মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:
মেয়ের জন্মের দিন বাবা শামীম শেখের আনন্দের সীমা ছিল না।সেদিন পরিচিত অপরিচিত যাকে পেয়েছেন মিষ্টি মুখ করিয়েছেন তিনি।অনেকের কাছে শুনেছেন, মেয়েরা নাকি বাবার জান্নাত।বাবার সঙ্গে মেয়েদের সম্পর্ক খুব গভীর হয়।মেয়েরা বাবাদের খুব বোঝে।এই শোনা থেকেই স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে মেয়ের নাম জান্নাত রেখেছেন তিনি।শামীম শেখ পেশায় দিনমজুর হলেও ৪ বছর বয়সী জান্নাতকে কখনও কষ্ট দেয়নি। মেয়ে ব্যাথা পেলে কেঁদেছেন বাবা শামীম শেখ|বাইরে কাজ করে এসে সন্ধ্যায় মেয়ে জান্নাতকে বুকে নিলেই নাকি তার শরীর শীতল এবং ক্লান্তি দূর হয়ে যায়, এমনটাই স্ত্রী মিতুকে বলতেন তিনি।
৫ মাস হলো ভালো নেই জান্নাত ও তার বাবা। মেয়ের অসুস্থতায় শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন তিনি। ভেঙে যেতে বসেছে মেয়েকে নিয়ে গত ৪ বছর ধরে দেখা সব স্বপ্ন।বাবা-মায়ের চোখের সামনে মেয়ে জান্নাত এখন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
জান্নাতের শরীরে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে।চার মাস আগে হঠাৎ অসুস্থ হলে চিকিৎসা করালে ডাক্তার তখন কিছুই বলেনি।তবে সর্বশেষ দেড়মাস আগে জানান, জান্নাতের উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে তাঁকে বাঁচানো সম্ভব না।এই সংবাদ শোনার পর বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন মা কানিজ ফাতেমা মিতু আর বাবা শামীম শেখ।
মেয়েকে বাঁচাতে এমন কোনো লোক নেই যার দ্বারস্থ হচ্ছেন না তারা।কিন্তু দ্বারস্থ হয়ে যে সাহায্য পাচ্ছেন তাতে চিকিৎসার নূন্যতম খরচও জোগার হচ্ছে না।
জান্নাতের নানি শেফালী বেগম বলেন, আমার মেয়ে এবং আমাদের সংসার সব এলোমেলো হয়ে গেছে। কারও মুখে খাবার ওঠে না।কয়েকদিন আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জান্নাতকে চিকিৎসা করাতে নিয়েছিলাম। সেখানে চিকিৎসা শুরুর পর ডাক্তার জানালেন জান্নাতের করোনা পজিটিভ। বাধ্য হয়ে বরিশালে নিয়ে এসেছি। বরিশালে এসে কিছু টাকা জোগার করেছিলাম।সেই টাকা নিয়ে আজ
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা যাব।
ডাক্তার বলেছেন, এবার গেলে প্রথমে কেমো দেবেন। তিনি বলেন,কেমোর পাশাপাশি ওকে রক্ত দিতে হয়। প্রতিবার রক্ত দিতে সব মিলে ১৪ হাজার টাকার মতো লাগে।এভাবে তিনটি কেমো দিতে হবে। অথচ আমাদের হাতে এত টাকা নেই। কি করবো বুঝতে পারছি না।
জান্নাতের বিষয়ে জানতে চাইলে বাবা শামীম শেখ কোনো কথাই বলতে পারছিলেন না। অস্পষ্ট স্বরে বলছিলেন, বাবার চোখের সামনে ধুকে ধুকে সন্তানের মৃত্যু যে কত বড় ভয়াবহ ঘটনা তা বলতে পারব না। আমি দেখছি আমার মেয়েটা শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমি কিছু করতে পারছি না। তিনি মেয়েকে বাঁচাতে সকলের কাছে সাহায্য চেয়েছেন।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ আলেকান্দা আমতলা মোড় সংলগ্ন আরমান খান সড়কের বাসিন্দা শামীম শেখ ও মিতু দম্পতি।
একই সড়কের বাসিন্দা ডা. শাহনাজ ইসলাম রুবী বলেন, ওদের পরিবারের সামর্থ নেই শিশুটিকে চিকিৎসা করানোর মতো। আমি চেষ্টা করেছি যতটুকু সম্ভব সহায়তা করার। জান্নাতের ৪ মাস ধরে জ্বর ছিল। সেই জ্বরের চিকিৎসা করাতে গিয়ে খুলনায় জানা যায় সে ক্যান্সারে আক্রান্ত। এরপরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় তাকে।
তিনি বলেন, ঢাকায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এখন পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। তবে ঢামেকের চিকিৎসকরা আশ্বস্ত করেছেন জান্নাতের এখন প্রাথমিক স্টেজ। ঠিকমতো চিকিৎসা পেলে সে সুস্থ হতে পারে।