প্রচলিত সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালায় সরকারি কর্মচারীদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আছে। এমনকি আইনে বলা আছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ত্রী বা স্বামী রাজনীতিতে জড়িত থাকলে তা সরকারকে জানাতে হবে। কিন্তু এই বিধান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেরাই সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। তারা নিজের এলাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন, প্রভাব বিস্তার করছেন।
অনুসন্ধানে অর্ধডজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সক্রিয় রাজনীতির তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তবে চসিকের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে আলাপকালে জানা গেছে, চসিকের রাজনৈতিক চাকুরিজীবীর সংখ্যা আরো অনেক বেশি। চসিকের রাজস্ব বিভাগের সার্কেল-৬ এর উপকর কর্মকর্তা মনজুর উদ্দিন চৌধুরী। তার ফেসুবক আইডির ব্যক্তিগত পরিচয়ে লেখা আছে তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। বিএনপি’র নানা কর্মসুচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তিনি। এমনকি গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃবৃন্দের ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার লিফলেট দেখা গেছে। কথা বলার জন্য মনজুর উদ্দিন চৌধুরীর মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব সার্কেল ৭ এর কর কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মৎস্যজীবী লীগের যুগ্ম আহবায়ক। তার ফেসবুক আইডিতেই তিনি তার দলীয় পদবির কথা লিখেছেন। এছাড়া কার্যকরী সভাপতি বিজয়-৭১ সহ আরো দুইটি সংগঠনের দায়িত্ব পালন করছেন বলে আইডিতে উল্লেখ করেন। জানতে চাইলে তিনি পূর্বকোণকে বলেন, সিটি কর্পোরেশন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এটি সরাসরি সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়। তাই এখানকার চাকুরিজীবীদের রাজনীতি করার সুযোগ আছে। সেই সুযোগটাই তিনি নিয়েছেন। চাকুরিজীবনের শুরু থেকেই তিনি রাজনীতি করছেন। কখনো কোথাও প্রশ্নের সম্মুখীন হননি। সিটি কর্পোরেশনে চাকুরি করলে রাজনীতি করার সুযোগ আছে বলেই তিনি কখনো অফিসিয়ালি বাধা পাননি। এক্ষেত্রে তিনি একা নন। সিটি কর্পোরেশনেও আরো অনেকেই আছেন যারা সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করেন। রাজনীতি করে না কে? এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন সচিবালয়েও অনেকেই রাজনীতি করেন।
চসিকের বৈদ্যুতিক হেলপার শংকর ঘোষ পটিয়ার মোজাফফরাবাদ ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
আরেক বৈদ্যুতিক হেলপার শেখ জালাল একই উপজেলার ৭ নম্বর জিরি স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনিও এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে শেখ জালাল পূর্বকোণকে বলেন, তিনি সরকারি চাকুরি করেন না। তিনি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশনে চাকুরি করেন। তাই তার রাজনীতি করতে বাধা নেই।
পরিচ্ছন্ন বিভাগের পরিদর্শক জাহেদ উল্লাহ রাশেদ ২২ নম্বর এনায়েত বাজার ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক। তিনিও ওয়ার্ড এবং নগর বিএনপি’র বিভিন্ন কর্মসুচিতে অংশগ্রহণ করেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি পরিচ্ছন্ন বিভাগে খেলোয়াড় কোটায় চাকুরি করছেন। মূলত ক্রিকেট দলের কোচ হিসেবে মাঠেই তার সময় কাটে। ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক পদে থাকলেও তিনি খুব বেশি সময় দিতে পারেন না। সিটি কর্পোরেশন পুরো সরকারি সংস্থা নয় উল্লেখ করে বলেন, সরকারি চাকুরি করলে যে, রাজনীতি করা যায় না বিষয়টি তা জানা নেই।
বাতি পরিদর্শক ওয়াহিদুল আজিম সোহেল সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। চাকুরিকালীন সময়েও তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসুচিতে অংশগ্রহণ করেন। তার ফেসবুক আইডিতে রাজনৈতিক কর্মসুচির বেশকিছু ছবি রয়েছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন তার কোন পদ-পদবী নেই। একসময় সিটি কলেজে পড়াকালিন রাজনৈতিক কর্মসুচিতে অংশগ্রহণ করতেন। এখন চাকুরির কারণে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার সময় পান না।
সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ও স্থানীয় সরকার পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, সরকারি কর্মচারী বিধি অনুযায়ী তাদের রাজনীতি করার সুযোগ থাকার কথা নয়।
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মোজাম্মেল হক পূর্বকোণকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনে চাকুরি করে রাজনৈতিক দলের পদ পদবি দূরে থাক সদস্য হওয়ারও সুযোগ নেই। আইনেই এটা স্পষ্ট করে বলা আছে। যারা রাজনীতি করছেন তারা আইন অমান্য করছেন।