মোঃ সামিউল হক সায়িম, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি:
আমাদের বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে হলে গভীর জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই। আর এই জ্ঞান অর্জন করতে প্রয়োজন বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং তা থেকে শিক্ষা নেওয়া। যার মাধ্যমে সকল বিষয়ের জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাবে এবং পাওয়া যাবে আলোকিত মানুষ। ১৯৭৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর সারাদেশের সবখানে এইসব আলোকিত মানুষ গড়ে তোলা, জাতীয় শক্তি হিসেবে তাদের সংঘবদ্ধ করা এবং এর পাশাপাশি জাতীয় চিত্তের সামগ্রিক আলোকায়ন ঘটানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশের শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজসংস্কারক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সূচনা হয়। সূচনালগ্নে মাত্র ১৫ জন হলেও এই ৪৫ বছরে বিভিন্ন সময় ও পর্বে যুক্ত হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বর্তমান কর্মসূচিসমূহ এবং এর অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা সংক্ষেপে উপস্থাপিত হলো: কর্মসূচির আওতাভুক্ত জেলা ৬৪টি, স্কুল-কলেজ সংখ্যা ১৬৪০৬টি, উপজেলা প্রায় ৪৫০টি, ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি ৭৬টি (গাড়ি-লাইব্রেরি ইউনিট), ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির বই সংখ্যা ৬,৫০,০০০টি, ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির আওতাভুক্ত জেলা ৬৪টি, এর আওতাভুক্ত উপজেলা/থানা ৩৬৮টি, এর স্পট/এলাকা সংখ্যা ৩২০০টি এবং সাংস্কৃতিক সংঘের সংখ্যা ৭০০টি প্রভৃতি। এছাড়াও ২০২৩ সালে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী পাঠকসংখ্যা ছিলো অনেক। যেমন: দেশভিত্তিক উৎকর্ষ কার্যক্রমে ১,২৬,৭০০ জন, পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২৪,৫০,৭০১ জন এবং ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরিতে ৫,৫০,০০০ জন ইত্যাদি।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যতগুলো ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির ইউনিট রয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি জয়পুরহাট ইউনিট। এই ইউনিটের যোগ্য, সৎ, সাহসী এবং দক্ষ লাইব্রেরি কর্মকর্তার নাম মোঃ আবু হাসান। প্রতিটি ইউনিটের মতো এই ইউনিটেরও একটি গাড়ি বরাদ্দ রয়েছে এবং এটি চালানোর জন্য একজন নিয়মিত গাড়ি চালক রয়েছেন। গাড়িটির দক্ষ চালকের নাম মোঃ সম্রাট প্রামাণিক। মূলত তাঁরা সব কাজ একসাথেই মিলেমিশে করে থাকেন। তাঁরা তাদের গাড়ি নিয়ে ও তাতে থাকা বইগুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত ছুটে চলেন এই জেলার মানুষের কাছে, তাদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে। তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় বর্তমানে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি জয়পুরহাট ইউনিট এর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তাছাড়া সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রকল্প’ এর জয়পুরহাট ইউনিটের সদস্য, সাংস্কৃতিক সংঘের সদস্য, অভিভাবক ও শুভাকাঙ্খীদের নিয়ে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট দিন, সময় ও স্থানে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি জয়পুরহাট ইউনিট এর লাইব্রেরি কর্মকর্তা আবু হাসান এর সভাপতিত্বে এই প্রাণবন্ত আড্ডার আয়োজন করা হয়। উক্ত আড্ডায় লাইব্রেরির কর্মকাণ্ড, কবিতা আবৃত্তি, সংগীত, বিভিন্ন বিষয়ে অনুভূতি বিনিময়, মজার মজার কৌতুক ইত্যাদি বিষয়ে জেলা পর্যায়ে উপস্থাপনা এবং প্রতিযোগিতা করার সুযোগ মেলে। সাহিত্য আড্ডার শেষ পর্যায়ে তাদের পুরস্কৃতও করা হয়। এই ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে জেলার সকল শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারেন এবং নিজের মেধাকে তুলে ধরতে পারেন।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি জয়পুরহাট ইউনিট এর সদস্য হওয়ার জন্য এই নিয়মগুলো অবশ্যই জানতে হবে। প্রত্যেক সদস্যকে মাসিক বই রক্ষণাবেক্ষণ ফি ১০ টাকা দিতে হবে (বাৎসরিক অথবা ষান্মাসিক ভিত্তিতে বই রক্ষণাবেক্ষণ ফি অগ্রিম পরিশোধযোগ্য) এবং ফেরতযোগ্য নিরাপত্তা অর্থ, সদস্যরা তাদের ধরন অনুযায়ী একটি করে নির্দিষ্ট মূল্যের বই বাড়িতে নিয়ে পড়তে পারবেন। যেমন: সাধারণ সদস্য: ১০০ টাকা (অনধিক ২০০ টাকা মূল্য), বিশেষ সদস্য: ২০০ টাকা (অনধিক ৫০০ টাকা মূল্য), অগ্রবর্তী সদস্য: ৫০০ টাকা (অনধিক ৭০০ টাকা মূল্য), বিশেষ অগ্রবর্তী সদস্য: ৮০০ টাকা (যেকোনো মূল্যের বই)। সদস্য হওয়ার জন্য যোগাযোগ: ০১৩১৮২৪৫৭৪৭।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি জয়পুরহাট ইউনিট এর লাইব্রেরি কর্মকর্তা মোঃ আবু হাসান ও নিয়মিত গাড়ি চালক মোঃ সম্রাট প্রামাণিকের সুন্দর আচার-ব্যবহার এবং ভালো কাজের প্রশংসা করেছেন সুধীমহল।