শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১২:৫৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
আসন্ন ২য় ধাপে,উপজেলা নির্বাচন-২০২৪ নওগাঁর পোরশায় প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ মধুপুরে বদলি হওয়া তিন শিক্ষককে সদর ক্লাস্টারে ফুলেল শুভেচ্ছা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ২৩-২৪ অর্থবছরের কৃষি প্রণোদনা বীজ ও সার বিতরন দুপচাঁচিয়া নিউ মার্কেট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বিনামূল্যে শরবত বিতরণ বাংলার যাত্রা সম্রাজ্ঞী জোৎস্না বিশ্বাসের শুভ জন্মদিন আজ : সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন আজ : যুব শক্তি সমাজ কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে ঠান্ডা পানির শরবত ও স্যালাইন বিতরণ নওগাঁর পোরশায় ছাওড় ইউপির উম্মুক্ত বাজেট ঘোষণা দুপচাঁচিয়ার চৌমুহানী বাসস্ট্যান্ডে গণশৌচাগার না থাকায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তি নওগাঁর পোরশায় বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের আগুনে কাঠের ‘স’ মিল ভূষ্মিভূত চেয়ারম্যান প্রার্থী জনাব আলহাজ্ব মোঃ আবুল কালাম আজাদ এর গণসংযোগ নওগাঁ সরকারি খাদ্যগুদামের চাল ছয় নয় করার অপরাধে দুই কর্মকর্তাসহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা ১লা মে, আজ বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষেরঅধিকার আদায়ের দিন নওগাঁ প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে মাঠে ধান কাটতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে কৃষকের মৃত্যু নওগাঁ যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিমান চন্দ্র রায় পথচারীদের মাঝে পানি ও স্যালাইন বিতরণ করেন নওগাঁ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত নওগাঁর ধামইরহাটে চেয়ারম্যান প্রার্থী আজাহার আলীর গণজোয়ার বিজয়ের পথে জনপ্রিয় সোহেল রানা ও অনজুয়ারা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বিশ্ব আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত  দুপচাঁচিয়ায় গৃহ নির্মাণ শ্রমিক পরিষদের মহান মে দিবস উদযাপন নলডাঙ্গা দোকান কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

কারাগারে কারো বিলাসবহুল জীবন ॥ কারো কষ্টের

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২১
  • ১৭৪ বার পঠিত

নাছির উদ্দিন শোয়েব : কারাগারে কারো কাটছে বিলাসবহুল জীবন, কারো কষ্টের। অপরাধী হয়েও ক্ষমতার প্রভাব ও মোটা টাকার বিনিময়ে কারো জীবন কাটছে আয়েশে। অন্যদিকে জেল কোড অনুযায়ী প্রাপ্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক অভিজাত বন্দী। ভিআইপি বা রাজবন্দী হলেও কাউকে কাউকে অমর্যাদাকর অবস্থায় শাস্তিযোগ্য সেলেও রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকার বিনিময়ে অনেক রাঘব বোয়াল দিনের পর দিন অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করছেন। হাসপাতালে জায়গা করে নিচ্ছেন। দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েও তারা অনুকম্পা পাচ্ছেন। নিয়ম অনুযায়ী সব বন্দী সমান সুবিধা পাচ্ছেন না। দীর্ঘ দিন ধরে দেশের কারাগারে কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারির বিরুদ্ধে এ ধরণের অনৈতিক সুবিধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
দেশের ৬৮ কারাগারে  বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার তিনগুনের মতো বন্দী আছেন। এদের অনেকেই গাদাগাদি করে অমানবিকভাবে থাকছেন। এ ছাড়া দাগি অপরাধী, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গি অভিযোগে গ্রেফতার অনেক বন্দী আছেন। তাদেরকে অধিক নিরাপত্তা দিয়ে কারাগারের বিভিন্ন সেলে রাখা হয়েছে। ভয়ঙ্কর অপরাধীদের শ্রেণি বিন্যাস করে বিভিন্ন কারাগারে স্থানান্তর করে রাখা হয়েছে। তবে এ ছাড়াও কয়েক হাজার সাধারণ বন্দী আছেন। ঠুনকো অভিযোগ, মিথ্যা মামলা, রাজনৈতিক মামলায় আটক হয়েছেন। রয়েছেন-রাজবন্দী বা সমাজের প্রথম শ্রেণির নাগরিক। জেল কোড অনুযায়ী বন্দীদের শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী প্রাপ্ত সুবিধা পাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু নির্দেশনা থাকার পরও সুবিধা বঞ্চিত হওয়ার অনেক অভিযোগ আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। এসব বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ কখনো কখনো শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছেন। তবে কারাগারে অনেকাংশে স্বচ্ছতা ফিরে আসলেও কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে এই সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
সম্প্রতি দেশের আর্থিক খাতের অন্যতম কেলেঙ্কারি হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদের ভায়রা ও হলমার্কের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমদকে কারা কর্মকর্তাদের কক্ষে নারীসঙ্গের থাকার ব্যবস্থা করে দেয়ার অভিযোগে কারাগারের অনৈতিক এ সুবিধা দেয়ার তথ্য পাওয়া যায়। এ ঘটনায় দু‘টি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত চলছে। জড়িত থাকার অভিযোগ এখন পর্যন্ত সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায়, জেলার নুর মোহাম্মদ মৃধাসহ পাঁচজনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের কারা অধিদফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রাথিমকভাবে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে কারা অধিদফতর। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অভিযুক্তরা এ অনৈতিক সুবিধা প্রদান করেছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন। কারা কক্ষে নারীরসঙ্গের ছবি ভাইরাল হওয়ায় তোলপাড় চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘটনাটি এখনো তদন্ত চলছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, গাজীপুরের কাশিমপুর-১ কারাগারে যে ঘটনা ঘটেছে, তা জঘন্য অপরাধ। এর সঙ্গে যারা জড়িত, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি কারাগারে হলমার্কের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমদের সঙ্গে এক নারীর অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর ঘটনাকে জঘন্য বলে অভিহিত করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এটি জঘন্য কাজ। কারাগারে এসব নিষিদ্ধ। এর পেছনে যারা দায়ী প্রাথমিকভাবে তাদের সবাইকে প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটিও করতে বলা হয়েছে। কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব কারাগারের জন্য এটি সতর্কবার্তা। যারাই এর সঙ্গে জড়িত থাকবে, তারাই শাস্তির আওতায় আসবে। কেন না এটি জঘন্যতম অপরাধ।
এরআগেও কারাগারে অর্থের বিনিময়ে সুবিধা নেয়ার অনেক অভিযোগ পাওয়া যায়। গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে সংবাদও প্রচার হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে কারা হাসপাতাল ছাড়াও বাইরের হাসপাতালের  এয়ার কন্ডিশনার কেবিনেও থাকছেন বহু আসামী। দাগি আসামীরা ভিআইপি সুবিধা  ভোগ করছেন। বাইরের রান্না করা খাবার খাচ্ছেন। এমনকি কতিপয় শীর্ষ সন্ত্রাসী যারা কারাগার থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ ও সহযোগীদের দিয়ে চাঁদাবাজি করাচ্ছেন বলেও অভিযোগ আছে। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি প্রিজন্সে অভিজাত-রাজবন্দীকে রেখে শাস্তি দেয়ার মতো যেসব জঘন্য অভিযোগ আছে। তবে এসব ক্ষতিয়ে জড়িত সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, গত দুই বছরে অনিয়ম, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় গ্রেফতার হন বেশ কয়েকজন রাঘব বোয়াল। নিজ নিজ জগতে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এসব ব্যক্তিরা অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে দেশ-বিদেশে কাটিয়েছেন বিলাসী জীবন। একেকজন সম্পদের পাহাড় গড়েছেন দেশ-বিদেশে। চলেছেন দামি গাড়িতে সশস্ত্র প্রহরায়। যখন যা খুশি তাই করেছেন চোখের ইশারায়। প্রশাসনের অসাধু কিছু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তারা চালিয়ে গেছেন অবৈধ কর্মকাণ্ড। গ্রেফতারের পর এসব রাঘব বোয়ালরা দিন কাটাচ্ছেন কারাগারের। ক্ষমতাধর প্রভবশালী এসব ব্যক্তিদের কেউ কেউ চিকিৎসার নামে আছেন হাসপাতালে। রাজনৈতিক ও অপরাধ জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকায় অন্য বন্দীদের কাছ থেকে বিশেষ খাতির-যত্নও পাচ্ছেন তারা।
ক্যাসিনোকাণ্ডে ২০১৯ সালে গ্রেফতার হন যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে একই বছর গ্রেফতার হন বহুল আলোচিত ঠিকাদার জি কে শামীম। পরবর্তীতে সম্রাট ও খালেদ মাহমুদকে সংগঠনের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। নানান অপরাধের অভিযোগে ২০২০ সালে গ্রেফতার হন যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া। তাকেও পরে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। করোনা টেস্ট নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে ২০২০ সালে গ্রেফতার হন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইন ও তার স্বামী আরিফ চৌধুরী। পরে ডা. সাবরিনাকে হাসপাতাল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেফতার হন সম্রাট। গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন টাকার কুমির। রাজধানীর কাকরাইলে তিনি বহুতল একটি ভবন দখল করে সেখানে গড়ে তোলেন তার অপরাধের সাম্রাজ্য। রাজধানীর ক্যাসিনো কিংবা জুয়ার আসরগুলোর অন্যতম নিয়ন্ত্রক ছিলেন তিনি।  কথিত আছে, সম্রাটকে ভাগ না দিয়ে ঢাকা শহরে কোথাও জুয়া খেলা সম্ভব ছিল না। দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সম্রাটকে গ্রেফতারের পরদিনই চিকিৎসকের পরামর্শে ভর্তি করা হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। এক সপ্তাহ পর মাদক, অস্ত্র ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সম্রাটকে নেয়া হয় কাশিমপুর কারাগারে। গ্রেফতারের পর ওই বছর ২৪ নভেম্বর বুকে ব্যথার কথা বলে কারাগারের চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ভর্তি করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)।
এর আগে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন বহুল আলোচিত ঠিকাদার জি কে শামীম। গণপূর্তসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বড় ঠিকাদারি কাজগুলো ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। এজন্য তিনি শত শত কোটি টাকা ঘুষ দিতেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। গ্রেফতারের পর সম্রাটের মতো তিনিও চিকিৎসার নামে চলে যান বিএসএমএমইউ’তে। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে রাঘব বোয়ালদের মধ্যে  প্রথম গ্রেফতার হন খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরপর অন্য ঘটনায় গ্রেফতার হস যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া। করোনা কান্ডে গ্রেফতার হন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান শাহেদ করিম, ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইন ও তার স্বামী আরিফ চৌধুরী। যারা কারাগারে আয়েশে জীবন কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Developed By cinn24.com
themesbazar24752150