ভারতবর্ষের দক্ষিণতম প্রান্তের রাজ্য কর্ণাটক। পাহাড় আর সমুদ্র এ দুটি একই সঙ্গে দেখা যায় এখানে। ঢেউখেলানো আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে কর্ণাটকের অনেকাংশেই চলতে চলতে আপনি একদিকে পাবেন সমুদ্র, অন্যদিকে পাহাড়।
সেন্ট মেরিজ দ্বীপ। ভাস্কো দা গামা এখানেই প্রথম পা রেখেছিলেনসেন্ট মেরিজ দ্বীপ। ভাস্কো দা গামা এখানেই প্রথম পা রেখেছিলেন
এমনই এক জায়গা ম্যাঙ্গালোর—কান্নাড়া ও টুলু দুই ধরনের অধিবাসী সমন্বিত এলাকা। আছে প্রচুর গির্জা। বহু পুরোনো সেন্ট অ্যালোসিয়াস চ্যাপেল প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন। ম্যাঙ্গালোর শহরে পা দিলেই ১০-১৫ কিলোমিটার বাদে বাদে দেখা পাবেন আরব সাগরের ভার্জিন বিচগুলোর। পানাম্বুর, উল্লাল, সোমেশ্বর প্রতিটি নির্জন বিচের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে দেবে আপনাকে! এখানে পা দিয়ে শুনতে পেয়েছিলাম ৫০ কিলোমিটার দূরে মাল্পে বলে একটি বিচ আছে। শুধু তা-ই নয়, সেই নির্জন বিচ থেকে আধঘণ্টা মোটর বোট এবং তারপর ১০ মিনিট এমনি নৌকায় গেলেই আরব সাগরের মাঝখানে সেন্ট মেরিজ আইল্যান্ড।
জনশ্রুতি আছে, ভাস্কো দা গামা এখানেই প্রথম পা রেখেছিলেন। যদিও আমরা জানি, তিনি প্রথম নামেন কালিকট বন্দরে। কিন্তু সেন্ট মেরিজ তাঁর প্রথম পদার্পণের জায়গা। পর্তুগিজ এই নাবিক এখানে প্রথম নেমেছিলেন বলে দ্বীপটির নাম সেন্ট মেরির অনুসরণে রাখা হয়েছে। দ্বীপটিকে কোকোনাট আইল্যান্ডও বলে।
চারটি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে সেন্ট মেরিজ গঠিত। কোকোনাট আইল্যান্ড, দরিয়া বাহাদুরগড় আইল্যান্ড, দক্ষিণ আইল্যান্ড যার মধ্যে অন্যতম। খুব বড় এলাকা নয়। দ্বীপগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে সংযুক্ত। বলা হয়, সেন্ট মেরিজের সঙ্গে মাদাগাস্কারের একটা যোগ আছে। তত্ত্ব বলে, কয়েক কোটি বছর আগে মাদাগাস্কার ভারতের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ভলকানিক ইরাপশনের জন্য ভারত থেকে তা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে গেল, ভারতবর্ষের মহারাষ্ট্রের লোনারে এ রকমই ভলকানিক ইরাপশনে একটি হ্রদ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। যা হোক, সেন্ট মেরিজের মূল বৈশিষ্ট্য কিন্তু এই ব্যাসাল্ট রক ফরমেশন। ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে কর্ণাটকের এক আশ্চর্য সম্পদ। শুধু ব্যাসাল্ট রক ফরমেশনের অজস্র ছবি তুলতেই এখানে যাওয়া যেতে পারে।
শুধু ব্যাসাল্ট রক ফরমেশনের অজস্র ছবি তুলতেই যাওয়া যেতে পারে সেন্ট মেরিজ দ্বীপেশুধু ব্যাসাল্ট রক ফরমেশনের অজস্র ছবি তুলতেই যাওয়া যেতে পারে সেন্ট মেরিজ দ্বীপে
মাল্পে বন্দর থেকে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মোটর বোট ছাড়ে সেন্ট মেরিজ আইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য। আমরা ৯টার সময় লাইন দিয়ে বোটের টিকিট কেটে উঠে পড়লাম। ভর্তি হওয়ার পর বোট ছাড়ল, সেটাই নিয়ম। যত বোট এগোতে লাগল, খারি থেকে সমুদ্রে গিয়ে পড়ল, নীল আরব সাগরের জলে ছোট ছোট ঢেউ কাটতে কাটতে এগোতে থাকলাম আমরা। একজন বোটম্যান বলে উঠলেন, দূরে উঁচু টিলার মতো নারকেলগাছওয়ালা যা দেখতে পাচ্ছেন, সেটাই সেন্ট মেরিজ!