রুহুল আমিন গাজী, সাদাত হোসাইন
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি ও দৈনিক সাংগ্রামের চীফ রিপোর্টার রুহুল আমিন গাজী প্রায় সাত মাস ধরে কারাবন্দী রয়েছেন। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সংগঠন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও বিএফইউজের বার বার নির্বাচিত এই নেতার মুক্তি দাবি করেছেন তার পরিবার এবং সাংবাদিক নেতারা। আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগেই সংগঠনের পক্ষ থেকে তার মুক্তি দাবি করা হয়েছে। একইসঙ্গে একই মামলায় কারাবন্দি পত্রিকাটির বার্তা সম্পাদক সাদাত হোসাইনেরও মুক্তি দাবি করেছে পরিবার।
সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীকে গত বছর ২১ অক্টোবর তার কর্মস্থল দৈনিক সংগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে রাজধানীর হাতিরঝিল থানা পুলিশ। এরপর থেকেই কারাগারে রয়েছেন তিনি।
বতর্মানে রুহুল আমিন গাজীকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে -১ এ রাখা হয়েছে। তার আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের আ্যাডভোকেট মোঃ ইউসুফ আলী জানান, ২০১৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আফজাল হোসেন রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় একটি এফআইআর করেন। সেখানে দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ, চীফ রিপোর্টার রুহুল আমিন গাজী ও বার্তা সম্পাদক সাদাত হোসাইনকে আসামী করা হয়। পরবর্তীতে রুহুল আমিন গাজী ও সাদাত হোসাইন গত ১৫/০১/২০২০ তারিখ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন থেকে আগাম জামিন নেয়ার পর নিম্ম আদালত থেকে স্থায়ী জামিন পান। এরপর থেকেই তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই ব্যক্তি একই তারিখে উক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সেই সাধারণ ডায়েরি (জিডি) তদন্ত শেষে গত ২২/০৯/২০২০ হাতিরঝিল থানার তদন্ত কর্মকর্তা একটি নন এফআইআর মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার পরোয়ানা নিয়ে গত ২১/১০/২০তারিখ রুহুল আমিন গাজীকে তার কর্মস্থল দৈনিক সংগ্রামের কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়।
আ্যাডভোকেট মোঃ ইউসুফ আলী বলেন, হাইকোর্ট ডিভিশন গত ৪/০১/২০২১তারিখ শুনানীর পর দেখতে পান যে একই ঘটনায় একই ব্যক্তি একই দিনে একটি জি আর মামলা ও একটি জিডি করেন, যা পরে নন এফ আই আর হিসাবে গন্য হয়। পরে আদালত রুহুল আমিন গাজীর জামিন মঞ্জুর করেন। এই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে সরকার আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে স্টে-পিটিশন দায়ের করলে গত ০৭/০১/২০২১ তা স্থগিত করেন। পরবর্তীতে গত ১৮/০৩/২০২১ আপিল বিভাগের ফুলবেঞ্চ শুনানীর পর আপীল বিভাগ, হাইকোর্ট ডিভিশনকে অতিসত্তর রুল শুনানীর জন্য দির্দেশ প্রদান করেন। বর্তমানে করোনার কারণে আদালত বন্দ থাকাশ ভার্চুয়াল আদালতে এ মামলার রুল শুনানি হচ্ছে না। এ কারণে তার জামিন আটকে আছে।
এই সাংবাদিক নেতা কারাগারে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আছেন জানিয়ে তার স্ত্রী লুৎফুন নাহার বলেন, তিনি তো রাজনীতি করেন না। একজন সাংবাদিক নেতাকে এতদিন কারারুদ্ধ করে না রেখে তাকে জামিনে মুক্তি পাওয়া তার অধিকার ছিল। তিনি বলেন, রুহুল আমিন গাজীর একটি কিডনি গত বছরের জানুয়ারি মাসে অপারেশন করে ফেলে দিতে হয়েছে। এখন তার মাত্র একটি কিডনি রয়েছে। অপারেশনের সময় চিকিৎসক বলেছিলেন-যেহেতু একটি কিডনি তাই এটিতে যেনো চাপ কম পড়ে। কিন্তু কারাগারে থাকায় এখন তার একটি কিডনিতে চাপ সহ্য করতে হচ্ছে। এ ছাড়া তিনি পুরনো ডায়াবেটিক রোগী। তার তিন মাস অন্তর ডাক্তারি চেকআপ করতে হয়। কিন্তু কারাগারে থাকার কারণে প্রায় সাত মাস ধরে নিয়মিত ডাক্তার দেখানো ও ওষুধ ঠিক মতো পাচ্ছেন না। তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। করোনার কারণে পরিবারের সাথে তার দেখাও করতে দিচ্ছে না। এ অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা চিন্তিত। তিনি আরও বলেন, এছাড়াও তার দাঁতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। দাঁতের চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, দ্রুত রুহুল আমিন গাজীকে হাসপাতালে ভর্তি করে উন্নত চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। ঈদের আগেই রুহুল আমিন গাজীর মুক্তি দাবি করেন লুৎফুন নাহার।
একই মামলায় আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমাপর্ন করে জামিন চাইতে গিয়ে গ্রেফতার হন দৈনিক সংগ্রামের বার্তা সম্পাদক সাদাত হোসাইন। তিনি বর্তমানে কাশিমপুর কারাগার-২ এ আছেন। সাদাত হোসেনের ছেলে মো: রাশেদুল হাসান (আমিন) বলেন, আমার বাবার বয়স এখন ৭০ বছর। সাংবাদিকতার বাইরে তিনি তার বিচরণ নেই। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গত বছর ২৬ নভেম্বর আদালতে আত্মসমার্পণ করে জামিন আবেদন করেন। কিন্তু আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। রাশেদুল হাসান জানান, তার বাবা সাড়ে ৫ মাস ধরে কারাগারে। সাড়ে চারমাস কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। একমাস আগে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এ পাঠানো হয়েছে। রাশেদুল হাসান আরও বলেন, তার বাবা কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ঈদের আগে তার বাবার মুক্তি দাবি করেন তিনি।
এদিকে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি রুহুল আমীন গাজী ও দৈনিক সংগ্রামের বার্তা সম্পাদক শাদাত হোসাইনসহ সকল কারাবন্দী সাংবাদিকদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে’র সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমীন রোকন এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে’র সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম।
গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রবীন সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী প্রায় সাত মাস ধরে কারাবন্দী রয়েছেন। হাইকোর্ট তার জামিন মঞ্জুর করলেও পরে চেম্বার আদালতে তা স্থগিত হয়ে যায়। বর্তমানে করোনার কারণে জামিন শুনানি হচ্ছে না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ও একটি কিডনি না থাকায় কারাগারে সঙ্কটে পড়েছেন প্রবীণ এ সাংবাদিক নেতা। কারাগারে নিয়মিত ডাক্তারি চেকআপ না করাতে পারায় তিনি স্বাস্থ্য ও জীবনের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এজন্য আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগেই সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী ও সাদা’ত হোসাইনসহ সকল কারাবন্দী সাংবাদিকদের মুক্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, রুহুল আমিন গাজী দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু তার সাথে যে আচরণ করা হচ্ছে তা অগ্রহণযোগ্য, অমানবিক ও মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। জামিন পাওয়া তার নাগরিক অধিকার।