Cinn:শ্রীলঙ্কায় যে যাত্রা শুরু হয়েছিল নতুন বাংলাদেশের, সবশেষ সেই যাত্রার গন্তব্য ছিল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। গুটি গুটি পায়ে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গনে পার করে ফেলেছে ৩৪ টি বছর। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্ম হয় ১৯৭১ সালে। তারও ১৫ বছর পর ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ ওয়ানডে ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশের নাম।
আজ থেকে ৩৪ বছর আগে এশিয়া কাপের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের যাত্রা। শ্রীলঙ্কার মোরাতুয়ায় গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নেতৃত্বাধীন দলের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। স্বাভাবিকভাবেই সে ম্যাচে ইমরান খান, ওয়াসিম আকরামদের পাকিস্তানের কাছে পাত্তাই পায়নি নবাগত বাংলাদেশ, হেরে যায় ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে।
সে ম্যাচে টস হারলেও, পাকিস্তান অধিনায়ক ইমরান খানের আমন্ত্রণে আগে ব্যাটিং করার সুযোগ পায় বাংলাদেশ দল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম মোকাবিলা করেন রকিবুল হাসান, প্রথম রানও আসে তার ব্যাট থেকেই। সেই ইনিংসে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেছিলেন চার নম্বরে নামা শহীদুর রহমান। এছাড়া রকিফুল আলম ও গোলাম ফারুক- উভয়েই ১৪ রান করে করলেও ৯৪ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।
জবাবে সহজ জয়ই দেখছিল পাকিস্তান। দুই ওপেনার মুদাসসার নাজার ও মহসিন খান উদ্বোধনী জুটিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন নির্বিঘ্নে। ঠিক তখনই সুইং বোলিং নিয়ে হাজির হন জাহাঙ্গীর শাহ বাদশাহ। মাত্র ১০ রানের ব্যবধানে ফিরিয়ে দেন মহসিন খান ও রমিজ রাজাকে। একইসঙ্গে দেশের ইতিহাসের প্রথম উইকেটশিকারীও বনে যান জাহাঙ্গীর শাহ বাদশাহ। তবে মুদাসসার ৪৭ রানের ইনিংস খেলে পাকিস্তানকে জিতিয়ে দেন ৭ উইকেটের ব্যবধানে।
একপেশে লড়াইয়ে হার দিয়ে শুরু করা বাংলাদেশ, প্রথম জয়ের জন্য খেলেছে ২৩টি ম্যাচ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখার পর ১২ বছরে খেলা প্রথম ২২ ম্যাচের সবকয়টিতে হারে বাংলাদেশ। অবশেষে ১৯৯৮ সালে ভারতের মাটিতে খেলা ত্রিদেশীয় সিরিজে কেনিয়াকে হারানোর মাধ্যমে শেষ হয় টাইগারদের জয়ের অপেক্ষা, শুরু হয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন এক অধ্যায়।
বাংলাদেশ ১৯৮৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরুর ১৩ বছর পর প্রথমাবারের মতো বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায়। ১৯৯৯ সালে নিজেদের প্রথম আসরে স্কটল্যান্ডকে হারানোর পর শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বক্রিকেটে তাক লাগিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ওই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স-ই ভূমিকা রাখে ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তিতে।
তিন ফরম্যাট মিলে এখনও পর্যন্ত ৫৯১টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যেখানে জয়ের চেয়ে হারের পাল্লাটাই ভারী। তবে গত কয়েকবছরের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পারফরম্যান্সের কল্যাণে গ্রাফটা এখন রয়েছে উর্ধ্বমূখীই। যার প্রমাণ মেলে র্যাংকিংয়েও। টানা ৯ নম্বর দল থেকে বেরিয়ে প্রায় চার বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের ৭ নম্বর দল। মাঝে একবার উঠে গিয়েছিল নিজেদের সেরা অবস্থান, ৬ নম্বরে।
অন্য দুই ফরম্যাটের তুলনায় একদিনের ক্রিকেটেই বেশি উজ্জ্বল টাইগাররা। এখনও পর্যন্ত ৩৭৬ ওয়ানডে খেলে জয় এসেছে ১২৮ ম্যাচে। এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে ১১৯ ম্যাচে ১৪ এবং টি-টোয়েন্টিতে রয়েছে ৯৬ ম্যাচে ৩২ জয়ের রেকর্ড। অর্থাৎ সামগ্রিক পরিসংখ্যানে নিজেদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে ৫৯১ ম্যাচ খেলে ১৭৪টি জিতেছে বাংলাদেশ, সঙ্গে ড্র রয়েছে ১৬টি টেস্ট ম্যাচে।