ঢাকা ০২:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হলো মেহেরপুরে অস্ট্রেলিয়ায় অপমান ও হেনস্থায় মুখ খুললেন নেহা” আমি বিনা পরিশ্রমিকে গিয়েছি” টিকটক চ্যালেঞ্জের কারণে ৭ বছরের মেয়ে কোমায় মৃত্যু বরণ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নতুন শিক্ষক সমিতির কমিটি ঘোষণা এক জরিপে বলা হয় ইসরাইল ও নেতানিয়াহুর ওপর নিষেধাজ্ঞার পক্ষে বেশিরভাগ কানাডিয়ান ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ঘোষণা করলেন ইশরাক হোসেনকে ধানমন্ডিতে র‌্যাব-ম্যাজিস্ট্রেট-ছাত্র পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৬ রোহিঙ্গাদের জনপ্রতি বরাদ্দ ১২ ডলার বাংলাদেশে পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে গৌতম আদানির প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ার সব-ই ক্বদর : ঈমানদারদের জন্য আমীরে জামায়াতের প্রার্থনা

প্রিয় ঝাড়ু

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:৩৭:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ২২ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিবেদিতা দত্ত

সুধী,

জানো তো দু’গালে চটকানো মাছ-ভাতের ঢ্যাবলা নিয়ে এক মনে ছড়া শুনে যাওয়া ছিল যেন দুই মেয়েরই জন্মসিদ্ধ অধিকার (খানিকটা সেই খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না রাজার মত) আর আমার অলিখিত কর্তব্য পাশে ছড়ার বইয়ের পাহাড় নিয়ে পদ্য আউড়ে যাওয়া। সেই তবে থেকেই মনে কটা লাইন ছবি হয়ে আছে—

মোরগগিন্নি জুতো পরে
ঘরখানা দেয় ঝাঁট।
ঘরটি হ’ল ধোওয়া-মোছা,
ঘর হ’ল ফিটফাট।
ঝাড়ুটি রইল শুয়ে
যেখানে চৌকাট। ১

—মনে একটা খটকা ছিলই মোরগ কেন গিন্নি হল। সে খটকা নাহয় থাক, কিন্তু তোমার কথা ভেবে কষ্ট হত। তুমি না হলে ঘর ধোওয়া-মোছা, ফিটফাট কিছুই হত না, সেই তুমিই কেন চৌকাটে শোবে?

যবে থেকে মানুষ সভ্য হয়েছে, দেয়ালে এঁকে তার গুহা ঘর সাজিয়েছে, সেই তখন থেকেই তুমি সঙ্গের সাথী—হয়ত তখন গাছের ডালের ঝাড়ু ছিলে, তারপর তুমি হলে তালপাতার। ফুলঝাড়ুর বেশেও তোমায় দেখি, তার সঙ্গে নতুন সংযোজন প্ল্যাস্টিক আর ফাইবারের তুমি। কিন্তু তুমি তো সেই তুমি-ই তাই না!

শুধু ছোটবেলার সোভিয়েত ছড়ায় নয়, কবিগুরুর ‘সহজ পাঠ’-এও তুমি আছ— মঙ্গলবার জঙ্গল সাফ করার দিন। আর আছ সেই বইতেই অমর শিল্পী নন্দলাল বসুর ছবিতে। আবার এই হালে মঙ্গলবারেই যত অন্যায় অবিচার ধুয়ে-মুছে নির্মল করতে তুমিই প্রতীকী হয়ে এসেছ।

জগন্নাথ প্রভুর পথ তুমি ঝাঁট না দিলে তাঁর রথ যাবেই না, আর ঝাঁট দেবেন স্বয়ং দেশের রাজা। ইদানীং পরিবেশদূষণ মুক্ত করার অভিযানে পথের জঞ্জালও ভ্যাটে তুলছ তুমি। তাই চৌকাঠ বোধহয় তোমার স্থান নয়।

আমরা তোমায় দেখে শিখছি কিছুটা, (চকোলেট, বান রুটি, আলু চিপ্স-এর প্যাকেট ফেলছি ভ্যাটে) আবার শিখছিও না। সেই পান মশলার ছেঁড়া চকচকে মোড়ক এদিক-ওদিক পড়ে আছে, মশলা মুখে ফেলে পথও থুতুময় করছি—জানি না তোমায় দেখে পুরোপুরি কবে শিখব।

এতক্ষণ যেন বড় ভাবগম্ভীর কথাবার্তা হয়ে গেল, তুমিও কেমন ভ্যাবাচাকা খেয়ে যাচ্ছ এর মধ্যেই। চলো এবার একটু হাল্কা কথায় আসি। খেয়াল করেছ কি দেশে ঘরে পথে ঘাটে অসভ্য ইংগিত করা পুরুষকে পুকুরঘাটে বাসন মাজতে রত বা স্নানে ব্যস্ত মায়েরা ঝটিতি ঘুরে দাঁড়িয়ে বলেন ‘মুখে ঝাঁটা তোর, ড্যাকরা মিনসে’! বা ‘তবেরে, বাড়িতে মা-মাসি নেই বুঝি? মারব এমন খ্যাংরার বাড়ি যে এদিক আর মাড়াবি না’?

আজ তোমায় শুধু ঝাড়ু বলে ডাকতে ইচ্ছে করছে না, সমার্থক শব্দ দেখছি সমার্থশব্দকোষে—উহনী, সম্মার্জনী; কিন্তু সবই যেন বড় পোশাকি। ভাবছি নামের আগে যদি শ্রী বা মহোদয় জুড়ে দিই কেমন হয়? কিন্তু আমি জানি তুমি লজ্জায় মুখ লুকোবে, তুমি যে বড় সাদাসিধে! তাই যেমন আছ যে নামেই ডাকি তুমি আমাদের পরম সুহৃদ, প্রাণের অতি কাছের বস্তু।

বস্তু? কি জানি— সারা বিশ্ব নির্মল করে রাখ তুমি, তোমার মধ্যে সুপ্ত কোনো প্রাণশক্তি থাকা অসম্ভব নয়। হয়ত কেন, নিশ্চয় আছে আমরাই বুঝি না। অন্তত আমরা কল্পনা করতে ভালোবাসি তোমার কিছু জাদুকরী গুণ আছে, তাই তুমি বিদেশী রূপকথায় হয়েছ ‘উইচেস ব্রুমস্টিক’ আর বিখ্যাত ‘হ্যারি পটার’-এ তো ব্রুমস্টিক বাহনের ছড়াছড়ি। এও যেন প্রাণশক্তিরই অন্য এক রূপকে স্বীকার করা। তবে ঘরোয়া হয়েও তুমি বিশেষ, তুমি নমস্য। ভালো থেকো।

ইতি তোমারই এক অনুরাগী

স্বীকৃতিঃ – ১, লৌকিক রুশ ছড়া – কুকুর, হুলো বেড়াল, মাসি আর মোরগ গিন্নি।

অলংকরণ (Artwork) : লেখক, ও রুশ বই থেকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

প্রিয় ঝাড়ু

আপডেট সময় : ০৭:৩৭:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নিবেদিতা দত্ত

সুধী,

জানো তো দু’গালে চটকানো মাছ-ভাতের ঢ্যাবলা নিয়ে এক মনে ছড়া শুনে যাওয়া ছিল যেন দুই মেয়েরই জন্মসিদ্ধ অধিকার (খানিকটা সেই খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না রাজার মত) আর আমার অলিখিত কর্তব্য পাশে ছড়ার বইয়ের পাহাড় নিয়ে পদ্য আউড়ে যাওয়া। সেই তবে থেকেই মনে কটা লাইন ছবি হয়ে আছে—

মোরগগিন্নি জুতো পরে
ঘরখানা দেয় ঝাঁট।
ঘরটি হ’ল ধোওয়া-মোছা,
ঘর হ’ল ফিটফাট।
ঝাড়ুটি রইল শুয়ে
যেখানে চৌকাট। ১

—মনে একটা খটকা ছিলই মোরগ কেন গিন্নি হল। সে খটকা নাহয় থাক, কিন্তু তোমার কথা ভেবে কষ্ট হত। তুমি না হলে ঘর ধোওয়া-মোছা, ফিটফাট কিছুই হত না, সেই তুমিই কেন চৌকাটে শোবে?

যবে থেকে মানুষ সভ্য হয়েছে, দেয়ালে এঁকে তার গুহা ঘর সাজিয়েছে, সেই তখন থেকেই তুমি সঙ্গের সাথী—হয়ত তখন গাছের ডালের ঝাড়ু ছিলে, তারপর তুমি হলে তালপাতার। ফুলঝাড়ুর বেশেও তোমায় দেখি, তার সঙ্গে নতুন সংযোজন প্ল্যাস্টিক আর ফাইবারের তুমি। কিন্তু তুমি তো সেই তুমি-ই তাই না!

শুধু ছোটবেলার সোভিয়েত ছড়ায় নয়, কবিগুরুর ‘সহজ পাঠ’-এও তুমি আছ— মঙ্গলবার জঙ্গল সাফ করার দিন। আর আছ সেই বইতেই অমর শিল্পী নন্দলাল বসুর ছবিতে। আবার এই হালে মঙ্গলবারেই যত অন্যায় অবিচার ধুয়ে-মুছে নির্মল করতে তুমিই প্রতীকী হয়ে এসেছ।

জগন্নাথ প্রভুর পথ তুমি ঝাঁট না দিলে তাঁর রথ যাবেই না, আর ঝাঁট দেবেন স্বয়ং দেশের রাজা। ইদানীং পরিবেশদূষণ মুক্ত করার অভিযানে পথের জঞ্জালও ভ্যাটে তুলছ তুমি। তাই চৌকাঠ বোধহয় তোমার স্থান নয়।

আমরা তোমায় দেখে শিখছি কিছুটা, (চকোলেট, বান রুটি, আলু চিপ্স-এর প্যাকেট ফেলছি ভ্যাটে) আবার শিখছিও না। সেই পান মশলার ছেঁড়া চকচকে মোড়ক এদিক-ওদিক পড়ে আছে, মশলা মুখে ফেলে পথও থুতুময় করছি—জানি না তোমায় দেখে পুরোপুরি কবে শিখব।

এতক্ষণ যেন বড় ভাবগম্ভীর কথাবার্তা হয়ে গেল, তুমিও কেমন ভ্যাবাচাকা খেয়ে যাচ্ছ এর মধ্যেই। চলো এবার একটু হাল্কা কথায় আসি। খেয়াল করেছ কি দেশে ঘরে পথে ঘাটে অসভ্য ইংগিত করা পুরুষকে পুকুরঘাটে বাসন মাজতে রত বা স্নানে ব্যস্ত মায়েরা ঝটিতি ঘুরে দাঁড়িয়ে বলেন ‘মুখে ঝাঁটা তোর, ড্যাকরা মিনসে’! বা ‘তবেরে, বাড়িতে মা-মাসি নেই বুঝি? মারব এমন খ্যাংরার বাড়ি যে এদিক আর মাড়াবি না’?

আজ তোমায় শুধু ঝাড়ু বলে ডাকতে ইচ্ছে করছে না, সমার্থক শব্দ দেখছি সমার্থশব্দকোষে—উহনী, সম্মার্জনী; কিন্তু সবই যেন বড় পোশাকি। ভাবছি নামের আগে যদি শ্রী বা মহোদয় জুড়ে দিই কেমন হয়? কিন্তু আমি জানি তুমি লজ্জায় মুখ লুকোবে, তুমি যে বড় সাদাসিধে! তাই যেমন আছ যে নামেই ডাকি তুমি আমাদের পরম সুহৃদ, প্রাণের অতি কাছের বস্তু।

বস্তু? কি জানি— সারা বিশ্ব নির্মল করে রাখ তুমি, তোমার মধ্যে সুপ্ত কোনো প্রাণশক্তি থাকা অসম্ভব নয়। হয়ত কেন, নিশ্চয় আছে আমরাই বুঝি না। অন্তত আমরা কল্পনা করতে ভালোবাসি তোমার কিছু জাদুকরী গুণ আছে, তাই তুমি বিদেশী রূপকথায় হয়েছ ‘উইচেস ব্রুমস্টিক’ আর বিখ্যাত ‘হ্যারি পটার’-এ তো ব্রুমস্টিক বাহনের ছড়াছড়ি। এও যেন প্রাণশক্তিরই অন্য এক রূপকে স্বীকার করা। তবে ঘরোয়া হয়েও তুমি বিশেষ, তুমি নমস্য। ভালো থেকো।

ইতি তোমারই এক অনুরাগী

স্বীকৃতিঃ – ১, লৌকিক রুশ ছড়া – কুকুর, হুলো বেড়াল, মাসি আর মোরগ গিন্নি।

অলংকরণ (Artwork) : লেখক, ও রুশ বই থেকে।