যই আমরা এর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখছি। বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি-আবহাওয়া ও জলবায়ু খেজুর চাষের জন্য উপযোগী এবং উৎপাদন খরচ ও রোগবালাই কম।

jagonews24

বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির প্রাপ্যতা অনেক কম। খেজুর চাষে পানি কম লাগে। বর্তমানে বাগানগুলোতে আমরা ফল দেখতে পাচ্ছি। এছাড়া এখানকার উৎপাদিত খেজুরের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ আমদানিকৃত খেজুরের চেয়ে অনেক বেশি। সুতরাং এই ফলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা অনেক বেশি এবং চাষিরা চাষ করে লাভবান হবে বলেই আমাদের আশা।’ তবে গবেষকদের মন্তব্য, খেজুর বাগান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

বিশেষ করে চারা কিনে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা ও মাতৃগাছের শাখা চারা সংগ্রহের বিষয়ে চাষিদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। গবেষকরা বলছেন, ‘একটি বাগানে প্রতি ২০টি মাতৃগাছের পাশাপাশি একটি অথবা দুটি পুরুষ গাছ লাগাতে হবে। তাহলে ভালো পরাগায়ন হবে এবং গাছে খেজুর ভালো আসবে। তা না হলে ফলন ভালো হবে না।’ চারটি বীজ থেকে উৎপাদিত চারার তিনটিই পুরুষ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

সেক্ষেত্রে বীজের চারা কিনে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই গবেষকদের পরামর্শ, ‘বাগান করতে চাইলে বীজের চারা এড়িয়ে চলাই ভালো। সেক্ষেত্রে টিস্যু কালচারের চারা অথবা মাতৃগাছের শাখা চারা অর্থাৎ যে গাছে খেজুর ধরেছে, দেখা যাচ্ছে সেই গাছের স্যাকারকে ডিভিশন করে চারা তৈরি করে লাগালে একজন চাষি শতভাগ স্ত্রী গাছ পাবে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে যদি একজন কৃষক খেজুর চাষ করে বা বাগান গড়ে তোলে তাহলে তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ভালো ফল পেতে অবশ্যই স্ত্রী গাছের পাশাপাশি পুরুষ গাছ লাগাতে হবে বাগানে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় উৎপাদিত খেজুর ও বাগান পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করছি আমরা। আগামীতে দেশে খেজুরের আমদানি নির্ভরতা কমাতে বরেন্দ্র অঞ্চলে খেজুর চাষ সম্প্রসারণের কথা ভাবা হচ্ছে। যেহেতু জেলার বরেন্দ্র অঞ্চলের আবহাওয়া অনেকটা মধ্যপ্রাচ্যের মতোই। তাই আমাদের আশা, এই অঞ্চলে খেজুর চাষ সম্ভব। বাণিজ্যিকভাবে খেজুর চাষে কৃষকরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি এর মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Developed By cinn24.com
themesbazar24752150