মোঃ সোলায়মান হাওলাদার
ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
বরগুনার খাকদোন নদীতে নৌকা বেয়ে বৃদ্ধা মা ও তিন মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন লিলি আক্তার(৩৫)নামে এক নারী। তিনি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া গ্রামের মৃত ফটিক উদ্দিনের মেয়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,লিলির বয়স যখন ১০ তখন বাবার কাছ থেকে নৌকা চালানো শেখেন। হয়ে যান মাঝি। পরে ২০০৭ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরে লিলির বাবা ফটিক উদ্দিন মারা যান। লিলির একমাত্র ভাই আলাদা থাকায় সংসারের দায়ভার পড়ে লিলির কাঁধে। এরপর থেকে পুরোদস্তুর মাঝি হিসেবে বাবার নৌকা নিয়ে খাকদোন নদীতে নেমে পড়েন লিলি। জনপ্রতি ৫ টাকা ভাড়ায় দিনভর ঢলুয়া থেকে ফুলতলায় যাত্রী পারাপার হয় লিলির খেয়া নৌকায়। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেয়া চালান লিলি। দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা উপার্জন হয় তার। থাকার মতো ঘর না থাকায় এই খাকদোন নদীর পাড়েই ঝুপড়ি ঘর তুলে মা ও মেয়েদের নিয়ে বাস করছেন তিনি।
জানা গেছে,প্রথমে চাচাতো ভাই জাকিরের সঙ্গে বিয়ে হয় লিলির। এর ৮ বছর পর জাকির তাকে তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেন। এর কিছু দিন পর বরগুনা সদরের ঢলুয়া গ্রামের নাসিরের সঙ্গে বিয়ে হয় লিলির। এই সংসারে তার তিন মেয়ের জন্ম হয়। নাসির অন্যের নৌকায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।
লিলি আক্তার বলেন,বাবার কাছে আমার নৌকা চালানোর হাতেখড়ি। বাবা মারা যাওয়ার পর আমিই মাঝি হয়ে যাত্রী পারাপার করতে থাকি। সারাদিন নৌকা চালিয়ে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। দিনে ৩০০-৪০০ টাকা পাই। এ দিয়ে সংসার চালাব নাকি অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা করাব। দিনে ১০-১১ ঘণ্টা নৌকা বাইতে বাইতে হাতে ফোসকা পড়ে গেছে। এই হাতে এখন আর অন্য কোনো কাজ করতে পারি না।
তিনি আরও বলেন,নৌকায় যদি একটা ইঞ্জিন লাগানো যেত তাহলে আর এতো কষ্ট হতো না আমার। সরকারের কাছে আমি একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা চাই। আর থাকার জন্য একটা ঘর চাই।
এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন,নারীর নৌকা চালানোর বিষয়টি নজিরবিহীন। আমরা ওই নারী মাঝিকে সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাব।