নওগাঁয় বিভিন্ন অবৈধ ইটভাটা গুড়িয়ে দিলো জেলা প্রশাসন

- আপডেট সময় : ১০:১১:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫ ২৪ বার পড়া হয়েছে
উজ্জ্বল কুমার সরকার নওগাঁ প্রতিনিধিঃ
মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক প্রথমবারের মতো নওগাঁয় চলছে অবৈধ ইটভাটা গুড়িয়ে দেওয়ার অভিযান। গত সোমবার জেলার মান্দা উপজেলায় একটি ও মঙ্গলবার জেলার রাণীনগর উপজেলায় দুটি অবৈধ ইট ভাটা গুড়িয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সঙ্গে করা হয়েছে অর্থদণ্ড ও।
জনবসতি ও আবাদি জমির আশপাশে ইটভাটা স্থাপন করা নিষিদ্ধ হলেও জেলাজুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অধিকাংশ ভাটার কোন বৈধ কাগজপত্রাদি নেই। বছরের পর বছর সরকারের বিধিনিষেধকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অবৈধ ভাবে ইট উৎপাদন করে আসছে এই ইট ভাটাগুলো। ফলে ভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে দিন যতই যাচ্ছে ততই পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে জীব-বৈচিত্র। বিগত সময়ে মাঝে মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র অবৈধ ইট ভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে অর্থদন্ডই প্রদান করা হতো কিন্তু গুড়িয়ে দেওয়া হতো না।
নওগাঁ জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে অবৈধ ইটভাটা গুড়িয়ে দেওয়ার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। গত সোমবার (১০ মার্চ) জেলার মান্দা উপজেলার সতিহাটের নীলকুঠি এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে পরিবেশগত ছাড়পত্র ও ইট পোড়ানো লাইসেন্স ব্যতীত পরিচালিত মেসার্স ভাই ভাই ব্রিকস নামক ইটভাটার চিমনী ও কিলন স্কাভেটর দিয়ে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে দেয়া হয়। আর মঙ্গলবার (১১ মার্চ) জেলার রাণীনগর উপজেলাধীন কাশিমপুর ইউনিয়নের চকমনু ও চকাদিন গ্রামে লাইসেন্স ব্যতিত ইট ভাটা পরিচালনা, ইট প্রস্তুত ও বিক্রয় করার অপরাধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে মেসার্স রাহিদ এন্টারপ্রাইজ কে ২০ হাজার টাকা ও মেসার্স রিফাত ব্রিকস কে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং স্কাভেটর দিয়ে উভয় ইট ভাটার চুল্লি ভেঙ্গে ধ্বংস করা হয় ও ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পানি দিয়ে ভাটার আগুন নিভিয়ে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাকিব বিন জামান প্রত্যয়। এছাড়াও মোবাইল কোর্টে প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পরিবেশ অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ নাজমুল হোসাইন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নওগাঁ জেলা আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের তিনটি চৌকস দল মোবাইল কোর্টে সহযোগিতা প্রদান করে।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ইট ভাটা রয়েছে ১৬২টি। গত দুইদিনে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে ৩টি। বর্তমানে সচল রয়েছে ১৫৯টি। এর মধ্যে মাত্র ২৩টি ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র রয়েছে। বাকি ১৩৬টি ইটভাটার ছাড়পত্র নেই। ফলে তারা জেলা প্রশাসনের অনুমোদনও (লাইসেন্স) পায়নি। এরপরও এসব ভাটায় থেমে নেই ইট পোড়ানো। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ ও ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ অনুযায়ী বসতি এলাকা, পাহাড়, বন ও জলাভূমির এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। কৃষিজমিতেও কোনো ইটভাটা বৈধ হিসেবে গণ্য হবে না। জেলায় সবচেয়ে বেশি ইটভাটা রয়েছে মান্দা উপজেলায়। এই উপজেলার কোন ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই।
বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সভাপতি রফিতকুল ইসলাম বলেন, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ছাড়াই নিয়ম না মেনে কৃষিজমি ও আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা এসব ভাটার কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এতে একদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে, অন্যদিকে ব্যাহত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন। জেলায় আড়াই লাখ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি রয়েছে। সমতল ভূমি হওয়ায় বর্তমানে জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ জমিই তিন ফসলি। আইনের তোয়াক্কা না করে এসব ফসলি জমিতে ইটভাটা গড়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়া বসতবাড়ির আশপাশেও ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এসব ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফসল ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও দেখা দিচ্ছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসন অবৈধ ইট ভাটা গুড়িয়ে দেওয়ার যে কার্যক্রম শুরু করেছে তা খুবই ভালো। মাঝপথে এসে কার্যক্রম বন্ধ করে না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক সারা দেশের ন্যায় নওগাঁতেও অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হয়েছে। তারই ধাবারাহিকতায় অবৈধ ইট ভাটাগুলো গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কোন পেশী শক্তিই জেলা প্রশাসনের এমন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ করতে পারবে না। আমরা চেস্টা করছি আগামী প্রজন্মের জন্য বসবাসের যোগ্য একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণের। আর সবুজে শ্যামলায় ভরা একটি বাসযোগ্য নওগাঁ গড়ে তুলতে পুরো জেলাবাসীকে ভ’মিকা রাখতে হবে। আগামীতেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ধরণের অভিযান অব্যাহত রাখা হবে বলেও জানান তিনি।