ঢাকাসহ সারাদেশে সমাবেশ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি কোনো রকমের অবমাননা ও অসম্মান হতে দেবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন দেশের সরকারি কর্মকর্তারা।
গতকাল শনিবার ‘জাতির পিতার সম্মান, রাখব মোরা অম্লান’- এমন স্লোগানে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে কেন্দ্রীয়ভাবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সরকারি কর্মকর্তা ফোরামের ব্যানারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। একইসঙ্গে সারা দেশের জেলা-উপজেলায়ও সমাবেশ করেন সরকারি কর্মকর্তারা। বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা সমাবেশে যোগ দেন। উপস্থিত ছিলেন কয়েক হাজার কর্মকর্তা।
ঢাকার সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের সভাপতি ও খাদ্যসচিব মোছাম্মাৎ নাজমানারা খানুম, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের পক্ষে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব বিকাশ কুমার সাহা, বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের আ ম সেলিম রেজা, পররাষ্ট্র ক্যাডারের সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকার এবং আনসার ক্যাডারের শামসুল আলম প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, আমরা আমাদের জীবদ্দশায় জাতির পিতার প্রতি কোনো রকমের অন্যায় ও অসম্মান হতে দেব না, এটাই হল আজকের অঙ্গীকার। আমরা জনগণের সেবক। সংবিধানে জাতির পিতা রয়েছেন। আমাদের দায়িত্ব সংবিধানকে সমুন্নত রাখা। আমরা যদি থাকি, তাহলে জাতির পিতার অবমূল্যায়ন হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা সমগ্র জাতির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে এসেছি, এ রকম কোনো ঘটনা হতে দেব না।
মুখ্য সচিব এখন থেকে সবাইকে জয় বাংলা শব্দটি বলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জয়বাংলা শব্দটি মুক্তিযুদ্ধের। এখন থেকে শব্দটি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনে সরকারের কাছে অনুমতি চাওয়া হবে। এ সময় তিনি জয়বাংলা স্লোগান দিলে উপস্থিত কর্মকর্তারাও জয় বাংলা স্লোগান দেন।
ঢাকার সমাবেশে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবিধানিকভাবে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃত। বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এখনও এই মহান নেতাকে অস্বীকার করে যাচ্ছে। তারা হুংকার দিয়ে যাচ্ছে যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ওপর কোনো রকমের আঘাত, কোনো অপমান মেনে নেয়া হবে না, সহ্য করা হবে না।
সংবিধান ও রাষ্ট্রের ওপর আঘাত কঠোরভাবে মোকাবেলার ঘোষণা দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সংবিধানের অংশ। বঙ্গবন্ধু দেশ ও পতাকা দিয়েছেন, মানচিত্র দিয়েছেন। তার ওপর হামলা হল সংবিধান ও রাষ্ট্রের ওপর হামলা, জনগণের ওপর হামলা। রাষ্ট্র অবশ্যই তার আইন-বিধির মাধ্যমে এটি কঠোর হস্তে মোকাবেলা করবে।
রংপুর অফিস : দেশের বিভিন্ন স্থানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ভাস্কর্য দুস্কৃতকারীদের মাধ্যমে বিকৃত করার প্রতিবাদে ও সংবিধানের ৪ক অনুচ্ছেদ সমুন্নত রাখা এবং “জাতির পিতার সম্মান-রাখবো মোরা অম্লান” এ স্লোগানকে সামনে রেখে গতকাল শনিবার রংপুর টাউন হলে প্রতিবাদ সভা করেছেন বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আসিব আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ জাকির হোসেন, বাংলাদেশ পুলিশ রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল আলীম মাহমুদ, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহেনূর, কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক খন্দকার আব্দুল ওয়াহেদ, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ মোহাম্মদ আহাদ আলী ও উপ-পরিচালক ডাক্তার জাকির হোসেন, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুস সালাম, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মধুসুদন রায়, রংপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাক্তার এ.কে.এম নুরুন্নবী লাইজু প্রমুখ।
ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার প্রতিবাদে রংপুর চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র উদ্যোগে গতকাল শনিবার সকালে রংপুর প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। চেম্বার পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে রংপুরের ব্যবসায়ীগণ এ কর্মসূচী পালন করেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর অবমাননার প্রতিবাদে এফবিসিসিআই এর উদ্যোগে দেশব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রংপুর চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে রংপুরের বিভিন্নস্তরের ব্যবসায়ীগণ রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে এই মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। এতে বক্তব্য রাখেন রংপুর চেম্বারের সহ-সভাপতি মনজুর আহমেদ আজাদ, পরিচালকবৃন্দের মধ্যে পার্থ বোস, রিয়াজ শহিদ শোভন, জুলফিকার আজিজ খাঁন ভুট্টু, আকবর আলী, খেমচাঁদ সোমানী রবি, রংপুর চেম্বারের সচিব রেজা-উন-নূর প্রমুখ।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, একটি অশুভ গোষ্ঠী এবং মূলত স্বাধীনতা বিরোধী এবং একাত্তরের পরাজিত শক্তির প্রেতাত্মা তারা বাংলাদেশের উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করছে এবং পেছন দরোজা দিয়ে ক্ষমতা দখলের জন্য লন্ডন ও দুবাইয়ে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার সাথে গোপন বৈঠক করছে। হঠাৎ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের মধ্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে তৎপর ঐ অপশক্তিকেই মদদ দিচ্ছে বিএনপি। রাজনৈতিক ইস্যু বিহীন বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জনগুলোকে জলাঞ্জলি দিয়ে পাকিস্তানী কায়দায় দেশকে পরিচালিত করতে চেয়েছে। কিন্তু তারা সফল হয়নি এবং এবারও সফল হবেনা। চান্দগাঁও থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য ভাংচুরের অপচেষ্টা ও জঙ্গী বিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। তিনি আরো বলেন, যারা দেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল তারা ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। একই পরিণতি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আসন্ন চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ধর্ম ব্যবসায়ীরা কখনো ধার্মিক নন। লালদীঘির পানি যেমন লাল নয়, জামাত ও হেফাজত ইসলাম ও পরিপূর্ণ ইসলামী নয়। গণবিরোধীরা কুমতলব হাসিলে ৭১ এর মতই হত্যা-ধর্ষণ ও লুন্ঠনের জন্য মাঠে নেমে মধ্যযুগীয় নারকীয় জাহেলিয়াত কায়েম করতে চায়। তাই নতুন প্রজন্মের হাতে এদের বিরুদ্ধে লড়াই একাত্তরের হাতিয়ার সমর্পণ করার সময় এসেছে। বহাদ্দারহাট চত্বরে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ও জঙ্গী বিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ ও ৬নং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম ফারুক, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, বন পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, ধর্ম সম্পাদক হাজী জহুর আহমদ, সাংষ্কৃতিক সম্পাদক আবু তাহের, কার্যনির্বাহী সদস্য মহব্বত আলী খান, ড. নিছার উদ্দীন আহমেদ মঞ্জু, থানা আওয়ামী লীগের আনসারুল হক, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নাজিম উদ্দীন চৌধুরী, আমিনুল হক রঞ্জু, মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, আশরাফুল আলম, এডভোকেট আইয়ুব খান, নিজাম উদ্দীন নিজু, জসিম উদ্দীন, সাইফুদ্দীন খালেদ সাইফু, খালেদ হোসেন খান মাসুক প্রমুখ। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
কুমিল্লা অফিস : ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। শনিবার সকালে নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদ সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। মানববন্ধনে উপজেলার সকল দপ্তর আলাদা আলাদা ব্যানার নিয়ে অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সামছু উদ্দিন কালু, মেয়র আব্দুল মালেক, ভাইস চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ভূঁইয়া, উপজেলা নির্বাহী অফিসার লামইয়া সাইফুল, সহকারী কমিশনার ভূমি মিল্টন বিশ্বাস, কৃষি অফিসার জাহিদুল ইসলাম, প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: দেবদাস দেব, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাছির উদ্দিন, নাঙ্গলকোট থানা অফিসার ইনচার্জ বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী, ঢালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হাছান ভূঁইয়া বাছির, বাঙ্গড্ডা ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান মজুমদার, আদ্রা উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সুমন প্রমুখ।
নেত্রকোনা সংবাদদাতা : গতকাল নেত্রকোনা পাবলিক হলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতির সম্মান সমুন্নত রাখার লক্ষে নেত্রকোনা জেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দকে সাথে নিয়ে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসন এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজী মোঃ আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন শাহজাহান কবির, বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ; জনাব মোহাম্মদ ইফিতেখার বিন আজিজ, বিজ্ঞ বিচারক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল, নেত্রকোনা; মোঃ আকবর আলী মুন্সী, পুলিশ সুপার, ডাঃ মোঃ সেলিম মিয়া, সিভিল সার্জন; উপাধ্যক্ষ, নেত্রকোনা সরকারি কলেজ; অধ্যক্ষ, নেত্রকোনা সরকারি মহিলা কলেজ, উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিবদপ্তর; উপপরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর; জেলার সকল নির্বাহী প্রকৌশলীবৃন্দ সহ জেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তাবৃন্দ ও কর্মচারীবৃন্দ।