কক্সবাজারের ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে স্বেচ্ছায় দ্বিতীয় দফায় ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। গতকাল সোমবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজের মাঠ থেকে চট্টগ্রামের পথে প্রথমে রোহিঙ্গাদের নিয়ে রওনা দেয় ১৩টি বাস। এরপর বেলা ৩টার দিকে রওনা দেয় আরও ১০টি বাস। এই ২৩ বাসে উঠেছেন ১ হাজার ১৩৪ জন রোহিঙ্গা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের কাজ অব্যাহত আছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। গত রাতে তাদের চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার কথা। সেখান থেকে আজ মঙ্গলবার ২৯ ডিসেম্বর সরকারি ব্যবস্থাপনায় তাদের জলপথে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে দ্বিতীয় দফায় ১৩টি বাস ভাসানচরে যাত্রা করেছে। দুপুর ১টা পর্যন্ত এসব বাসে প্রায় ৬শ’ রোহিঙ্গা বাসে উঠেছেন। এরপর বিকাল ৩টায় আরও ১০টি বাসে রোহিঙ্গারা রওনা হন। বিকাল ৩টা পর্যন্ত বাসে চেপেছেন ১১৩৪ জন রোহিঙ্গা। আরও যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দেখা গেছে, গতকাল সোমবার সকাল থেকেই উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে শুরু হয় ভাসানচরে যাওয়ার তোড়জোড়। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বাসে করে নিয়ে এসে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে নিবন্ধনের কার্যক্রম চলছে। এখান থেকেই বাসে চেপে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছে তারা। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। রোহিঙ্গাদের নেওয়ার জন্য আরও বাস রাখা আছে সেখানে।
এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে স্থানান্তরের প্রথম ধাপে বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ ভাসানচরে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা হাসি মুখে পৌঁছেছিল। আগের দিন ভাসানচরে যেতে আগ্রহী এসব রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে গত বৃহস্পতিবার গাড়িতে এনে চট্টগ্রামে শাহিন স্কুলের ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। এবারও সেভাবে নিয়ে যাওয়া হবে তাদের।
এ বিষয়ে সকালে সরেজমিনে টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে দেখা গেছে, গতকাল সোমবার সকাল ৮ টার দিকে ক্যাম্পে বাস আসে। সিআইসি কার্যালয়ে প্রক্রিয়া শেষে সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের গাড়িতে তোলা হয়। এসময় তাদের স্বজনরা আশেপাশে ভিড় করে। এর আগে তাদের মধ্যে অনেকের স্বজন প্রথম দফায় ভাসানচরে পৌঁছেছিল। পরে বাসে করে উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্ট ও কলেজের অস্থায়ী ট্রানজিট ঘাটে প্রক্রিয়া শেষ করে এদিনই তারা ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এই ক্যাম্প থেকে ১০০ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশ্যে ক্যাম্প ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এর প্রতিনিধি এবং টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের কর্মকর্তা (সিআইসি) নওশের ইবনে হালিম গণমাধ্যমকে বলেন, তার শিবির থেকে স্বেচ্ছায় ১০০ রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশ্যে ক্যাম্প ত্যাগ করেছে। সকালে তারা ক্যাম্প থেকে উখিয়ায় রওনা দিয়েছেন। এর আগে এ শিবির থেকে ২১ পরিবার ভাসানচরে পৌঁছেছিল।
পরিবারসহ ভাসানচরের উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে টেকনাফ শালাপুরের মো. জাহেদ হোসাইন বলেন, কেউ আমাদের জোর করেনি। নিজেদের ইচ্ছায় আমরা পুরো পরিবার ভাসানচরে চলে যাচ্ছি। তাছাড়া ভাসানচরে যারা আছে তারা অনেক ভালো আছেন বলে ফোনে জানিয়েছেন। তাই আমরা উন্নত জীবনের আশায় সেখানে যাত্রা দিচ্ছি।
টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের হেড মাঝি আবুল কালাম জানান, তার শিবির থেকে ২৫ পরিবারের ১০০ জন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে উদ্দেশ্যে উখিয়া রওনা দিয়েছে। আজ সেখান থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। মঙ্গলবার সকালে তাদের ভাসানচরে পৌঁছার কথা রয়েছে।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) খোরশেদ আলম খান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দলটি ভাসানচরে পৌঁছাবে। স্বেচ্ছায় আসা এসব রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে হস্তান্তরের বিষয়ে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আগে আশ্রয় নেওয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছেন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।