মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়াতে কৃষি যন্ত্রের (কম্বাইন হারভেস্টার) মেশিন বিতরণে অনিয়ম,কৃষি কর্মকর্তাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা গাজীপুর সিটির ৪১ নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলরের বিজয় মিছিল অনুষ্ঠিত দিনাজপুর হিলিতে সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিডেট এর শাখার উদ্বোধন নৌকায় মনোনয়ন প্রত্যাশী-হেলালের মতবিনিময় সভা শেরপুরে লছমনপুর ও চরপক্ষিমারী ইউনিয়নে উন্মুক্ত বাজেট ঘোষণা দুপচাঁচিয়ায় ২ শিশু কন্যাকে ধর্ষণের চেষ্টায় গ্রেপ্তার ২ দুপচাঁচিয়ায় ২ শিশু কন্যাকে ধর্ষণের চেষ্টায় গ্রেপ্তার ২ মধুপুর-ধনবাড়ি আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী লিলি সরকার বঙ্গবন্ধু’র জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে চট্রগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মধুপুরে অন-লাইন ব্যবসার আড়ালে পর্ণোগ্রাফি ২ জনের জেল জরিমানা ইরামতি নদীর পানি নিষ্কাশন ও পরিচ্ছন্ন অভিযান নওগাঁ র‌্যাবের অভিযানে ২ হাজার ১শ’ ৬৮ লিটার বাংলা মদসহ ২ জন গ্রেফতার!!!! বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত মাগুরায় প্রতিপক্ষের হামলায় আঃলীগ নেতা আহত। রাঙ্গাবালীতে সৎমায়ের সাথে অভিমান করে ছেলের আত্মহত্যার চেষ্টা তালোড়া পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের যৌথ কর্মীসভা ঝিনাইগাতীতে ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠিদের নিয়ে নিরাপদ মাতৃত্ব বিষয়ে কমিউনিটি সেশন অনুষ্ঠিত শেরপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী নাছরিনের সংবাদ সম্মেলন প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে সরিষাবাড়ীতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মানববন্ধন নওগাঁয় রাতের আঁধারে ধানের পালায় আগুন লাগার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টাঃ

রাজবংশী জাতিগোষ্ঠী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নয়, বাঙ্গালী

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২১
  • ২৮৩ বার পঠিত
  • বাংলাদেশের রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চল এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলার সমতল অঞ্চলে, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিন দিনাজপুর ও সালদা জেলার কিছু অংশে বাংলা ভাষাভাষির একটি জাতিগোষ্ঠী বসবাস করেন। এই জাতি গোষ্ঠীই রাজবংশী। আসামের গোয়ালাপাড়া, ধুবড়ি, মেঘালয়, বিহার ও নেপালের ঝাপা জেলাতেও এই ভাষার জাতিগোষ্ঠী বসবাস করেন। ঐতিহাসিকভাবে জানা যায়, ভারতের কোচবিহার অঞ্চল থেকে আগত মঙ্গোলীয় নৃ-গোষ্ঠী কোচ জাতির অংশ। এদের মধ্যে প্রোটো-অষ্ট্রালয়েডদের মিশ্রন পরিলক্ষিত হয়। এদের দৈহিক ও জীবন যাপনের ধারা আদি কোচ থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছে। ষোল শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কোচ রাজা হাজোরের বংশধরদের নেতা বিশুসিংহ তার গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যদের সাথে নিয়ে আদিধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু ধর্ম গ্রহন করেন। আর কোচ রাজবংশের সন্তান হিসেবে এরাই পরবতীর্তে রাজবংশী হিসেবে পরিচিতি পান।

    অন্যদিকে রাজবংশীদের একটি অংশ ইসলাম ধর্মগ্রহন করেন এবং “কেওট রাজবংশী” নামে পরিচিতি পান। তবে রাজবংশীরা প্রধাণত শিবভক্ত ও বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী। রাজবংশী জাতি পাহাড়, নদী, বন ও মাটিকেও উপাসনা করেন। এদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবগুলো হলো : পাঁচকন্যা পূজা, বিষহরি পূজা, বেষমা পূজা, খরা-অনাবৃষ্টি কাটাতে হুদুমা পূজা, ব্যাঙ্গের বিয়ে প্রভৃতি। হিন্দু ধর্মাবলম্বী রাজবংশীরা নিজেদেরকে হিন্দু পৌরনিক কাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত করে নিজেদের অভিজাত শ্রেণীর অন্তভূক্ত করার চেষ্টা করেন।

    রাজবংশী জাতিগোষ্ঠীর এই পরিচয় বহনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন মত পরিলক্ষিত হয়। এর ফলে এই জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে কয়েকটি গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছে। যেমন: শিববংশী, পলিয়া, দেশী, জলপাইগুড়ি রাজবংশী, পাহাড়ি রাজবংশী, তোঙ্গিয়া রাজবংশী, খোপ্রিয়া ও গোব্রিয়া। রাজবংশীরা দেখতে খর্বকায, লম্বা, চ্যাপ্টা ও তীক্ষ নাক, উচু চোয়াল বিশিষ্ট এক মিশ্র জনগোষ্ঠী। বাঙ্গালীদের ন্যায় রাজবংশীদের সংকর জাতি বললে অত্যুক্তি হবে না। এদের প্রধান পেশা কৃষি। এদের মধ্যে মৎসজীবিও রয়েছে। ইসলাম ও হিন্দু র্ধম গ্রহনের পূর্বে রাজবংশীদের সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক, বর্তমানে তা পিতৃতান্ত্রিক প্রথা অনুসরন করছে।

    আদি রাজবংশী (পাহাড়ি) পুরুষরা কোমরে নেংটি এবং মহিলারা কোমরে লম্বা ঝুলের কাপড় ব্যবহার করতো এবং বক্ষ বন্ধনী ব্যবহার করতো। এই জাতিগোষ্ঠী সমতলে নেমে আসার পর থেকে বাঙ্গালীদর প্রভাবে ধুতি ও শাড়ি পড়া শুরু করেন। তবে এক সময় এই রাজবংশী নারীরা হাতে বোনা মোটা ধরনের চার হাত দৈঘ্য ও আড়াই হাত প্রস্থের ’ফতা’ নামের বিশেষ পোশাক পরিধানে করতো। এই ’ফতা’ নামের পোশাক বহু বর্ণ রঞ্জিত থাকতো। এই রাজবংশী মেয়েরা কাঠ ও মাটির গহনা ব্যবহার করতো। বাঙ্গালীদর সানিধ্যে আসার পর রাজবংশী মেয়েরা ধাতব গহনা ব্যবহার শুরু করেন।

    রাজবংশী জাতিগোষ্ঠীর জীবনাচরনের অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে আবার বিলুপ্ত হয়েছে। যেমন রাজবংশীদের ভাষা প্রায় বিলুপ্ত। ভাষার বিচারে এরা বোড়ো ভাষা গোত্রভূক্ত হলেও বর্তমানে তা বিলুপ্ত। এই জাতিগোষ্ঠীর সাহিত্যের নিদর্শন কোন লিপিতেই রচিত হয়নি। এই বোড়ো ভাষার শব্দসমূহে বোড়ো ভাষার অপভ্রংশ শব্দ পরিলক্ষিত হয়। এদের ভাষায় বাংলা ক্রিয়াপদ ও বিশেষ্য পদের শেষে ও মাঝে ‘ঙ’ ‘ং’ এবং ‘ম’ এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। আর এই শব্দগুলো রাজবংশীদের কথ্য ভাষায় প্রচলিত।

    এই রাজবংশী জাতিগোষ্ঠী আনন্দ প্রিয় । রাজবংশীরা পূজা পার্বনে বিভিন্ন ধরনের নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করেন। তাদের এই নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন আদিবাসী সূলভ। সমতলে আসার আগে রাজবংশীরা তাদের গানে ধামামা ও বাঁশী বেশি ব্যবহার করতো। তবে বর্তমানে তাদের নৃত্য ও সংগীতে দোতারা ও সারিন্দা ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।

    রাজবংশীদের প্রতিষ্ঠা লাভের আন্দোলন বেশ পুরানো । আর এই রাজবংশী সমাজের প্রতিষ্ঠা লাভের ইতিহাসে স্মরণীয় ব্যক্তি হলেন ‘রায় সাহেব’ ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা। তিনি সক্রিয় সভা গঠন করে তৎকালীন সমাজের বর্নবাদী বৈষম্যের বিরূদ্ধে আন্দোলন করেন এবং রাজবংশী জাতিকে হিন্দুসমাজে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার এই অবদানের জন্য তাকে রাজবংশী সম্প্রদায়ের জনক বলে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশে রাজবংশীদের ক্ষুদ্র নৃতাত্তিক গোষ্ঠীর তালিকায় অন্তভূক্ত করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ রাজবংশী ডেভলাপমেন্ট ফাউন্ডেশনের উদ্দ্যেগে আয়োজিত মানববন্ধনে সমগ্র রাজবংশী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র নৃতাত্তিক স্বীকৃতির বিরোধিতা করেন। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এই রাজবংশী জাতিগোষ্ঠীকে বাঙ্গালী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন।

    মনিজা ইসলাম, গবেষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Developed By cinn24.com
themesbazar24752150