ঢাকা ০৩:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
খুলনা সিটি মেয়র ও বাগেরহাট ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিদেশযাত্রার নিষেধাজ্ঞা ক্ষেতলালে এ্যাকশান ইন বাংলাদেশ এর উদ্দ্যোগে বিনামূল্যে বকনা বিতরণ ফকিরহাটে গলায় ফাঁস দিয়ে মাদ্রাসা ছাত্রকে হত্যা, দুই শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার গফরগাঁওয়ে শিশুর মুখে বেলুন আটকে শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু রাজধানীর মাটিকাটা এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান: অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ১০ সন্ত্রাসী গ্রেফতার ফকিরহাটে ব্যাবসায়ীকে কুপিয়ে জখম, টাকা লুটের অভিযোগ খুলনার হোটেলে যৌথবাহিনীর অভিযানে নৌবাহিনীর ভর্তি বাণিজ্যের বড় চক্র গ্রেফতার ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক আয়োজিত শহরকে যানজট মুক্ত করার লক্ষ্যে সচেতনতা মূলক মতবিনিময় সভা দুপচাঁচিয়ার তালোড়ায় আওয়ামীলীগ নেতা আটক বাগেরহাটের মংলায় ভিটিআরটি ও বাঘ বন্ধু দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ

ধানমন্ডিতে র‌্যাব-ম্যাজিস্ট্রেট-ছাত্র পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৬

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৩৫:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫ ১৬ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছবি সংগৃহীত

রাজধানীর ধানমন্ডি ৮ নম্বর সড়কের ভিকারুননিসা স্কুলের গলিতে ছয়তলা একটি ভবনে র‌্যাব-ম্যাজিস্ট্রেট-ছাত্র পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। বুধবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

ডাকাতরা ভবনটির নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর করে বেঁধে রাখে। পরে “অলংকার নিকেতন নামে একটি জুয়েলার্স ও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ঢুকে প্রায় ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়।

পুলিশ বলছে, ডাকাতি করতে যাওয়া দলটির অভিযানে যাওয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মতোই প্রস্তুতি ছিল। ডাকাতদলের কয়েকজনের পরনে র‌্যাব লেখা কটি (জ্যাকেট) ছিল। অন্যরা নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট ও ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেয়।

এ ঘটনায় বুধবার (২৬ মার্চ) ভোরের ওই ঘটনার সময় স্থানীয়দের সহায়তায় ওই দলের চারজন ও রাতে আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে দুর্ধর্ষ এই ডাকাতির ঘটনার সময় চারজনকে আটকের পুরস্কার পাচ্ছেন পাঁচ জন শ্রমিক। সাহসিকতার জন্য ওই পাঁচ শ্রমিককে পাঁচ হাজার টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। একই সঙ্গে এই পাঁচ শ্রমিককে পুলিশের অক্সিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের-ডিএমপি রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম।

গ্রেপ্তাররা হলেন- ফরহাদ বীন মোশারফ (৩৩), ইয়াছিন হাসান (২২), মোবাশ্বের আহাম্মেদ (২৩), ওয়াকিল মাহমুদ (২৬), আবদুল্লাহ (৩২) ও সুমন (২৯)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ‘র‌্যাব’ লেখা কালো রঙের দুটি জ্যাকেট, তিনটি কালো রঙের র‌্যাব লেখা ক্যাপ, একটি মাইক্রোবাস, পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি লোহার তৈরি ছেনি, একটি পুরাতন লাল রঙের স্লাই রেঞ্জ ও নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

মাসুদ আলম বলেন, ওই সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রে ২৫-৩০ জন ছিল। অপারেশন পরিচালনার জন্য পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে ধরণের প্রিপারেশন নিয়ে যায়, সে ধরণের ফুল প্রিপারেশন তাদের ছিল। তাদের সঙ্গে র‌্যাবের কটি এবং জ্যাকেট পরা অবস্থায় লোকজন ছিল। মাইক্রোফোন হাতে মিডিয়ার লোক সেজে ছিল, তাদের ৫-৬ জন ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয়ে গিয়েছিল।

ডাকাতির বিবরণে তিনি বলেন, ধানমন্ডি ৮ নম্বর সড়কের ওই বাড়িটির মালিক এম এ হান্নান আজাদ নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর। যার ‘অলংকার নিকেতন জুয়েলার্স’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। তার বসুন্ধরায় দোকানের পাশাপাশি তাঁতীবাজারে কারখানা রয়েছে। বাড়িটির নিচতলায়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস আছে। এ ছাড়া ওই বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় একটি কনসালটেন্সি অফিস এবং পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা নিয়ে ওই ব্যবসায়ীর ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে।

তিনি বলেন, ডাকাত দলটি তিনটি মাইক্রোবাস এবং একটি প্রাইভেটকারে ওই বাসার সামনে এসে গেটে থাকা নিরাপত্তা কর্মীদের বলে, তারা র‌্যাবের লোক, তাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট আছে। তারা বাড়িতে অভিযান চালাবে বলে তাড়াতাড়ি গেট খুলতে বলে। তাদের কয়েকজনের গায়ে র‌্যাব লেখা কটি পরা ছিল।

দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। তখন ডাকাতরা সিকিউরিটি গার্ডদের গালাগালি করতে থাকে এবং গেইট না খুললে তাদের হত্যার হুমকি দেয়। তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন গেইটের উপর দিয়ে উঠে জোর করে গেইট খুলে ফেলে। এরপর তারা সবাই বাড়িতে ঢুকে নিরাপত্তাকর্মী, কেয়ারটেকার ও গাড়ি চালককে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে।

ব্যবসায়ীর বাসায় স্বর্ণ থাকতে পারে ধারণা করে ডাকাত দলটির টার্গেট ওই বাসা থাকলেও তারা নিচতলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস থেকেই ‘তল্লাশির’ নামে লুটপাট শুরু করে জানিয়ে ডিসি বলেন, নিচতলার অফিসের গেট ভেঙে পিয়নকে মারধর করে এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে সেখান থেকে ৪৫ হাজার ১০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়।

পরে ডাকাতরা তাকে ভয়তীতি দেখিয়ে তৃতীয় তলায় গিয়ে এস এম সোর্সিংয়ের অফিসের গেট ভেঙে ফেলে। এ সময় গেট ভাঙার শব্দ পেয়ে চতুর্থ তলায় থাকা এস এম সোর্সিংয়ের তিনজন অফিস সহকারী তৃতীয় তলায় নেমে আসেন। ডাকাতরা তখন তাদেরকেও আটক করে মারধর করে অফিসের চাবি ও বাসার চাবি দিতে বলে। পরে তারা জোর করে চাবি নিয়ে তৃতীয় তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে অফিসের ড্রয়ার ভেঙে নগদ ২২ লাখ টাকা লুট করে নেয় ও অফিসের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। ডাকাতদের আরেকটি দল চতুর্থ তলার অফিসে ঢুকে আলমারি ভেঙে নগদ ১৩ লাখ টাকা লুট করে নেয়।

মাসুদ আলম বলেন, সবশেষে তারা বাড়ির মালিক এম এ হান্নান আজাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। বাসা থেকে দেড়লাখ টাকা, স্বর্ণের কানের দুল ও চেইনসহ আনুমানিক আড়াই ভরি স্বর্ণ লুট করে নেয়। এরপর তারা মালিক এম এ হান্নানকে জোর করে নিচে নামিয়ে গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করে।

উপকমিশনার বলেন, এরইমধ্যে কেউ একজন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে খবর দিলে ধানমন্ডি থানার একটি টহল টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ডাকাত দলের লোকজন পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ডাকাত দলের সদস্যদের হাতাহাতিও হয়, এতে পুলিশের দুই সদস্য আহত হন। তখন আশেপাশে থাকা লোকজনের সহায়তায় পুলিশ চারজনকে আটক করে। ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা গাড়িতে করে পালিয়ে যায়। পরে ওই ব্যবসায়ীর ভাগ্নে তৌহিদুল ইসলামের করা একটি মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও গ্রেপ্তার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পরিপ্রেক্ষিতে রাতে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি গাড়িসহ আবদুল্লাহ ও সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। ছয় জনের বাইরে যারা আছে শিগগিরই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো বলে আশা করছি। তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে, রিমান্ডে এনে এসব তথ্য ক্রসচেক করব। যেহেতু ২৫-৩০ জনের মতো একটা টিম কাজ করেছে, তাই বাকিদের গ্রেপ্তারের সুবিধার্থে কিছু তথ্য আমরা পরে ডিসক্লোজ করতে চাচ্ছি।

ওই দলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সদস্য জড়িত কি-না অথবা রাজনৈতিক কোনো পরিচয় রয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ছয়জনকে কোর্টে পাঠানো হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারবো।

এ সময় ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ধানমন্ডিতে ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতদের প্রতিরোধ করা এবং তাদের ধরতে সহায়তা করায় পাঁচজন শ্রমিকের নাম পাওয়া গেছে। সাহসিকতার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী পাঁচ শ্রমিকের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া এই পাঁচ জনকে অক্সিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।

রাজধানীজুড়ে টহল ও তল্লাশিচৌকি ‘জোরদারের’ পরও এতো বড় একটা ডাকাত দলের ডাকাতির বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোজা ও ঈদ ঘিরে আমাদের বিস্তারিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টহল কার্যক্রম জোরদার ও তল্লাশিচৌকি স্থাপন। দুই-একটা ঘটনা যেগুলো ঘটছে সঙ্গে সঙ্গে ডিটেক্ট করছি। আমরা আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করছি, সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ধানমন্ডিতে র‌্যাব-ম্যাজিস্ট্রেট-ছাত্র পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৬

আপডেট সময় : ০৩:৩৫:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫

ছবি সংগৃহীত

রাজধানীর ধানমন্ডি ৮ নম্বর সড়কের ভিকারুননিসা স্কুলের গলিতে ছয়তলা একটি ভবনে র‌্যাব-ম্যাজিস্ট্রেট-ছাত্র পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। বুধবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

ডাকাতরা ভবনটির নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর করে বেঁধে রাখে। পরে “অলংকার নিকেতন নামে একটি জুয়েলার্স ও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ঢুকে প্রায় ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়।

পুলিশ বলছে, ডাকাতি করতে যাওয়া দলটির অভিযানে যাওয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মতোই প্রস্তুতি ছিল। ডাকাতদলের কয়েকজনের পরনে র‌্যাব লেখা কটি (জ্যাকেট) ছিল। অন্যরা নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট ও ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেয়।

এ ঘটনায় বুধবার (২৬ মার্চ) ভোরের ওই ঘটনার সময় স্থানীয়দের সহায়তায় ওই দলের চারজন ও রাতে আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে দুর্ধর্ষ এই ডাকাতির ঘটনার সময় চারজনকে আটকের পুরস্কার পাচ্ছেন পাঁচ জন শ্রমিক। সাহসিকতার জন্য ওই পাঁচ শ্রমিককে পাঁচ হাজার টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। একই সঙ্গে এই পাঁচ শ্রমিককে পুলিশের অক্সিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের-ডিএমপি রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম।

গ্রেপ্তাররা হলেন- ফরহাদ বীন মোশারফ (৩৩), ইয়াছিন হাসান (২২), মোবাশ্বের আহাম্মেদ (২৩), ওয়াকিল মাহমুদ (২৬), আবদুল্লাহ (৩২) ও সুমন (২৯)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ‘র‌্যাব’ লেখা কালো রঙের দুটি জ্যাকেট, তিনটি কালো রঙের র‌্যাব লেখা ক্যাপ, একটি মাইক্রোবাস, পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি লোহার তৈরি ছেনি, একটি পুরাতন লাল রঙের স্লাই রেঞ্জ ও নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

মাসুদ আলম বলেন, ওই সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রে ২৫-৩০ জন ছিল। অপারেশন পরিচালনার জন্য পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে ধরণের প্রিপারেশন নিয়ে যায়, সে ধরণের ফুল প্রিপারেশন তাদের ছিল। তাদের সঙ্গে র‌্যাবের কটি এবং জ্যাকেট পরা অবস্থায় লোকজন ছিল। মাইক্রোফোন হাতে মিডিয়ার লোক সেজে ছিল, তাদের ৫-৬ জন ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয়ে গিয়েছিল।

ডাকাতির বিবরণে তিনি বলেন, ধানমন্ডি ৮ নম্বর সড়কের ওই বাড়িটির মালিক এম এ হান্নান আজাদ নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর। যার ‘অলংকার নিকেতন জুয়েলার্স’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। তার বসুন্ধরায় দোকানের পাশাপাশি তাঁতীবাজারে কারখানা রয়েছে। বাড়িটির নিচতলায়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস আছে। এ ছাড়া ওই বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় একটি কনসালটেন্সি অফিস এবং পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা নিয়ে ওই ব্যবসায়ীর ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে।

তিনি বলেন, ডাকাত দলটি তিনটি মাইক্রোবাস এবং একটি প্রাইভেটকারে ওই বাসার সামনে এসে গেটে থাকা নিরাপত্তা কর্মীদের বলে, তারা র‌্যাবের লোক, তাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট আছে। তারা বাড়িতে অভিযান চালাবে বলে তাড়াতাড়ি গেট খুলতে বলে। তাদের কয়েকজনের গায়ে র‌্যাব লেখা কটি পরা ছিল।

দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। তখন ডাকাতরা সিকিউরিটি গার্ডদের গালাগালি করতে থাকে এবং গেইট না খুললে তাদের হত্যার হুমকি দেয়। তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন গেইটের উপর দিয়ে উঠে জোর করে গেইট খুলে ফেলে। এরপর তারা সবাই বাড়িতে ঢুকে নিরাপত্তাকর্মী, কেয়ারটেকার ও গাড়ি চালককে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে।

ব্যবসায়ীর বাসায় স্বর্ণ থাকতে পারে ধারণা করে ডাকাত দলটির টার্গেট ওই বাসা থাকলেও তারা নিচতলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস থেকেই ‘তল্লাশির’ নামে লুটপাট শুরু করে জানিয়ে ডিসি বলেন, নিচতলার অফিসের গেট ভেঙে পিয়নকে মারধর করে এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে সেখান থেকে ৪৫ হাজার ১০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়।

পরে ডাকাতরা তাকে ভয়তীতি দেখিয়ে তৃতীয় তলায় গিয়ে এস এম সোর্সিংয়ের অফিসের গেট ভেঙে ফেলে। এ সময় গেট ভাঙার শব্দ পেয়ে চতুর্থ তলায় থাকা এস এম সোর্সিংয়ের তিনজন অফিস সহকারী তৃতীয় তলায় নেমে আসেন। ডাকাতরা তখন তাদেরকেও আটক করে মারধর করে অফিসের চাবি ও বাসার চাবি দিতে বলে। পরে তারা জোর করে চাবি নিয়ে তৃতীয় তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে অফিসের ড্রয়ার ভেঙে নগদ ২২ লাখ টাকা লুট করে নেয় ও অফিসের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। ডাকাতদের আরেকটি দল চতুর্থ তলার অফিসে ঢুকে আলমারি ভেঙে নগদ ১৩ লাখ টাকা লুট করে নেয়।

মাসুদ আলম বলেন, সবশেষে তারা বাড়ির মালিক এম এ হান্নান আজাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। বাসা থেকে দেড়লাখ টাকা, স্বর্ণের কানের দুল ও চেইনসহ আনুমানিক আড়াই ভরি স্বর্ণ লুট করে নেয়। এরপর তারা মালিক এম এ হান্নানকে জোর করে নিচে নামিয়ে গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করে।

উপকমিশনার বলেন, এরইমধ্যে কেউ একজন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে খবর দিলে ধানমন্ডি থানার একটি টহল টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ডাকাত দলের লোকজন পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ডাকাত দলের সদস্যদের হাতাহাতিও হয়, এতে পুলিশের দুই সদস্য আহত হন। তখন আশেপাশে থাকা লোকজনের সহায়তায় পুলিশ চারজনকে আটক করে। ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা গাড়িতে করে পালিয়ে যায়। পরে ওই ব্যবসায়ীর ভাগ্নে তৌহিদুল ইসলামের করা একটি মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও গ্রেপ্তার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পরিপ্রেক্ষিতে রাতে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি গাড়িসহ আবদুল্লাহ ও সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। ছয় জনের বাইরে যারা আছে শিগগিরই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো বলে আশা করছি। তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে, রিমান্ডে এনে এসব তথ্য ক্রসচেক করব। যেহেতু ২৫-৩০ জনের মতো একটা টিম কাজ করেছে, তাই বাকিদের গ্রেপ্তারের সুবিধার্থে কিছু তথ্য আমরা পরে ডিসক্লোজ করতে চাচ্ছি।

ওই দলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সদস্য জড়িত কি-না অথবা রাজনৈতিক কোনো পরিচয় রয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ছয়জনকে কোর্টে পাঠানো হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারবো।

এ সময় ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ধানমন্ডিতে ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতদের প্রতিরোধ করা এবং তাদের ধরতে সহায়তা করায় পাঁচজন শ্রমিকের নাম পাওয়া গেছে। সাহসিকতার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী পাঁচ শ্রমিকের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া এই পাঁচ জনকে অক্সিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।

রাজধানীজুড়ে টহল ও তল্লাশিচৌকি ‘জোরদারের’ পরও এতো বড় একটা ডাকাত দলের ডাকাতির বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোজা ও ঈদ ঘিরে আমাদের বিস্তারিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টহল কার্যক্রম জোরদার ও তল্লাশিচৌকি স্থাপন। দুই-একটা ঘটনা যেগুলো ঘটছে সঙ্গে সঙ্গে ডিটেক্ট করছি। আমরা আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করছি, সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।