স্টাফ রিপোর্টার :
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩১০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭১৫জনে। এবছর ডেঙ্গু জ্বরে এখন পর্যন্ত ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরে ২৩ হাজার ৫৯২ ডেঙ্গু রোগী সারা দেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। তারমধ্যে ১৭ হাজার ৪৫৬ জন রাজধানী ঢাকায় এবং ৬ হাজার ১৩৬ জন রোগী ঢাকার বাইরে। চলতি মাসের দুই সপ্তাহে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭ হাজার ৫০০ জন এবং মারা গেছেন ২৮ জন।
গতকাল শুক্রবার সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৩১০ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১৯৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ১১৩ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ৩১০ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭১৫ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১ হাজার ৯১৬ জন এবং ঢাকার বাইরে ৭৯৯ জন। এতে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে ১৪ই অক্টোবর পর্যন্ত হাসপাতালে সর্বমোট রোগী ভর্তি ছিলেন ২৩ হাজার ৫৯২ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছিলেন ২০ হাজার ৭৯৪ জন। এই বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি মাসের এই কয়েকদিনে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭ হাজার ৫০০ জন এবং মারা গেছেন ২৮ জন।
এদিকে এতোদিন রাজধানী ঢাকাতে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা দেখা গেলেও কিছুদিন ধরে ঢাকার বাইরেও ভয়াবহ হচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছেন নতুন নতুন রোগী। বরিশাল, যশোর ও ফরিদপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এডিস নিধনে উদ্যোগ না নেয়ার অভিযোগ বাসিন্দাদের। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিধন ও ঝোপঝাড় ধ্বংসের পাশাপাশি দিনে ও রাতে মশারি টানিয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ফরিদপুরে এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব দিন দিন বাড়ছে। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সাতজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এনিয়ে ফরিদপুর জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে ৩৫ রোগী চিকিৎসাধীন।
ফরিদপুর জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ফরিদপুর জেলায় সর্বমোট ১১৫ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। তার মধ্য ৮০ জন রোগী ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছেন। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন ৩৫ জন। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন সাতজন। বর্তমানে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১২ রোগী। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন।
যশোরের অভয়নগরে ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব থাকলেও নেই কোনো সতর্কতা। হাসপাতালে মশারির মধ্যে রাখা যাচ্ছে না রোগীদের। আর যেসব এলাকা থেকে রোগী আসছে সেখানেও মশা নিধন ও ঝোপঝাড় ধ্বংসের কোনো উদ্যোগ নেই। চিকিৎসকরা বলছেন, অনীহার কারণে রোগীরা মশারি টানাচ্ছেন না। তবে ডেঙ্গু থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
চলতি বছর আগস্ট মাসের শুরু থেকে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শুরু হয়। এখন পর্যন্ত জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৩৭৫ জন এ রোগের চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। যার মধ্যে ২৯৭ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সবচেয়ে বেশি ২৮৮ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে অভয়নগর উপজেলায়। বিশেষ করে উপজেলার চলিশিয়া, গাজীপুর, সমশপুর, গুয়াখোলা ও বুইকারা এলাকায় সর্বাধিক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। অথচ সংশ্লিষ্ট এলাকা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ নিয়ে তেমন কোন সতর্কতা নেই। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা মশারির বাইরেই সারাদিন অতিবাহিত করছেন। এতে রোগ ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন, মশা নিধনে পৌরসভা ও ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতাল ও অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭৮ জন ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসাধীন আছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ঢাকার পর কক্সবাজারে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সেখানে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে ১ হাজারের বেশি মানুষ।