গ্রাহকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ব্যাংকিং সিস্টেমে সরকার প্রথমবারের মতো ইসলামি বন্ড বা সুকুক চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিগগিরই এটি চালু করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রথম দফায় ৮ হাজার কোটি টাকার বন্ড চালু করা হবে। সেই লক্ষ্যে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে
এখন কথা হলো- ইসলামি বন্ড কী? দেশে সাধারণত দুই ধরনের সরকারি বন্ড প্রচলিত আছে। এর মধ্যে একটি ট্রেজারি বিল এবং অন্যটি ট্রেজারি বন্ড। ট্রেজারি বিলের মেয়াদ খুবই কম। অপরদিকে, ট্রেজারি বন্ড দুই থেকে ১০ বছর মেয়াদী হয়ে থাকে। আর ব্যক্তি পর্যায়ে সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবে সবচেয়ে প্রচলিত ও জনপ্রিয় হলো ‘সঞ্চয়পত্র এবং প্রাইজবন্ড’।
এগুলোর মধ্যে আবার ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড এবং ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড অন্যতম। একই রকমভাবে ইসলামি বন্ড বা সুকুকও সরকারি বন্ডের কাতারে পড়ে।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, প্রচলিত ট্রেজারি বন্ড সরকার ইস্যু করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিলামের মাধ্যমে এর কেনা-বেচা ও সুদের হার নির্ধারিত হয় এবং তালিকাভুক্ত যে কোনো প্রতিষ্ঠান এর নিলামে অংশ নিতে পারে। অর্থাৎ সুদের হার আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে। কিন্তু ইসলামি বন্ড সম্পূর্ণ বিপরীত। এখানে সুদ নেই। বরং ব্যাংকের লাভ্যাংশের একটি অংশ মুনাফা হিসেবে দেয়া হয়। সেটা লাভ্যাংশের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে কম-বেশি হতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে দেশের মোট সঞ্চয় ও বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশই প্রচলিত ব্যবস্থার মতো সুদ গ্রহণ বা প্রদান করতে আগ্রহী নন। অন্তত ২৮ শতাংশ গ্রাহক ইসলামি ধারায় বিনিয়োগ করতে চান। তাই সরকারের এ সিদ্ধান্ত।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার রূপ রতন পাইন বিবিসি বাংলাকে বলেন, ইসলামি বন্ড চালু হলে সেটি সরকারের অর্থ সংগ্রহের নতুন একটি উৎস হবে। পরবর্তীতে সেই অর্থ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হবে। যে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংকসমূহ এই বন্ড নিতে পারবে।
‘ইসলামি বন্ডে একজন বিনিয়োগকারী সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন এবং মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। ছয় মাস অন্তর অন্তর মুনাফা দেয়া হবে। তবে সর্বোচ্চ কত বিনিয়োগ করা যাবে, সে বিষয়ে কোনো সীমা নির্ধারণ করা হয়নি।’ ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ হারে মুনাফা দেয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক হাসিনা শেখ বলেন, ইসলামি বন্ডে প্রচলিত বন্ড বা সঞ্চয় স্কিমের মতো সুদের ব্যবহার থাকবে না। এখানে মুনাফার হার আগে থেকে নির্ধারণের সুযোগ নেই। ইসলামি রীতি অনুযায়ী তা বাৎসরিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের আয়-ব্যয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হবে।
আরো সহজ ভাষায় বললে, প্রচলিত বন্ড বা সঞ্চয়পত্রে সুদের হার নির্দিষ্ট থাকে। বিনিয়োগকারী যে অর্থ বিনিয়োগ করেন, সেটির ওপর একটি নির্দিষ্ট হারে তিনি অর্থ বা মুনাফা বা সুদ পান। কিন্তু ইসলামি বন্ডে নির্দিষ্ট হারে কোনো অর্থ দেয়া হয় না। নির্দিষ্ট সময়ে ওই প্রতিষ্ঠানের আয় ও মুনাফা যখন যেমন হবে, তার ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারী মুনাফা পাবেন। এটি অংশীদারিত্বের মতো। অর্থাৎ এক্ষেত্রে সুদের কোনো সুযোগ নেই, যোগ করেন তিনি।