পঞ্চম দিনের মতো সর্বাত্মক লকডাউন পালিত হয়েছে গতকাল রোববার। এদিন সকালে রাজধানীতে কড়াকড়ি থাকলেও বিকেল থেকে ঢিলেঢালাভাবে লকডাউন পালিত হয়। এদিন কারণে বা অকারণে লোকজনকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে কিংবা পায়ে হেঁটে ঘরের বাইরে বের হতে দেখা গেছে। তবে শহরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থানে পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিগত গাড়ি আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেও দেখা গেছে।
চেকপোস্টগুলোতে পুলিশের খুব কড়া নজরদারি না থাকায় প্রধান সড়কগুলোতে অধিক পরিমাণে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে। কোথাও কোথাও আবার পরিবহনের লম্বা যানজট তৈরি হয়েছে। সড়কগুলোতে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, পিকআপ, অ্যাম্বুলেন্স, রিকশাসহ ব্যক্তিগত বিভিন্ন পরিবহন চলাচল করতে দেখা গেলেও গণপরিবহন চলাচল করেনি। অনুমোদন ছাড়াই অনেককে ব্যক্তিগত পরিবহনে যাত্রী আনা-নেয়া করতে দেখা গেছে।
অনেক চেষ্টা করেও আউটপাস সংগ্রহ করতে পারেননি জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাধ্য হয়ে ব্যবসার কাজে ঘর থেকে বের হয়েছেন। ফার্মগেটে পুলিশের বড় চেকপোস্ট থাকলেও সেখানে ফাঁকা দেখা গেছে। পাশেই পুলিশের দায়িত্বরত সদস্যদের বিশ্রাম করতে দেখা গেছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে কড়া নজরদারি না থাকায় কারণে বা অকারণে ব্যক্তিগত পরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
গতকাল দুপুরে গাড়ির চাপ কম থাকায় চেকপোস্টে নজরদারি কিছুটা কম রয়েছে। পুলিশ সদস্যরা দিনভর দায়িত্বপালন করায় তাদের অনেকে বিশ্রাম করছেন। তবে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত সবাই ডিউটি করছেন বলে জানান দায়িত্ব পালনকারীরা পুলিশ সদস্যরা।
মোটরসাইকেলচালক ইমদাদ হোসেন জানালেন, আউটপাস পাইনি বলে ঝুঁকি নিয়ে সকালে ঘর থেকে বের হয়েছি। এ পর্যন্ত কোথাও পুলিশের বাধায় পড়তে হয়নি। রমনা পার্কের পেছনে হেয়ার রোডে পুলিশের ছয়-সাতজনের একটি দলকে চেকপোস্টে ডিউটি করতে দেখা গেলেও তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। অসংখ্য গাড়ি জবাবদিহি ছাড়া চেকপোস্ট দিয়ে চলে গেলেও দু-একটি গাড়ি আটকে বাইরে আসার কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে।
আউটপাস ছাড়াই গাড়িচালক নাসির উদ্দিন প্রাইভেটকারে যাত্রী নিয়ে মিরপুর থেকে এসেছিলেন। এ সময় হেয়ার রোডে তাকে আটকালে আউটপাস দেখাতে না পারায় তার বিরুদ্ধে ৩ হাজার টাকার মামলা দায়ের করা হয়।
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেও আউটপাস ম্যানেজ করতে পারিনি বলে পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। সকাল থেকে ২ হাজার টাকা আয় করতে না পারলেও সার্জেন্ট ৩ হাজার টাকার মামলা করেছেন।’ এমন অবস্থায় কীভাবে পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার দেবেন প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালনেও দেখা গেছে চরম অনীহা। অনেককেই প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে গিয়ে গলিতে বসে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। অনেকেই বলছেন, কঠোর বিধিনিষেধ হলেও খাওয়া তো বন্ধ নেই। বর্তমানে বাজারই করোনার হটস্পট হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় রাজধানীর বাজারগুলোয় নজরদারি বাড়ানো উচিত।
করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের জারি করা বিধিনিষেধ গত ১৪ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। এর আগে ৫ এপ্রিল থেকে সাতদিনের জন্য গণপরিবহন বন্ধসহ ১১ দফা কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার। দুদিন পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়। এর একদিন পর খুলে দেয়া হয় শপিংমলও। তখন সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে সমালোচনা করেন বিশেষজ্ঞরা।
এরই মধ্যে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বাড়তে থাকে। প্রতিদিন মৃত্যু ও সংক্রমণের নতুন রেকর্ড হচ্ছে দেশে। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন ‘প্রয়োজনে আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার’।
এরপর গত ৯ এপ্রিল সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর ও সর্বাত্মক লকডাউন’ দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। পরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীও একই ইঙ্গিত দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ এপ্রিল ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার।
এদিকে বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও সাত দিন বাড়তে পারে। এ নিয়ে আজ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। সে সভার পরই জানা যাবে, চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ছে কি না। কর্মকর্তারা বলছেন, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, সময় বাড়ানো হবে কি না, তা নিয়ে ১৯ অথবা ২০ তারিখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সংক্রমণ প্রতিরোধে সাত দিন নয়, ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন চেয়েছিল কোভিড সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। চলতি মাসের শুরুতে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে ১৪ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে, যা চলবে আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত। ওইদিন পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে আসা যাবে না।
এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সাত দিনের জন্য কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নির্দেশনা দেয় সরকার ৫ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর করা হয়। ১১ এপ্রিল মেয়াদ শেষ হলে ১২ ও ১৩ এপ্রিলও নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত করা হয়।