মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:
ঝালকাঠিতে প্রতিবছরই জমজমাট আয়োজনে পালিত হয় দুর্গাপূজা।এ বছর ঝালকাঠি জেলায় ১৭১টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।এখন চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। দিন রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। তবে কারিগর সংকট ও ঝড়-বৃষ্টিতে কাজ অনেকটা ধীরগতিতে চলছে। অনেকে বাইরে থেকে কারিগর এনে কাজ করাচ্ছেন।
সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে,প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কিছু কিছু মণ্ডপে এখনো ৫০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে।স্থানীয়রা জানান,কারিগর সংকট থাকায় বাইরে থেকে কারিগর এনে প্রতিমা তৈরির কাজ করাতে হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে রংতুলির আঁচড়ে নব সাজে সজ্জিত হয়ে উঠবে প্রতিমা গুলো।
স্থানীয় কারিগর মিলন পাল বলেন, ‘একসময় শুধু পাল বংশের লোকেরা ঠাকুর (প্রতিমা) তৈরি করতো। বর্তমান প্রজন্ম এ কাজে আসছে না। তারা যাচ্ছে অন্য পেশায়। এটি বছরের নির্ধারিত সময়ের কাজ। অন্য পেশায় প্রতি মাসেই আয় করা যায়। এছাড়া বাজার মূল্য অনুযায়ী মজুরি কম পাওয়ায় কারিগররা এ কাজে আগ্রহ হারাচ্ছে। তাই কিছুটা সংকট রয়েছে। ফলের কাজে ধীরগতি চলছে।
আরেক কারিগর উত্তম পাল বলেন, ‘২৭ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। এবার ১২টি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছি। বাড়িতেও পাঁচটি সেট তৈরি করছি। সেগুলো কম দামে বিক্রি করবো। কয়েকদিন বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করায় কাজে অসুবিধা হচ্ছে। সময় মতো এসব প্রতিমা মণ্ডপ কমিটির কাছে হস্তান্তর করতে পারবো কিনা কে জানে।
হরিসভা রাধা গোবিন্দ মন্দিরের দুর্গা মণ্ডপের প্রতিমা কারিগর পরান পাল বলেন, ‘বাপ-দাদার ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য এ পেশার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছি। কিন্তু আমার সন্তানরা অন্য পেশায় চলে গেছে। বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় আমাদের আগের মতো পোষায় না। আমি এবার ১৭টি প্রতিমা বানানোর কাজ পেয়েছি।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে ঝালকাঠি মদনমোহন আখড়াবাড়ী মণ্ডপে প্রতিমা তৈরি করতে এসেছেন ভাষ্কর শ্রীবাস গাইন। তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় মাটির কাজ শেষ করেছি। এখন হাতে যা সময় আছে তাতে এ বছর নির্ধারিত সময়ের আগেই রং,পোশাক এবং অলঙ্কার পরানোর কাজ শেষ করে পূজা কমিটির কাছে প্রতিমা বুঝিয়ে দিতে পারবো।
কোটালীপাড়া থেকে আসা কারিগর সৈকত বিশ্বাস বলেন, ‘ঝালকাঠিতে কাজ করতে এসে আমার আর্থিক জোগান হচ্ছে। বছরের এ সময়টা প্রতিমা তৈরির কাজ করি।বাকি সময় সঙ্গীত চর্চা করি।
ঝালকাঠি জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তরুণ কর্মকার জানান, জেলায় এ বছর ১৭১ টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭৩টি,নলছিটি উপজেলায় ২১টি, রাজাপুর উপজেলায় ২২টি ও কাঁঠালিয়া উপজেলায় ৫৫টি রয়েছে।
তিনি বলেন, দূর থেকে আসা কারিগরদের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে পাহারার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়া বাজানোর পরই পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার মহাপঞ্চমী থেকে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী পর্যন্ত চলবে আনুষ্ঠানিকতা। এবার দেবী দুর্গা গজে অর্থাৎ হাতির পিঠে চেপে আসবে। আর কৈলাশে মহাদেবের কাছে ফিরে যাবেন নৌকায়।