ঢাকা ১০:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
পাঁচ শতাধিক অসহায় পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণে সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়ন ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বান উপেক্ষা করে তেল স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন রাষ্ট্রপতির আদেশ ক্রমে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছ ধরার উপর ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা ঢাকায় জাতীয় পার্টির ইফতার মাহফিলে হামলা, বেশ কয়েকজন আহত নওগাঁ বগুড়া-ঢাকা আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার সবধরনের বাস চলাচল বন্ধ প্রধান উপদেষ্টার সাথে সেনাপ্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ দুপচাঁচিয়ার কইলে ১৬ প্রহর ব্যাপী রাধা গোবিন্দের পদাবলী লীলা কীর্তন শুরু রংপুরের মিঠাপুকুরে বোরকা পরে পালানোর সময় ‘ধর্ষক’কে ধরে গণপিটুনি জাপানি নায়িকা পর্নোগ্রাফি ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন বাংলাদেশ প্রেসক্লাব দুপচাঁচিয়া উপজেলা কমিটির ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

কালের সাক্ষী কর্ণফুলীর মিয়াবাড়ি হারিয়ে যেতে বসেছে জমিদার বাড়ির ইতিহাস-ঐতিহ্য

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:০১:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ২১ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জাহিদ হাসান হৃদয়, আনোয়ারা »

কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের মিয়ার হাট এলাকায় শত বছরের পুরাতন ঐতিহ্যবাহী জমিদার মনোহর আলী খানের সেই মিয়াবাড়ি এখন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একসময় জমিদারি কাজকর্মে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হিসেবে পরিচিত থাকলেও সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে জমিদার বাড়ির ইতিহাস-ঐতিহ্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, বড়উঠান মিয়াবাড়িতে প্রবেশ করতেই আছে বড় একটি পুকুর। পুকুরটিতে দুটি ঘাট রয়েছে। একটি ঘাট নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় সংস্কার করা হয়। পুকুরের দক্ষিণ পশ্চিম পাশে রয়েছে মসজিদ। মসজিদের পাশের ঘাটটি এখনো অক্ষত আছে। সেই আমলে নির্মিত মসজিদের কারুকাজ চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে বিশাল বিশাল দেয়ালের উপর নির্মিত মসজিদের ভেতরের দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ ও ঠান্ডা পরিবেশ যেকোনো মুসল্লিকে প্রশান্তি দেয়। মসজিদের পাশেই কবরে শুয়ে আছেন জমিদারের বংশধররা। মূল বাড়ির সামনের কাছারি ঘরটি এখন ভেঙে গেছে। অবশিষ্ট কাছারি ঘরের মেঝে আর অবশিষ্টাংশ। কাছারির মাঝে রয়েছে মূল বাড়িতে যাওয়ার পথ। মূল বাড়িটির সামনে রয়েছে খোলা উঠান। স্থানীয় শিশু-কিশোরদের খেলতে দেখা যায় এই উঠানে। মূল বাড়িটির দেওয়ালের বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়েছে। ঘরের ভেতর আগাছায় ভরে গেছে। ঘরের পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে রয়েছে সিঁড়ি। বাড়িটির আশপাশে অনেক পুরনো লিচুগাছ, বেলগাছসহ বিভিন্ন ফল ও বনজ গাছ রয়েছে। গাছগুলোর বয়সও বাড়ির চেয়ে কম নয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক শ বছর আগে জনৈক জমিদারের ১৬তম প্রজন্ম জমিদার মনোহর আলী খান। ১৬৬৫ সালে তাঁদের পূর্বপুরুষ এখানে আসেন। কেউ কেউ বলে থাকেন রাজা শ্যামরায় তাঁদের পূর্বপুরুষ। তাঁরা মূলত শায়েস্তা খানের বংশধর। শায়েস্তা খান তাঁর জমিদারির ২৫ শতাংশ দেওয়ান মনোহর আলী খানকে দান করেছিলেন। সেখান থেকেই তাঁদের জমিদারি শুরু। পাকিস্তান আমলে জমিদারি প্রথা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তাঁদের জমিদারির অবসান ঘটে।

জানা যায়, জমিদার বাড়ির সামনের ঘরে বাইরের অতিথিরা এসে বসতেন। সেখানে খাজনাও আদায় হতো। বিচার-আচারও সেখানে হতো। মাটির নির্মিত ওই ঘরের বিভিন্ন অংশ বর্তমানে ক্ষয় হয়ে গেছে। বাড়ির একপাশে ছিল ধানের বিশাল গোলা ও অপরপাশে ছিল বিনোদন স্থান। যেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত। প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া দ্বিতল ভবনটিতে ছিল উপরে ও নিচে তিনটি করে মোট ছয়টি কক্ষসহ দুই ফ্লোরে দুটি শৌচাগার। জমিদার বাড়ির ভবন নির্মাণে যে ইট ব্যবহার করা হয়েছে তা চার কোণা আকারের। দেয়াঙ পাহাড়ের মাটি দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা ইটগুলোর সাথে চুন সুরকি দিয়ে স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়। স্থাপনার বয়স কয়েক শ বছর বলে ধারণা করা হচ্ছে। জমিদারের বংশধররা ষাটের দশক থেকে ভবনটিতে বসবাস করা বন্ধ করে দেন। সেই সময় বাড়ির পেছনে আরেকটি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। সেটি এখনো বসবাসের উপযোগী। জমিদারের বংশধররা গ্রামের বাড়িতে গেলে সেখানে বসবাস করেন। পুরাতন ভবনটির কোনো সংস্কার না হওয়ায় তা এখন বিলুপ্তির পথে।

ঘরের দেখভালের জন্য এর একপাশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন রহিমা আক্তার নামের এক মহিলা। তিনি জানান, বর্তমান মিয়া বংশের ৩জন ছেলে রয়েছে। তারা দেশের বাইরে এবং শহরে বসবাস করেন। মাঝে মাঝে এখানে আসলেও আবার চলে যায়। প্রতিবছর একবার করে পুরো জমিদার বাড়ির ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয় বলে জানান তিনি।

জমিদার মনোহর আলী খানের ১৯তম বংশধর সাজ্জাদ উদ্দিন মিঠু বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষ ১৬৬৫ সাল থেকে জমিদারি শুরু করেন। সেই থেকে পূর্বপুরুষদের জমিদারি চলতে থাকে। দীর্ঘ কয়েক শ বছর জমিদারি চলার পর ১৯৫৪ সালের দিকে আমাদের জমিদারি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে ধীরে-ধীরে জমিদারির অবসান ঘটে। এই জমিদার বাড়ির ইতিহাস আমরা জানলেও বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এ ইতিহাস জানে না। তাই এই জমিদার বাড়িটি সংস্কার করা খুবই প্রয়োজন যাতে করে আগামী প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা এ জমিদার বাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে।’

স্থানীয় বড়উঠান ইউপি সদস্য সাজ্জাদ খান সুমন বলেন, ‘এটি অনেক পুরাতন জমিদার বাড়ি। আমারে এলাকার জন্য গর্ব। ভবনটি কয়েক শ বছরের পুরাতন হওয়ায় তা সংস্কারের অনুপযোগী হয়ে ওঠেছে। তবে এটি সংস্কার না হলেও মসজিদ, পুকুরের ঘাটসহ আশে- পাশের চলাচলের রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

কালের সাক্ষী কর্ণফুলীর মিয়াবাড়ি হারিয়ে যেতে বসেছে জমিদার বাড়ির ইতিহাস-ঐতিহ্য

আপডেট সময় : ১১:০১:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

জাহিদ হাসান হৃদয়, আনোয়ারা »

কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের মিয়ার হাট এলাকায় শত বছরের পুরাতন ঐতিহ্যবাহী জমিদার মনোহর আলী খানের সেই মিয়াবাড়ি এখন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একসময় জমিদারি কাজকর্মে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হিসেবে পরিচিত থাকলেও সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে জমিদার বাড়ির ইতিহাস-ঐতিহ্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, বড়উঠান মিয়াবাড়িতে প্রবেশ করতেই আছে বড় একটি পুকুর। পুকুরটিতে দুটি ঘাট রয়েছে। একটি ঘাট নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় সংস্কার করা হয়। পুকুরের দক্ষিণ পশ্চিম পাশে রয়েছে মসজিদ। মসজিদের পাশের ঘাটটি এখনো অক্ষত আছে। সেই আমলে নির্মিত মসজিদের কারুকাজ চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে বিশাল বিশাল দেয়ালের উপর নির্মিত মসজিদের ভেতরের দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ ও ঠান্ডা পরিবেশ যেকোনো মুসল্লিকে প্রশান্তি দেয়। মসজিদের পাশেই কবরে শুয়ে আছেন জমিদারের বংশধররা। মূল বাড়ির সামনের কাছারি ঘরটি এখন ভেঙে গেছে। অবশিষ্ট কাছারি ঘরের মেঝে আর অবশিষ্টাংশ। কাছারির মাঝে রয়েছে মূল বাড়িতে যাওয়ার পথ। মূল বাড়িটির সামনে রয়েছে খোলা উঠান। স্থানীয় শিশু-কিশোরদের খেলতে দেখা যায় এই উঠানে। মূল বাড়িটির দেওয়ালের বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়েছে। ঘরের ভেতর আগাছায় ভরে গেছে। ঘরের পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে রয়েছে সিঁড়ি। বাড়িটির আশপাশে অনেক পুরনো লিচুগাছ, বেলগাছসহ বিভিন্ন ফল ও বনজ গাছ রয়েছে। গাছগুলোর বয়সও বাড়ির চেয়ে কম নয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক শ বছর আগে জনৈক জমিদারের ১৬তম প্রজন্ম জমিদার মনোহর আলী খান। ১৬৬৫ সালে তাঁদের পূর্বপুরুষ এখানে আসেন। কেউ কেউ বলে থাকেন রাজা শ্যামরায় তাঁদের পূর্বপুরুষ। তাঁরা মূলত শায়েস্তা খানের বংশধর। শায়েস্তা খান তাঁর জমিদারির ২৫ শতাংশ দেওয়ান মনোহর আলী খানকে দান করেছিলেন। সেখান থেকেই তাঁদের জমিদারি শুরু। পাকিস্তান আমলে জমিদারি প্রথা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তাঁদের জমিদারির অবসান ঘটে।

জানা যায়, জমিদার বাড়ির সামনের ঘরে বাইরের অতিথিরা এসে বসতেন। সেখানে খাজনাও আদায় হতো। বিচার-আচারও সেখানে হতো। মাটির নির্মিত ওই ঘরের বিভিন্ন অংশ বর্তমানে ক্ষয় হয়ে গেছে। বাড়ির একপাশে ছিল ধানের বিশাল গোলা ও অপরপাশে ছিল বিনোদন স্থান। যেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত। প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া দ্বিতল ভবনটিতে ছিল উপরে ও নিচে তিনটি করে মোট ছয়টি কক্ষসহ দুই ফ্লোরে দুটি শৌচাগার। জমিদার বাড়ির ভবন নির্মাণে যে ইট ব্যবহার করা হয়েছে তা চার কোণা আকারের। দেয়াঙ পাহাড়ের মাটি দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা ইটগুলোর সাথে চুন সুরকি দিয়ে স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়। স্থাপনার বয়স কয়েক শ বছর বলে ধারণা করা হচ্ছে। জমিদারের বংশধররা ষাটের দশক থেকে ভবনটিতে বসবাস করা বন্ধ করে দেন। সেই সময় বাড়ির পেছনে আরেকটি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। সেটি এখনো বসবাসের উপযোগী। জমিদারের বংশধররা গ্রামের বাড়িতে গেলে সেখানে বসবাস করেন। পুরাতন ভবনটির কোনো সংস্কার না হওয়ায় তা এখন বিলুপ্তির পথে।

ঘরের দেখভালের জন্য এর একপাশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন রহিমা আক্তার নামের এক মহিলা। তিনি জানান, বর্তমান মিয়া বংশের ৩জন ছেলে রয়েছে। তারা দেশের বাইরে এবং শহরে বসবাস করেন। মাঝে মাঝে এখানে আসলেও আবার চলে যায়। প্রতিবছর একবার করে পুরো জমিদার বাড়ির ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয় বলে জানান তিনি।

জমিদার মনোহর আলী খানের ১৯তম বংশধর সাজ্জাদ উদ্দিন মিঠু বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষ ১৬৬৫ সাল থেকে জমিদারি শুরু করেন। সেই থেকে পূর্বপুরুষদের জমিদারি চলতে থাকে। দীর্ঘ কয়েক শ বছর জমিদারি চলার পর ১৯৫৪ সালের দিকে আমাদের জমিদারি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে ধীরে-ধীরে জমিদারির অবসান ঘটে। এই জমিদার বাড়ির ইতিহাস আমরা জানলেও বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এ ইতিহাস জানে না। তাই এই জমিদার বাড়িটি সংস্কার করা খুবই প্রয়োজন যাতে করে আগামী প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা এ জমিদার বাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে।’

স্থানীয় বড়উঠান ইউপি সদস্য সাজ্জাদ খান সুমন বলেন, ‘এটি অনেক পুরাতন জমিদার বাড়ি। আমারে এলাকার জন্য গর্ব। ভবনটি কয়েক শ বছরের পুরাতন হওয়ায় তা সংস্কারের অনুপযোগী হয়ে ওঠেছে। তবে এটি সংস্কার না হলেও মসজিদ, পুকুরের ঘাটসহ আশে- পাশের চলাচলের রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে।’