করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তিকাল করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। গতকাল বুধবার দুপুর সোয়া একটায় বসুন্ধরার এ্যাভার কেয়ার হাসপাতালে তিনি মারা যান বলে জানান বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরের দায়িত্বে থাকা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮০ বছর। গতকাল বাদ এশা মরহুমের প্রথম নামাজে জানাযা গুলশানস্থ আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ১১ ডিসেম্বর শুক্রবার বেলা ৩টায় মরহুমের নিজ এলাকা ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে শেষ নামাজে জানাযার পর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৯ নবেম্বর চৌধুরী কামাল ইবনে ই্উসুফকে এভারগ্রীন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২২ নবেম্বর করোনা পরীক্ষার ফলাফল কোভিড পজেটিভ শনাক্ত হয়। পরিবারের সদস্যরা জানান, এক সাপ্তাহ যাবত তাকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছিলো। ফরিদপুর সদর পৌরসভা নির্বাচনে ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন তার মেয়ে মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদিকা চৌধুরী নায়াব ইউসুফ। বৃহস্পতিবার ফরিদপুর-সদর পৌরসভার ভোট গ্রহন হবে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রীসহ ৪ মেয়ে রেখে গেছেন।
১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭৯ সালে বিএনপিতে যোগ দেন চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। তিনি ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট ড্ভেলপমেন্ট কাউন্সিলর (ডিডিসি) ছিলেন। ফরিদপুর-৩ আসন থেকে তিনি দ্বিতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদে ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার সরকারের স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী, ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রী, ২০০১ সালে দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী ছিলেন।
চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ফরিদপুরের জমিদার বাড়িতে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতামহ চৌধুরী মঈজউদ্দিন বিশ্বাস জমিদার ছিলেন। তার বাবা চৌধুরী ইউসুফ আলী (মোহন মিয়া) ব্রিটিশ শাসনামলে মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক পৃথক বিবৃতিতে চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। এছাড়া শোক ও গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা: শফিকুর রহমান। তারা মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। শোকবার্তায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও শহীদ জিয়ার নীতি ও আদর্শই ছিল মরহুম চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ এর রাজনৈতিক জীবনের পথচলা। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মরহুম ইউসুফ আলী চৌধুরী মোহন মিয়ার জেষ্ঠ্য সন্তান ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে তিনি আদর্শনিষ্ঠ জীবন-যাপন করেছেন এবং এজন্য জনগণ তাকে চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। গণতন্ত্রের প্রতি তার ছিল অবিচল আস্থা। তিনি ছিলেন একজন জনঘনিষ্ঠ মানবহিতৈষী রাজনীতিবিদ। জনকল্যাণের মহান ব্রত নিয়ে তিনি রাজনীতি করতেন, আর এজন্যই তিনি এলাকাবাসীর নিকট ছিলেন অত্যন্ত প্রিয়ভাজন। তিনি বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হয়ে দ্বিতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে এবং ১৯৮১ সালে বিচারপতি আবদুস সাত্তার, ১৯৯১ ও ২০০১ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দেশ-জাতি-জনগণের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। এসব দায়িত্বে থাকাকালীন নীতি ও আদর্শ থেকে তিনি কখনো বিচ্যুৎ হননি। বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। বিনয়ী, সদালাপী ও মানবিক গুনাবলী সম্পন্ন মরহুম চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ এলাকার মানুষের নিকট ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন এবং দলমত নির্বিশেষে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য একজন রাজনিতীবিদ।
চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন গণস্বাস্থ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল। শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া। গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা ও মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা। ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ হারুন আল রশিদ ও মহাসচিব ডাঃ মোঃ আব্দুস সালাম এক যৌথ বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং শোকসন্তাপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।