মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:
বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গের পটুয়াখালী জেলা শুধুমাত্র সমুদ্র কন্যা কুয়াকাটার জন্যই বিখ্যাত নয়,এ জেলায় আরও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে|ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য একটি আদর্শ স্থান হতে পারে বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলা|
শেরে-ই বাংলার এ,কে, ফজলুল হকের পৈত্তিক বাড়ি, সুন্দরী কমলা রানীর দীঘি,ঘসিটি বিবির মসজিদ,বগা বালাম চালের বিখ্যাত খাদ্যের গুদাম,বলাই কানাইর দিঘী এর মধ্যে অন্যতম।
উপজেলা সদরের পশ্চিমে আছে বাউফল ইউনিয়নের বিলবিলাস বাজার।ব্রিটিশ আমলে বাংলার বাঘ নামে পরিচিত শেরে-ই বাংলা এ, কে, ফজলুল হকের পিত্রালয় ছিল বাউফল উপজেলার বিলবিলাস গ্রামের কাজী বাড়ীতে।তারই নামানুসারে বিলবিলাস বাজার থেকে নওমালা রাস্তার সাথে জৌতায় গিয়ে ‘শেরে বাংলা’ রোড নামে মিলিত হয়েছে।
বাউফল সদর উপজেলা কার্যালয় হতে পূর্ব দিকে ৪ কি. মি. দূরে কালাইয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের শৌলা গ্রামে অবস্থিত।কালাইয়া ইউনিয়নের উত্তর শৌলা গ্রামে নবাব সিরাজউদ্দৌলার খালা ঘষেটি বেগমের নামে এ মসজিদ।
মসজিদটি বর্তমানে নদীগর্ভে বিলীন।পলাশীর যুদ্ধকালীন সময়ে ঘষেটি বেগম নিজে অথবা উনার কোনো আপনজন এখানে এসে এই দালান তৈরি করে আশ্রয় নিয়েছেন বলে অনুমান করা হয়।
কমলা রানী মহিলা হিসেবে বাংলার প্রথম এক স্বাধীন রাজ্য শাসক ছিলেন।তিনি চন্দ্রদ্বীপ রাজা জয়দেবের কন্যা|তিনি চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের রাষ্ট্র পরিচালক তথা রানী ছিলেন। ১৪৯০ খ্রিস্টাব্দে কমলা রানী সিংহাসনে আরোহণ করেন। রানী কমলা দেবীর স্মৃতি বহন করে আছে কালাইয়া ইউনিয়নে কমলার দীঘি।যার নির্মাণকাল ১৪৯০ খ্রিস্টাব্দে।
১৭৯০ সালে বাউফল থানার এই নাম নিজ মহিমায় ভাস্বর।এর রয়েছে অতীত ইতিহাস। ১৩২০ সালে রাজা দনুজমর্দন দেব চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তার অধস্তন ৫ম পুরুষ রাজা জয়দেবের কোনো পুত্র সন্তান ছিল না। কমলা ও বিদ্যা সুন্দরী নামে তার দুই কন্যা ছিল।রাজা কন্যাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার শিক্ষা প্রদান করেন|
কন্যাদের মধ্যে কমলা দেবী ছিলেন অনেক প্রতিভাময়ী। পিতার নির্দেশে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা,অস্ত্রচালনা, সংস্কৃত ও বাংলা ভাষায় জ্ঞান লাভ করেন। ৫২৬ বছর আগের সেই দীঘি এখনো কালের সাক্ষী। কমলার দীঘি ভরে গেছে। দীঘির পূর্বপাড় তেতুঁলিয়া নদীতে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে চর পড়েছে।দীঘির পাড় গুলো এখনো ২০/২৫ ফুট উঁচু। পাড়ের উপর গড়ে উঠেছে জনবহুল গ্রাম।গ্রামের নাম শৌলা।
বগা বন্দরের আয়তন ৮ হাজার ৯৬০ একর ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই বগা ছিল চাল ব্যবসার জন্য সু-প্রসিদ্ধ।এখানে বালাম চাল তৎকালীন বাংলা ও ভারতবর্ষের সর্বত্র রপ্তানি করা হতো। উপজেলার পশ্চিমে বগা ইউনিয়ন এ রয়েছে প্রাচীন কালের বিখ্যাত খাদ্য গুদাম।
কথিত আছে,উত্তরে কাছিপাড়া ইউনিয়নের শতাধিক বছর পূর্বে কাছিপাড়া গ্রামে কানাই-বলাই নামে দুই ভাই থাকতেন। প্রতিদিন ভোর রাতে দুই ভাই উঠে নিজ গ্রামের সকল হিন্দু বাড়িতে বাড়িতে নাম কীর্তন করতেন।
একদিন কানাই ও বলাই এই দিঘীতে গোসল করার সময় দুটো বড় গজাল মাছ তাদেরকে নিয়ে দিঘীর গভীরে চলে যায়। এরপর আর কোনো দিন দুই ভাইয়ের দেখা মেলেনি। মূলত এরপর থেকেই এ দিঘীটি কানাই-বলাই দিঘী নামে পরিচিতি লাভ করেছে। বলাই-কানাই দীঘির আনুমানিক দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার ও প্রস্থ ১৪০ মিটার। প্রায় তিনশত বছরের প্রাচীন দীঘি এটি|সেখানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীগণ দুধ কলা দিয়ে পূজা করত।
তাছাড়া ইখতিয়ার খাঁর দিঘী, ধজের দিঘী বিখ্যাত হিন্দু জমিদারের দুই মেয়ে কালি ও শুরীর নামানুসারে কালিশুরী বন্দরের নামকরণ করা হয়। এটা বাউফল উপজেলার একটি ইউনিয়ন এখানে সায়েদুল আরেফিন নামে একজন পরহেজগার মুসলমানের নামানুসারে কালিশুরী হাইস্কুলের নাম কালিশুরী সায়েদুল আরেফিন ইনস্টিটিউশন রাখা হয়।তার দরগাহে বহু ভক্ত মাজার জেয়ারত করতে আসেন।কালের সাক্ষী ইতিহাস,ঐতিহ্যর নানা জানা অজানা নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পটুয়াখালী জেলায়|