শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
দুপচাঁচিয়ায় প্রাণিসম্পদ সেবা ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত মধুপুর সহকারী পুলিশ সুপারের আবারও বিশাল অর্জন সরিষাবাড়ীতে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে নওগাঁর সাপাহারে আদিবাসী মঙ্গল টুডু নামে এক কৃষকের আম বাগানের গাছ কর্তনের অভিযোগ দুপচাঁচিয়ায় থানা পুলিশের অভিযানে ১০ জন গ্রেপ্তার নওগাঁয় প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়াই নবম শ্রেণীর ছাত্রীকে তুলেনিয়ে ধর্ষণ বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় মুজিবনগর দিবস উদযাপিত নাট্যকার অমৃতলাল বসুর জন্মদিন আজ : নওগাঁ জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় মোহাধুমধামে চৈত্র মাসে শুক্লপক্ষে বাসন্তী পূজা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত নওগাঁ ঐতিহ্যবাহী ৫ শ বছরের পুরনো রঘুনাথ মন্দিরে রামনবমী জন্ম উৎসব উপলক্ষে ভক্তদের ঢল নেমেছে কালাইয়ে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪ অনুষ্ঠিত বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন কালাইয়ে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২৪ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নওগাঁর মহাদেবপুরে বিএনপি ও জামাতনেতা সহ ২১ জনের মনোনয় পত্র দাখিল বগুড়ায় ২২ কেজি গাঁজাসহ ২ জন গ্রেফতার তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ কালাইয়ের জনগণ দুপচাঁচিয়ায় মাদক সেবনের সময় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ৫ শোক সংবাদ! শোক সংবাদ!! নওগাঁর আত্রাই উপজেলা বিএনপির নয় নেতাকর্মীকে কারাগারে প্রেরণ নওগাঁর ইয়াদ আলীর মোড়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু

সরেনি কেমিকেলের গুদাম ভয়াবহ আগুনের ঝুঁকিতে পুরান ঢাকা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৩৬৭ বার পঠিত

বার বার ভয়াবহ আগুন লাগার পরও পুরান ঢাকায় বন্ধ হয়নি রাসয়নিক-দাহ্য পদার্থের ব্যবসা। সরানো হয়নি কেমিকেল গুদাম। অবৈধ প্লাস্টিক কারখানাগুলো এখনো বহাল তবিয়তে। ফায়ার সার্ভিসের বিধিনিষেধও উপেক্ষিত। আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব কারখানার মালিকরা কোনো নিয়ম মানছেন না। বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে এখনো ঝুঁকিতেই রয়েছেন পুরান ঢাকাবাসী।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে চকবাজারের কেবি রুদ্ররোডের ‘নোয়াখালী ভবনে’ প্লাস্টিক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর গতকাল শুক্রবার সকালে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ১৫টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, পুরনো ঢাকায় প্রায় ২৫ হাজার রাসায়নিক এবং প্লাস্টিকের কারখানা ও গুদাম আছে। রাজউকের তথ্যমতে, রাজধানীতে ভবন রয়েছে ২২ লাখের বেশি। এর মধ্যে ৮৪ শতাংশ একতলা। তিন লাখ ৫২ হাজার ভবন একতলার বেশি। ১০ তলার বেশি ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা রয়েছে মর্মে ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নেয়ার বিধান রয়েছে ২০০৮ এবং ১৯৯৬ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালায়।
গত বৃহস্পতিবার রাতে পুড়ে যাওয়া পুরান ঢাকার উর্দু রোডের চারতলা নোয়াখালী ভবনটিতে এর আগেও তিনবার আগুন লাগে। পরিত্যক্ত হওয়া একটি ভবনে কীভাবে চলত প্লাস্টিক কারখানা সেই প্রশ্নের উত্তর অধরাই থেকে যায়। এই কারখানা ঝুঁকি নিয়ে যারা চালাত, তারা দিলেন বরাবরের মতো অজুহাত। নোয়াখালী ভবনের বাইরে থেকে আবাসিক মনে হলেও চারতলা এ ভবনে রয়েছে ৩০টি প্লাস্টিকের কারখানা ও ৭০টি গোডাউন। যদিও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে আগেই। স্থানীয়রা জানান, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এভাবেই দাহ্য পদার্থের কারখানা ও গুদাম রয়েছে এই ভবনে। চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর পুরান ঢাকাজুড়ে অভিযান হলেও নজরদারির বাইরেই ছিল নোয়াখালী ভবন। যদিও এখানে চারবার লেগেছে আগুন। স্থানীয় আবু বকর জানান, এখানে প্লাস্টিকের জিনিস থাকে, বিভিন্ন কেমিকেল থাকে। যে কোনো সময় এই কারখানাগুলো থেকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং এর ফলে আশপাশের বাসিন্দারা দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে। আরেক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমাদের বাসা এই কারখানার পাশে হওয়ার কারণে আমাদের সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয়। এই কারখানাগুলোতে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি সরকারের কাছে আবেদন করি, এই কারখানা যেন উঠায় দেওয়া হয়। কারখানা সরিয়ে নেওয়ার কোনো নির্দেশনা না পাওয়ার অজুহাত দিলেন কারখানা মালিকরা। অন্য এক কারখানা মালিক বলেন, কারখানা সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ফায়ার সার্ভিস বলছে, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এভাবে কারখানা চালিয়ে আগুনের ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে পুরো এলাকাকে। ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের ঢাকা সদর জোন-১-এর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্লাস্টিক হচ্ছে সহজ দাহ্য বস্তু। ভবনটিতে এখনো অনেক প্লাস্টিকের স্তূপ রয়েছে। বর্তমানে ভবনটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে ভবনটিতে আগুন কীভাবে লেগেছে।
২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনের অবৈধ কেমিক্যাল গোডাউন থেকে আগুন লাগে। ওই আগুনে চারতলা ওয়াহেদ ম্যানশনসহ ৫টি ভবন পুরোপুরি ভস্মিভূত হয়। আর আগুনে ৭১ জন নিহত এবং আহত হন অনেকে। ২০১০ সালের ৩ জুন ঘটে নিমতলী ট্রাজেডি। ভয়াবহ আগুনে ঝরে যায় ১২৪ টি প্রাণ। রাসায়নিকের গুদামে রক্ষিত দাহ্য পদার্থের কারণেই পুরান ঢাকার নবাব কাটরার নিমতলীতে ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে তদন্তে উল্লেখ করা হয়। নীমতলী ট্রাজেডির পর টাস্কফোর্স গঠন, অঙ্গিকার ও পরিকল্পনা নেওয়া হয়। রাজধানী থেকে রাসায়নিকের গুদাম-কারখানা সরিয়ে নিতে হয় দুটি কমিটি। সেই কমিটি কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে জায়গা ঠিক করার সুপারিশসহ উচ্চ মাত্রার বিপজ্জনক ৫ শতাধিক রাসায়নিকের তালিকা করে প্রতিবেদন দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ে। বাস্তবায়ন হয়নি তাও। চুরিহাট্টার দুর্ঘটনার পরও এলাকাবাসীর দাবির মুখে সরকার রাসায়নিক গুদাম এবং কারখানাগুলো সরিয়ে নেয়ার অভিযান শুরু করলেও বাস্তবে দেখা যায় দাহ্য পদার্থের অনেক গুদাম এবং কারখানা এখনও চালু রয়েছে।
পুরনো ঢাকার এক প্লাস্টিক ব্যবসায়ী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের তালিকাভুক্ত দাহ্য রাসায়নিকগুলো দ্রুত সরিয়ে না নিলে যেকোনো সময় আরও ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি বলেন, এই ভবনটায় একটা বডি স্প্রের গোডাউন ছিল। যেটা খুবই দাহ্য পদার্থ। উল্টাপাশেই ছিল আরেকটা কেমিক্যালের গোডাউন। পরে অভিযান হয়েছে, অনেক কারখানা সরেও গেছে, কিন্তু ওই যে গোডাউনগুলো স্প্রে/বডি স্প্রে সেগুলো বিভিন্ন ভবনের ভেতরে ভেতরে রয়ে গেছে। এগুলোই তো ঝুঁকি তৈরি করছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, পুরনো ঢাকায় প্রায় ২৫ হাজার রাসায়নিক এবং প্লাস্টিকের কারখানা ও গুদাম আছে। এগুলো সরাতে আরও চার থেকে ১০ মাসের মতো সময় লাগবে বলে জানা গেছে। স্থানীয় এলাকাবাসী দৃশ্যত কোন পরিবর্তন হয়নি।
সরকারি তথ্যে জানা যায়, অন্যান্য রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরিয়ে নিতে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় ৩১০ একর জায়গাজুড়ে একটি দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা রয়েছে। তবে এসব কেমিক্যাল কারখানা ও গুদামের পাশাপাশি পুরানো ঢাকাকে আরও দুটি কারণে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। একটি হল দুর্ঘটনার পরবর্তী উদ্ধারকাজ চালানোর মতো প্রশস্ত রাস্তার অভাব এবং যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর দেশে ১৬ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সরকারি এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিলো ১৯ হাজার ৬৪২টি। ২২ দশমিক পাঁচ শতাংশ বেড়ে ২০১৯ সালে সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ২৪ হাজার ৭৪টি। গত আট বছরে দেশে ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছে দুই সহস্রাধিক মানুষ।
অগ্নিকাণ্ডের জন্য বৈদ্যুতিক ত্রুটিকে শতকরা ৭০ ভাগ দায়ী করা হয়েছে। এসবের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটছে রাজধানী ঢাকায়। অসচেতনতা, আবাসন নীতিমালা না মানা, অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকা, গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দুর্নীতির কারণেই রাজধানীতে আগুনের ভয়াবহতা বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফায়ার সার্ভিসের জরিপ মতে, রাজধানীর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ভবনে অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা নেই। অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ, কম ঝুঁকিপূর্ণ- এ তিন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে ভবন মালিকদের অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেয়ার জোর তাগিদও দেয়া হয়েছিল ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে। তবে সে তাগিদ উপেক্ষা করে আসছে ভবন মালিকরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Developed By cinn24.com
themesbazar24752150