স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের দেয়া অফুরন্ত সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগ করার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিবন্ধকতাগুলো (আরও যদি থাকে) খুঁজে বের করব এবং আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি, সেগুলোর সমাধান করার মাধ্যমে বিনিয়োগের পরিবেশকে আরও সুবিধাজনক করব।’
স্কটল্যান্ডে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। তিনি এখানে তাঁর বাসস্থান থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই গণমুখী উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা সব সময় দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে।
এই প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা যথাযথ চ্যানেল ব্যবহার করে বিদেশ থেকে দেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য তাঁর সরকার প্রবর্তিত ২ শতাংশ প্রণোদনার কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, সরকার প্রবাসী বাংলাদেশীদের সুবিধার্থে একটি পৃথক ব্যাংকও প্রতিষ্ঠা করেছে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রবাসীরা কিছু অসুবিধার কথা উল্লেখ করলে জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে তিনি জানতেন না যে তারা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
তিনি বলেন, লন্ডনে একটি রোড শো হবে, যেখানে আমি বাংলাদেশ উন্নয়ন ও বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষকে (বিডা) বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলব।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, বিনিয়োগের সুবিধার্থে সব বাধা দূর করতে তিনি ইতোমধ্যে বিডাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের জন্য তাঁর সরকার বিশেষ ব্যবস্থার প্রস্তাব করেছে।
তবে, তিনি প্রবাসীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশে প্রচলিত আইন মেনে চলার অনুরোধ করেন, কারণ, বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগের জন্য কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি আপনারা এটি মেনে চলবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে বিনিয়োগ বন্ড ও প্রিমিয়াম বন্ড রয়েছে যেখানে প্রবাসীরা বিনিয়োগ করতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার প্রায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে এবং সেখানে প্রবাসীরা বিনিয়োাগ করতে পারবেন।
স্কটল্যান্ডে বিএনপির বিক্ষোভের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রশ্ন তোলেন কেন তারা এটা করছে।
তিনি বলেন, ‘আমার প্রশ্ন আমার দোষ কি? বাংলাদেশের উন্নয়ন করেছি, দারিদ্র্যের হার কমিয়েছি, বাংলাদেশের মানুষকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি।
বাংলাদেশের আর বিদেশীদের কাছে ভিক্ষা করার দরকার নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে আমাদের ৯০ শতাংশের বেশি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি।’
তিনি উল্লেখ করেন যে, বিএনপি তাদের শাসনামলের মতো দেশকে আবারও এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে ফেলতে চায়। তিনি বলেন, তাদের মতো চোরেরা (বিএনপি) ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ আবারও অন্ধকারের যুগে নিমজ্জিত হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট কখনো দেশের উন্নয়ন চায় না, এমনকি তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাও চায়নি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তাঁর সরকার ঢাকা-নিউইয়র্ক এবং ঢাকা-টরন্টো ফ্লাইট পুনরায় চালু করার জন্য আলোচনা করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অর্থ ও শক্তিশালী রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে বৈশ্বিক অভিযোজন কর্মকান্ড কার্যকর হচ্ছে না।
তিনি গতকাল এখানে কপ ২৬ অনুষ্ঠানে ‘এ্যাকশন এন্ড সলিডারিটি- ক্রিটিক্যাল ডিকেড’ শীর্ষক নেতৃবৃন্দের সভায় ভাষণে বলেন, অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই তাদের ৫০ : ৫০ বরাদ্দসহ বার্ষিক একশ’ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রতি উন্নত দেশগুলোর সমর্থন ও সহায়তা প্রয়োজন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাগি এই সভার আয়োজন করেন।
সিভিএফ (ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম) প্রেসিডেন্ট এবং গ্লোবাল সেন্টার অন এডাপটেশন’র দক্ষিণ এশিয়া অফিসের স্বাগতিক হিসেবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থানীয় নেতৃত্বে অভিযোজন উন্নয়ন করছে।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে জানান, বাংলাদেশ এ বছর ৩ কোটি চারার রোপণ করেছে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্লান’ শুরু করতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সম্প্রতি একটি উচ্চাভিলাসী ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) পেশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ তার অভিযোজন উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রসারণসহ জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার খসড়াও প্রণয়ন করেছে।