হারারে টেস্টে জয়ের পথে বাংলাদেশ। সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরিতে জিম্বাবুয়েকে ৪৭৭ রানের বিশাল লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ। জবাবে জিম্বাবুয়ে গতকাল দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৪০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৪০ রান করে চতুর্থ দিন পার করেছে। এখনো বাংলাদেশ থেকে-৩৩৭ রানে পিছিয়ে আছে জিম্বাবুয়ে। টেস্ট বাচাতে হলে আজ শেষ দিনে ৭ উইকেটে দিন পার করতে হবে জিম্বাবুয়েকে। কাজটি কঠিন দলটির জন্য। ফলে টেস্টে জয়ের পথে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের দেওয়া ৪৭৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। পেসার তাসকিন আহমেদ নিজের প্রথম ওভারেই তুলে নেন মিল্টন শুম্বার উইকেট। ডানহাতি পেসারের বলে তৃতীয় স্লিপে ইয়াসিরের হাতে ক্যাচ দেন শুম্বা। ১১ রানে শেষ তার লড়াই। এর পর অবশ্য আবারও প্রথম ইনিংসের মতো ধৈর্য পরীক্ষা নিতে শুরু করেছিলেন ব্রেন্ডন টেলর। একপ্রান্তে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে রানের চাকা সচল রেখেছিলেন। সেঞ্চুরির কাছে থাকলেও ৮ রান দূরে থাকতে মিরাজের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ভারপ্রাপ্ত এই অধিনায়ক। তাতে স্বস্তি ফেরে বাংলাদেশ শিবিরে। এর পর ওপেনার কাইতানো ধীরে চলো নীতিতে থাকলেও টেলর থাকেন আগ্রাসী ভঙ্গিমায়। এই সময়ে আবার উইকেট তুলে নেওয়ার সুযোগও তৈরি হয়েছিল। ২১তম ওভারে মেহেদী মিরাজের বলে টপ এজে ক্যাচ উঠেছিল কাইতানোর। কিন্তু শর্ট ফাইনে থাকা ইবাদত সহজ সেই ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছেন! টেলর ১৬ চারে ৭৩ বলে ৯২ রানে ফিরলেও কাইতানো জমে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সঙ্গী হন ডিয়োন মায়ার্স। কাইতানোকে ৭ রানে ফিরান সাকিব । ফলে ১৩২ রান তুলতে ৩ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে।
এরআগে, সাদমান এবং শান্তর সেঞ্চুরিতে হারারে টেস্টে বিশাল লিডের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ১৯২ রানের লিড পাওয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেটে ২৮৪ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশের লিড দাঁড়িয়েছে ৪৭৬। গতকাল দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেটে ২৮৪ রানে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। সেঞ্চুরি পেয়েছেন বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটার সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্ত। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছেন সাদমান। ১৮০ বলে ৮ বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরিতে ইনিংসটি সাজান তিনি। সাদমানের পরপরই নাজমুল হোসেন শান্ত সেঞ্চুরি তুলে নেন। ১০৯ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিনি। এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। শ্রীলঙ্কায় ১৬৩ রান করেছিলেন তিনি। দুই সেঞ্চুরিতে আগের ১৯২ রানের লিডের সঙ্গে যোগ করেছেন আরও ২৮৪ রান। সবে মিলিয়ে এই ম্যাচ জিততে রীতিমতো অসাধ্য সাধন করতে হবে জিম্বাবুয়েকে। ১৯২ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে অধিনায়ক মুমিনুল হকের দল। ম্যাচের তৃতীয় দিন কোনো উইকেট না হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ৪৫ রান তোলে বাংলাদেশ দল। গতকাল চতুর্থ দিনে জিম্বাবুয়ে বোলারদের উপর দিয়ে রীতিমতো তান্ডব চালান সাদমান ইসলাম, নাজমুল হোসেন শান্তরা। মধ্যহ্নভোজের বিরতিতে যাওয়ার আগে সাইফের (৪৩) উইকেট হারিয়ে আরও ১২৪ রান যোগ করে বাংলাদেশ। এতে ১ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রানের সংগ্রহ পায়। বিরতি শেষে দ্বিতীয় সেশনে খেলা শুরু হলে আরও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকেন শান্ত। সাদমানও কম যাননি। ২৮৪ রানে ইনিংস ঘোষণার আগে নিজের অভিষেক শতক তুলে নেন সাদমান। ইনিংসের ৬২তম ওভাতে মিল্টন শুম্বার করা চতুর্থ বলটি মিড উইকেটে পাঠিয়ে ২ রান নিয়ে শতকের আনন্দে ভাসেন তিনি। একই পথে হেঁটে এই ফরম্যাটে নিজের দ্বিতীয় শতকের দেখা পান শান্ত। পরে শান্তর অপরাজিত ১১৭ ও সাদমানের অপরাজিত ১১৫ রানের কল্যাণে ২৮৪ রানে তুলে ইনিংস ঘোষণা করে সফরকারীরা। এর আগের মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সেঞ্চুরি এবং মুমিনুল হক, লিটন দাস ও তাসকিন আহমেদের হাফ সেঞ্চুরিতে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৪৬৮ রান তোলে বাংলাদেশ। মেহেদি হাসান মিরাজের পাঁচ উইকেট ও সাকিব আল হাসানের চার উইকেটে পরে জিম্বাবুয়ে অলআউট হয়েছে ২৭৬ রানে। এতে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৪৭৭ রানের বিশাল লক্ষ্য দাঁড়ায় জিম্বাবুয়ের সামনে। এর আগে কখনোই ২০০ রানের লক্ষ্যও তাড়া করে জিততে পারেনি জিম্বাবুয়ে। সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটি ১৯৯৮ সালে। পাকিস্তানের বিপক্ষে পেশওয়ারে সেবার অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল, গ্রান্ট ফ্লাওয়াররা ১৬২ রান তাড়া করে ৭ উইকেটে জিতেছিলেন।