cinn ডেস্ক- গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার চৌরখুলী গ্রামের ভিক্ষুক সোনামতি বেগম। বয়স ৭০, করতেন ভিক্ষাবৃত্তি। কিন্তু ভিক্ষাবৃত্তির অভিশাপ থেকে চেয়েছিলেন মুক্তি। আজ তার ভিক্ষাবৃত্তি থেকে মুক্তি মিললো। একজন শ্রমিক হিসাবে আত্মপ্রকাশ হলো তার।
সোনামতি বলেন, ভিক্ষা নয়, আমি কাজ করে খেতে চাই। ভিক্ষায় কোনো সম্মান নেই। এতদিন কোনো কাজ পাইনি, তাই ভিক্ষা করছি। প্যাকেট ফ্যাক্টরিতে কাজ পেয়েছি, আমি এখন চাকরি করে সম্মানের সাথে বাঁচতে পারবো।
সোনামতি বেগমের মতো একই প্রত্যাশা নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে শ্রমিক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছেন আরো ৪২ জন।
কোটালীপাড়া উপজেলার কুশলা ইউনিয়নের চৌরখুলী গ্রামে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি। সেখানে শ্রমিক হিসাবে কাজ করবেন ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দেয়া ৪৩ জন ব্যক্তি।
শ্রমিক হিসাবে কাজ করবেন ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দেয়া ৪৩ জন
পহেলা মে দুপুরে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ৪৩ জনের হাতে শ্রমিকের নিয়োগপত্র তুলে দেন। এর আগে তিনি ফিতা কেটে ‘অবলম্বন’ নামে একটি প্যাকেজিং ফ্যাক্টরিটির উদ্বোধন করেন।
এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মহসীন উদ্দিন, পৌর মেয়র হাজী মো. কামাল হোসেন শেখ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ, কুশলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বাদল, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রাকিবুল হাসান শুভ, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শ্রীময়ী বাগচী উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, গত ডিসেম্বর মাস থেকে কোটালীপাড়া উপজেলার কুশলা ইউনিয়নের চৌরখুলী গ্রামে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও সরকারি অর্থায়নে এ প্যাকেজিং ফ্যাক্টরির নির্মাণকাজ শুরু হয়। চলতি মাসের শুরুর দিকে এ ফ্যাক্টরির নির্মাণকাজ শেষ হয়। এই ৪৩ জন ভিক্ষুক এখন থেকে এই ফ্যাক্টরিতে কাজ করবেন। তাদের হাত এখন থেকে হয়ে উঠবে কর্মজীবীর হাত।
চৌরখুলী গ্রামের ভিক্ষুক রেখা ও ডালিম বেগম বলেন, আমরা আগে ভিক্ষাবৃত্তি করে চলতাম। কিন্তু এতে কোনো সম্মান নেই। কেউ আমাদের দাম দেয় না। এতদিন ধরে একটি কাজ খুচ্ছিলাম। কিন্তু কোথাও কাজ পাইনি। তবে উপজেলা প্রশাসন ফ্যাক্টরি নির্মাণ করে আমাদের চাকরি দিয়েছে। এখন আমরা প্ররিশ্রম করে জীবন চালাতে পারবো। সম্মানের সাথে সমাজে চলতে পারবো।
প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি নির্মাণ করে চাকরি দেয়া হয়েছে ৪৩ ভিক্ষুককে
কুশলা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বাদল বলেন, কুশলা ইউনিয়নের চৌরখুলী গ্রামের ৪৩ নারী-পুরুষ জন্ম-জন্মান্তরে ভিক্ষাবৃত্তি পেশার সাথে জড়িত রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এ পেশা থেকে উত্তরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু কখনোই তাদের এ পেশা থেকে নিবৃত করা যায়নি। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যেগে একটি প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি নির্মাণ করে তাদের চাকরি দেয়া হয়েছে। প্রশাসনের এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম মাহফুজুর রহমান বলেন, কোটালীপাড়ায় প্যাকেজিং ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত কাগজের প্যাকেটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ কারণে সরকারি অর্থায়নে ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এ ফ্যাক্টরির নির্মাণকরা হয়েছে। এখানে যারা কাজ করবেন তাদের আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এই ফ্যাক্টরিতে যে ৪৩ জন ভিক্ষুক কাজ করবেন, তাদের প্রতিমাসে তিন হাজার টাকা করে বেতন দেয়া হবে। এছাড়াও এই ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত কাগজের তৈরি প্যাকেট বিক্রির লভ্যাংশের একটি অংশ তারা পাবেন। ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের এ উদ্যোগ সফল হলে পরিবর্তন হবে চৌরখুলীর, পরিবর্তন হবে কোটালীপাড়ার।
জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, ভিক্ষা নয়, কর্মময় হবে ৪৩ জন ভিক্ষুকের জীবন। এরা এখন কাজ করে সংসার চালাতে পারবে। এ ধরণের উদ্যোগ দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে। আমাদের দেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত ও উন্নত সমৃদ্ধ হবে। এ ক্ষুদ্র উদ্যোগটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেশকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে সহায়তা করবে বলে আমার বিশ্বাস।