ঢাকা ০৯:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
রাষ্ট্রপতির আদেশ ক্রমে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছ ধরার উপর ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা ঢাকায় জাতীয় পার্টির ইফতার মাহফিলে হামলা, বেশ কয়েকজন আহত নওগাঁ বগুড়া-ঢাকা আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার সবধরনের বাস চলাচল বন্ধ প্রধান উপদেষ্টার সাথে সেনাপ্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ দুপচাঁচিয়ার কইলে ১৬ প্রহর ব্যাপী রাধা গোবিন্দের পদাবলী লীলা কীর্তন শুরু রংপুরের মিঠাপুকুরে বোরকা পরে পালানোর সময় ‘ধর্ষক’কে ধরে গণপিটুনি জাপানি নায়িকা পর্নোগ্রাফি ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন বাংলাদেশ প্রেসক্লাব দুপচাঁচিয়া উপজেলা কমিটির ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত দুপচাঁচিয়া উপজেলা প্রেসক্লাবের ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত জয়পুরহাটে বালু খেকোদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ ছাত্রদলের মানববন্ধন

শীতলাতলায় শুক্লপক্ষে মাঠজুড়ে রান্না উৎসব

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:৩৯:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫ ১২ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছবি- সংগৃহীত

ডেস্ক রিপোর্ট: চুঁচুড়া: গোটা গ্রামজুড়ে অরন্ধন।
তবে উপবাস নয়। এ রীতি শতাব্দী প্রাচীন। ফাল্গুনের শুক্লপক্ষের মঙ্গলবার গোটা গ্রাম শীতলাতলায় উনুন জ্বালিয়ে বসে। সেখানেই রান্না এবং খাওয়া। চার মার্চ ছিল শুক্লপক্ষ। ফলে চুঁচুড়ার কোদালিয়া এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ সিমলা গ্রামের সব বাসিন্দা ভিড় জমিয়েছিলেন শীতলাতলায়।
এই অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার মানুষের ভিড় হয়। হাজার হাজার উনুন জ্বলে। অনেকের বাড়ি এ সময় আত্মীয়রা আসেন উৎসব উপলক্ষ্যে। সবাই মিলে চলে আসেন রান্না-খাওয়ার অনুষ্ঠানে। মঙ্গলবার বিরাট মিলনমেলা হয়ে উঠেছিল দক্ষিণ সিমলার শীতলাতলা। একদিকে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যকে অনুসরণ। অন্যদিকে বাংলার স্থানীয় উৎসব পালন। জমজমাট ভিড়ে উদযাপিত দু’টি ধারাই।
হুগলি বা বাংলার অন্যত্র রান্নার উৎসব কম হয় না। শুধুমাত্র হুগলিতেই একাধিক রকমের রান্না উৎসব পালন হয়। কিন্তু আয়োজনে, আচারে সে সব উৎসব থেকে ভিন্ন দক্ষিণ সিমলার এই রান্না উৎসব। সেই লোকাচারে বুঁদ হয়ে থাকে আবালবৃদ্ধ। মঙ্গলবার রান্না উৎসবের মাঠে উপস্থিত ছিলেন ৭০ বছরের ললিতা ঘোষ। তিনি বলেন, ‘বহু বছর ধরে এই প্রথা বা লোকাচার চলে আসছে। শতবর্ষ পেরিয়ে গিয়েছে। আমরা একদিনের জন্য গোটা গ্রাম মিলিত হই। এই মেলামেশার একটা আনন্দ আছে।’ শীতলাতলায় রান্নার আয়োজনে ব্যস্ত ছিলেন বছর বাইশের মণিরা কোলে। তিনি বলেন, ‘এই উৎসবের একটি অদ্ভুত মজা আছে। সারা বছর পৃথক হাঁড়ি হলেও এক পরিবারের সব ভাই পরিবার নিয়ে এই একদিন একত্রে রান্না করেন। পুজো আছে, লোককথা আছে। কিন্তু সেসবের বাইরেও যে মিলনের উৎসব, সেই প্রথাকে আমরা আঁকড়ে ধরে আছি। আমিও চাই এই প্রথা বা লোকাচার যাই হোক, তা চলতেই থাকুক।’ এদিন এসেছিলেন কোদালিয়া-১ এর প্রধান তথা স্থানীয় বাসিন্দা সুকান্ত ঘোষ। তিনি বলেন, ‘লোককথাকে ধরেই লোকাচার তৈরি হয়। ছোটবেলায় বাবা, দাদুদের সঙ্গে আসতাম। এখন নিজে পরিবার নিয়ে আসি। প্রায় ১০৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে রান্না উৎসব দক্ষিণ সিমলায় চলে আসছে। উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে লোককথা, আছে প্রবাদ ও আচারের কড়াকড়ি। দক্ষিণ সিমলার রান্না উৎসবে আমিষ তোলা বারণ।’ শীতলা মন্দিরের পুরোহিত তাপস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘স্বপ্নাদেশে বসন্ত রোগ থেকে মুক্তি পেতে এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল। আজও তা স্থানীয় মানুষ বুকে করে ধরে রেখেছেন।’ মরশুমি রোগ থেকে মুক্তির জন্য শীতলা, ষষ্ঠীর মতো লৌকিকদেবীর পুজো হুগলিতে চালু হয়েছিল। বস্তুত সেই ধারারই অনুসরণ দেখা যায় দক্ষিণ সিমলার সমবেত রান্না উৎসবে। কালের গতিকে যা হয়ে উঠেছে মানুষের মিলনের উৎসব, এক ভিন্নধারার বনভোজন। বারো মাসে তের পার্বণের বঙ্গে যা এনেছে বাড়তি আমেজ। শুধু বইয়ে পড়া রান্না উৎসব দেখবেন বলেই ভিন গাঁ থেকে এসেছিলেন মণিমালা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘বাংলার লোকাচারও যে কতটা মিষ্টি তা এদিন বুঝেছি।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

শীতলাতলায় শুক্লপক্ষে মাঠজুড়ে রান্না উৎসব

আপডেট সময় : ০৪:৩৯:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫

ছবি- সংগৃহীত

ডেস্ক রিপোর্ট: চুঁচুড়া: গোটা গ্রামজুড়ে অরন্ধন।
তবে উপবাস নয়। এ রীতি শতাব্দী প্রাচীন। ফাল্গুনের শুক্লপক্ষের মঙ্গলবার গোটা গ্রাম শীতলাতলায় উনুন জ্বালিয়ে বসে। সেখানেই রান্না এবং খাওয়া। চার মার্চ ছিল শুক্লপক্ষ। ফলে চুঁচুড়ার কোদালিয়া এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ সিমলা গ্রামের সব বাসিন্দা ভিড় জমিয়েছিলেন শীতলাতলায়।
এই অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার মানুষের ভিড় হয়। হাজার হাজার উনুন জ্বলে। অনেকের বাড়ি এ সময় আত্মীয়রা আসেন উৎসব উপলক্ষ্যে। সবাই মিলে চলে আসেন রান্না-খাওয়ার অনুষ্ঠানে। মঙ্গলবার বিরাট মিলনমেলা হয়ে উঠেছিল দক্ষিণ সিমলার শীতলাতলা। একদিকে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যকে অনুসরণ। অন্যদিকে বাংলার স্থানীয় উৎসব পালন। জমজমাট ভিড়ে উদযাপিত দু’টি ধারাই।
হুগলি বা বাংলার অন্যত্র রান্নার উৎসব কম হয় না। শুধুমাত্র হুগলিতেই একাধিক রকমের রান্না উৎসব পালন হয়। কিন্তু আয়োজনে, আচারে সে সব উৎসব থেকে ভিন্ন দক্ষিণ সিমলার এই রান্না উৎসব। সেই লোকাচারে বুঁদ হয়ে থাকে আবালবৃদ্ধ। মঙ্গলবার রান্না উৎসবের মাঠে উপস্থিত ছিলেন ৭০ বছরের ললিতা ঘোষ। তিনি বলেন, ‘বহু বছর ধরে এই প্রথা বা লোকাচার চলে আসছে। শতবর্ষ পেরিয়ে গিয়েছে। আমরা একদিনের জন্য গোটা গ্রাম মিলিত হই। এই মেলামেশার একটা আনন্দ আছে।’ শীতলাতলায় রান্নার আয়োজনে ব্যস্ত ছিলেন বছর বাইশের মণিরা কোলে। তিনি বলেন, ‘এই উৎসবের একটি অদ্ভুত মজা আছে। সারা বছর পৃথক হাঁড়ি হলেও এক পরিবারের সব ভাই পরিবার নিয়ে এই একদিন একত্রে রান্না করেন। পুজো আছে, লোককথা আছে। কিন্তু সেসবের বাইরেও যে মিলনের উৎসব, সেই প্রথাকে আমরা আঁকড়ে ধরে আছি। আমিও চাই এই প্রথা বা লোকাচার যাই হোক, তা চলতেই থাকুক।’ এদিন এসেছিলেন কোদালিয়া-১ এর প্রধান তথা স্থানীয় বাসিন্দা সুকান্ত ঘোষ। তিনি বলেন, ‘লোককথাকে ধরেই লোকাচার তৈরি হয়। ছোটবেলায় বাবা, দাদুদের সঙ্গে আসতাম। এখন নিজে পরিবার নিয়ে আসি। প্রায় ১০৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে রান্না উৎসব দক্ষিণ সিমলায় চলে আসছে। উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে লোককথা, আছে প্রবাদ ও আচারের কড়াকড়ি। দক্ষিণ সিমলার রান্না উৎসবে আমিষ তোলা বারণ।’ শীতলা মন্দিরের পুরোহিত তাপস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘স্বপ্নাদেশে বসন্ত রোগ থেকে মুক্তি পেতে এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল। আজও তা স্থানীয় মানুষ বুকে করে ধরে রেখেছেন।’ মরশুমি রোগ থেকে মুক্তির জন্য শীতলা, ষষ্ঠীর মতো লৌকিকদেবীর পুজো হুগলিতে চালু হয়েছিল। বস্তুত সেই ধারারই অনুসরণ দেখা যায় দক্ষিণ সিমলার সমবেত রান্না উৎসবে। কালের গতিকে যা হয়ে উঠেছে মানুষের মিলনের উৎসব, এক ভিন্নধারার বনভোজন। বারো মাসে তের পার্বণের বঙ্গে যা এনেছে বাড়তি আমেজ। শুধু বইয়ে পড়া রান্না উৎসব দেখবেন বলেই ভিন গাঁ থেকে এসেছিলেন মণিমালা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘বাংলার লোকাচারও যে কতটা মিষ্টি তা এদিন বুঝেছি।’