বিড়ালের জন্য ভালোবাসা
কবির আহম্মেদ,খুলনা প্রতিনিধি:
আয়েশি ভঙ্গিতে পরম তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে বিড়ালগুলো। বিড়ালগুলোর মুখে খাবার তুলে দিতে পারাতে ভীষণ তৃপ্ত ফরিদা হাসনাও। খুলনা নগরের বয়রা বাজার মোড় এলাকায় এই দৃশ্যে এখন রোজকার। দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত আশপাশের মানুষও।
বিড়ালের জন্য প্রতিদিনই সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে নানা পদের খাবার নিয়ে হাজির হন ফরিদা। তাঁর জন্য যেন অপেক্ষায় থাকে আশপাশে থাকা বিড়ালগুলোও। এরপর পরম মমতায় তাদের মুখে খাবার তুলে দেন ফরিদা।
পঞ্চাশোর্ধ্ব এই নারীর বিড়ালের প্রতি ভালোবাসাটা ছোটবেলা থেকে। খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে বাংলা বিভাগে স্নাতক এবং সরকারি ব্রজলাল কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে তিনি পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকেই বেছে নিয়েছিলেন। নানা কারণে চাকরির পাট চুকিয়ে এখন পুরোদস্তুর গৃহিণী। থাকেন মুজগুন্নী আবাসিক এলাকার ২ নম্বর রোডের একটি ভাড়া বাড়িতে।
ফরিদা সকালে রান্না করে বিড়ালদের জন্য নিজে খাবার নিয়ে আসেন। ভাতের পাশাপাশি খাবারের মেন্যুতে থাকে কখনো মাছ, কখনো মাংস, আবার কখনো মজাদার অন্যান্য খাবার। সব মিলিয়ে বর্তমানে আটটি বিড়ালকে প্রতিদিন খাওয়াচ্ছেন ফরিদা। তিনি ও তাঁর মেয়ে ফারিহা বিড়ালগুলোকে কালুয়া, অজানা, পুসি, সাদা, মিনু, টুনু—এ রকম নানা নামে ডাকেন।
যেসব বিড়ালকে ফরিদা খাওয়ান, সেগুলোর মধ্যে তাঁর নিজের একটি বিড়ালও আছে। একদিন বাসা থেকে বিড়ালটি বের হয়ে চলে যায়। পরে তাকে বয়রা বন বিভাগের একটি ভবনের কাছে পাওয়া যায়। তবে বাড়ির মালিকের অপছন্দের কারণে বিড়ালটিকে বাসায় রাখতে পারেননি। এর পর থেকে সেখানেই নিয়মিত খাবার দিতেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিড়ালের সংখ্যা বেড়েছে।
ফরিদা হাসনা বলেন, ‘আমার দুই সন্তান। ছেলে যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করে আর মেয়েটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমার সন্তানদের মতো করেই বিড়ালগুলোকে ভালোবাসি। ছেলেও বাসায় বিড়াল পুষত। মেয়েটাও বিড়ালদের এই খাওয়ানোর কাজে সহায়তা করে। আমরা যে বিড়ালগুলোকে খাওয়াই, সেগুলোর কয়েকটা বন বিভাগের একটি প্রকল্প ভবনের সিঁড়ির আশপাশে থাকে। আবার কয়েকটা বিভিন্ন চায়ের দোকানে থাকে। ওদের নিজেদের মধ্যেও একটা ভাব-ভালোবাসা আছে।’
ফরিদা আরো জানালেন, সব বিড়ালেরই খাবার দরকার, যত্ন আর ভালোবাসা দরকার। তাঁর বিড়ালকে কেন্দ্র করে সবকটি বিড়াল খেতে পারছে। এটা দেখে তাঁর খুব ভালো লাগে। ‘ওদের জন্য মায়া জন্মে গেছে। ওরাও আমাদের চিনতে পারে, বুঝতে পারে ভালোবাসলে, ভালোবাসা তো ফেরত পাওয়াই যায়’, বললেন ফরিদা।
স্থানীয় খুলনা পাবলিক কলেজের চারুকলার সহকারী অধ্যাপক পলাশ উদ্দীন খলিফা বলেন, ছয়-সাত মাস ধরে তিনি দেখছেন, ফরিদা বিড়ালগুলোকে খাওয়াচ্ছেন। সন্ধ্যার দিকে তাঁর মেয়ে বিড়ালগুলোকে খাওয়ায়। দেখে খুব ভালো লাগে। প্রাণীর প্রতি তাঁদের যে এই ভালোবাসার অনুভব, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।