দীর্ঘ তিন দশক আগে হারিয়ে যাওয়া মাসুদকে ফিরে পেয়েছে তার পরিবার। শনিবার (২৪ এপ্রিল) আরজে কিবরিয়ার অনুষ্ঠান ‘আপন ঠিকানা’র মাধ্যমে পরিবার তাকে খুঁজে পায়।
মাসুদ চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার দেওয়ানজীকান্দি গ্রামের বাচ্চু মোল্লার বড় ছেলে। ১৯৯০ কিংবা ১৯৯১ সালের দিকে তার চাচা খোরশেদ মোল্লার সঙ্গে ঢাকা মুগদা পাড়ায় বেড়াতে আসেন। ঢাকায় আসার একদিন পর চাচাতো ভাই-বোনদের সঙ্গে রাস্তায় খেলতে খেলতে হারিয়ে যান মাসুদ। ৫/৬ বছরের মাসুদ তখন অনেক খুঁজেও নিজের চাচার বাসা আর চিনতে পারেনি। পরিবারের কতো আহাজারি! তখনকার সময়ের সব পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ও ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করেও খোঁজ মিলেনি মাসুদের।
দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে পুত্র শোকে ভোগেন তার বাবা-মা ও পরিবারের সবাই। হারানো সন্তানকে আবার খুঁজে পাবেন কে জানতো। কিছু দিন আগে আরজে কিবরিয়ার ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যালেন থেকে প্রকাশিত ‘আপন ঠিকনা’ নামক একটি অনুষ্ঠানে নিজের আপন ঠিকানা খুঁজতে আসেন মাসুদ। সেখানে এসে নিজের হারিয়ে যাওয়া অতীতের স্মৃতি যতটুকু মনেছিল, তা তুলে ধরেন।
সেই ছোট্ট মাসুদ কিছু স্মৃতি মনে রাখতে পারলেও মনে রাখতে পারেনি নিজের জন্মস্থান চাঁদপুরের কথা। হারিয়ে যাওয়ার পর তিনি এতটুকুই বলতে পেরেছিলেন যে, তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া এবং তিনি চাচার সঙ্গে লঞ্চে করে ঢাকা এসেছিলেন৷ এরপর হারিয়ে যায় পরিবার থেকে ২৯টি বছর।
আরজে কিবরিয়ার অনুষ্ঠান ‘আপন ঠিকানা’ ১৬ নম্বর এপিসোড মাসুদের হারানোর কথা বলে। পরে তা জানতে পারে মাসুদের পরিবার। আরও জানা যায়, মাসুদ যেই মা-বাবার কাছে এই দীর্ঘ সময় পর্যন্ত থেকেছেন, যাদের কাছে বড় হয়েছেন, তার সেই মা-বাবা কেউই বেঁচে নেই।
অনুষ্ঠানটি দেখার পর নানা মাধ্যমে মাসুদের পরিবার যোগাযোগ করে আরজে কিবরিয়া এবং মাসুদের সঙ্গে। অবশেষে স্টুডিওতে মাসুদের সঙ্গে তার পরিবারের মিল ঘটিয়ে দেন কিবরিয়া। যদিও অনেক প্রমাণ বা তথ্যাদি হাতে পেয়েই তিনি গত শনিবার (২৪ এপ্রিল) পরিবারের সঙ্গে মাসুদের পরিচয় করিয়ে দেন ও বুঝিয়ে দেন হারিয়ে যাওয়া ঠিকানা৷
বাবা বাচ্চু মোল্লা বলেন, ‘আমার কলিজার টুকরারে ফিরা পাইছি, আল্লার কাছে শুকরিয়া। কিবরিয়া বাবাকে ধন্যবাদ। তোমার ঋণ এই জীবনে শোধ করতে পারবো না।’
দীর্ঘ সময় পর নিজের ছেলেকে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মাসুদের মা-বাবা৷ পরিবারেও বইছে ফিরে পাওয়ার আনন্দ।