করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যু নিয়ে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৪১৯ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৮৭৪ জন। এ নিয়ে দেশে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১০ লাখ ২১ হাজার ১৮৯ জনে। গতকাল রোববার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না এলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি করুণ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৩৬২ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৭৪ হাজার ৫০১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ হাজার ১৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
এর আগে ১০ জুলাই শনিবার দেশে সর্বোচ্চ ১৮৫ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়াও চলতি মাসেই ৯ জুলাই ২১২, ৮ জুলাই ১৯৯ জন, ৭ জুলাই ২০১ জন, ৬ জুলাই ১৬৩ জন, ৫ জুলাই ১৬৪ জন, ৪ জুলাই ১৫৩ জন, ৩ জুলাই ১৩৪ জন, ২ জুলাই ১৩২ এবং ১ জুলাই ১৪৩ জন করোনায় মৃত্যুবরণ করেন।
২৪ ঘণ্টায় যারা করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন, তাদের মধ্যে পুরুষ ১৩৩ জন, নারী ৯৭ জন। তাদের মধ্যে ১৯ জন বাসায় ও বাকি ২১১ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১৬৯ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৪২ জন।
বয়সভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১১১ জনেরই বয়স ৬০ বছরের বেশি। ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী মারা গেছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫১ জন, তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪২ জন মারা গেছেন ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী। এছাড়া ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ১৯ জন ও ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী সাত জন গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন করোনা সংক্রমণ নিয়ে।
বিভাগভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গতকাল বাদ দিয়ে আগের কয়েকদিনের মতো গত ২৪ ঘণ্টাতেও সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে। এ বিভাগে মারা গেছেন ৬৬ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৬ জন মারা গেছেন ঢাকা বিভাগে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৯ জন চট্টগ্রাম বিভাগে ও চতুর্থ সর্বোচ্চ ২৬ জন মারা গেছেন রাজশাহী বিভাগে। এছাড়া রংপুর বিভাগে ২২ জন, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে আট জন করে এবং ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচ জন করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তির তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আগের দিনের মতোই ৬১৩টি ল্যাবে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এসব ল্যাবে ৩৯ হাজার ৮৬০টি নমুনা সংগ্রহ করে আগের দিনের নমুনাসহ পরীক্ষা করা হয়েছে ৪০ হাজার ১৫টি নমুনা। এই প্রথম দেশে একদিনে ৪০ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা হলো। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা হলো ৬৯ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭টি নমুনা পরীক্ষা হলো।
এদিকে, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না এলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি করুণ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রোববার দুপুরে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভার্চুয়াল বুলেটিনে অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন এই আশঙ্কার কথা জানান।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর যে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন আছে তার মাধ্যমে মৃত্যু শুধু বয়স্ক মানুষের হচ্ছে না, তরুণদেরও হচ্ছে। বিভাগ ওয়ারী বিভিন্ন স্থানে আমরা দেখেছি, সব জেলাতেই কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে এবং সংক্রমণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। ঢাকা বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা ৭০ জন, চট্টগ্রামে ২০ জন ও রাজশাহীতে ১৩ জন, খুলনায় ৫১ জন মারা গেছেন। শনাক্তের হার ঢাকায় ৪৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, খুলনায় ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় রোগীর চাপ বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে এক দিনে ১৫ হাজার শনাক্ত হতে বেশি সময় লাগবে না। ডা. রোবেদ আমিন আরও বলেন, গত মাসে সারা দেশে সংক্রমণের হার অনেক বেশি ছিল।
জুন মাসে ১ লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন রোগী সংক্রমিত হয়েছেন। শুধু জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনে প্রায় ১ লাখ রোগীকে সংক্রমিত হতে দেখতে পেয়েছি। আমরা যেভাবে সংক্রমিত হচ্ছি, হাসপাতালে রোগীর চাপ যদি বাড়তেই থাকে আগামী সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে হাসপাতালের শয্যা আর খালি থাকবে না। সারা দেশে গত মাসেও অসংখ্য বেড খালি ছিল, আইসিইউ বেড খালি ছিল। সেই খালি বেডের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। সারা দেশে মাত্র ৩০০ এর মতো কোভিড-১৯ আইসিইউ বেড খালি আছে।
আমরা লক্ষ্য করেছি, জরুরি প্রয়োজন ছাড়াও অনেকে বাইরে বের হচ্ছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যদি আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, পরিস্থিতি অত্যন্ত করুণ হয়ে যাবে বলে মনে করেন ডা. রোবেদ আমিন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, রোববার পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মারা গেছেন আরও ৭ হাজার ২৮১ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ২২ হাজার ৭০৬ জন।
এ নিয়ে বিশ্বে এখন পর্যন্ত মোট করোনায় মৃত্যু হলো ৪০ লাখ ৪২ হাজার ৬৭৫ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ কোটি ৭২ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৬ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৭ কোটি ১২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭৭ জন।
করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ৪৭ লাখ ২৬ হাজার ১১১ জন। মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ২২ হাজার ৮২১ জনের।
আক্রান্তে দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত মোট সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৬২ হাজার ৩১ জন এবং এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ৮ হাজার ৭২ জনের। আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৩ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৩২ হাজার ৯৪৯ জনের।
আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ লাখ ৮ হাজার ৩৮৩ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন এক লাখ ১১ হাজার ৩২১ জন। এ তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে রাশিয়া। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৫৭ লাখ ৫৮ হাজার ৩০০ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন এক লাখ ৪২ হাজার ২৫৩ জন।
এদিকে আক্রান্তের তালিকায় তুরস্ক ষষ্ঠ, যুক্তরাজ্য সপ্তম, আর্জেন্টিনা অষ্টম, কলম্বিয়া নবম ও ইতালি দশম স্থানে রয়েছে। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩০তম। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।