শোয়েব হোসেন —
বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় চুরি ও ছিনতাই হওয়া মোবাইল সিন্ডিকেট চক্রের মূলহোতাসহ একাধিক অসাধু ব্যবসায়ীদের কার্যক্রমে নজর দিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভুক্তভোগীরা।তারা বলেন, নগরীর গির্জা মহলার ভেনাস মার্কেট ও আশপাশে চলে মূলত বড় কাজগুলো।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দেশি-বিদেশি মোবাইল, ট্যাব ও ল্যাপটপের আইএমইআই বদলে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চোখে ধুলো দেয় তারা।
এছাড়া তাদের কাছে রয়েছে অবৈধ মোবাইলের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর পরিবর্তন করার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। এসব সরঞ্জামাদি দিয়ে তারা মুহূর্তেই মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করেন। তাতে পরবর্তীতে কোন মোবাইলের সঠিক সন্ধান পাওয়া যায়না প্রযুক্তি ব্যবহারেও।
তবে বরিশাল আন্তঃজেলা চোর চক্রের প্রায় ৯০% চুরির ফোনের কাজই করেন……. টেলিকমের হাফিজ। এটা হাফিজের নিজেরও স্বীকারোক্তি। যদিও তার দাবী আরও কিছু লোক একই মার্কেটে এই কাজ করে।
সূত্র জানায়,ছিনতাইকারী কিংবা চোর ফোনের জন্য সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা পেলেও আইএমআই পরিবর্তন করা এসব ফোন বিক্রি হয় ১৫ থেকে ৭০ হাজার টাকায়। আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের পর চক্রটি মূলত বিভিন্ন মার্কেটের সামনে গোপনে বিক্রি করে থাকে এসব চোরাই মোবাইল। আর আইএমইআই নাম্বার পরিবর্তন করার কারণে এসব মোবাইল পরবর্তী সময়ে উদ্ধার করাও সম্ভব হয় না।
ছিনতাইকারীরা মূলত কম মূল্যে মোবাইল বিক্রি করে তা দিয়ে মাদক কেনে।নগরীতে মাদকের টাকা সংগ্রহ করতে গিয়েই অহরহ মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। হাত ঘুরে এসব মোবাইল পরে বিক্রি হয় নিম্ন আয়ের মানুষ ও বস্তিতে বসবাসকারীদের কাছে। ছিনতাইয়ের কারণে একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও একই পেশায় জড়িয়ে পড়ছে চক্রের সদস্যরা। কম সময়ে বেশি উপার্জনের আশায় মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমনই চোর,ছিনতাইকারী ও মাদক সেবীদের আশ্রয়স্থল বরিশাল গির্জামহলার ভেনাস মার্কেটের মোবাইল প্লাস মোবাইলের দোকানের প্রোপাইটর’ হাফিজ’। হাফিজ বর্তমানে সবথেকে বেশী চুরির মোবাইলের ‘ফ্লাস সফটওয়্যার ‘প্রয়োগের মাধ্যমে কাজ করে থাকেন।হাফিজ নগরীর ও আন্তঃজেলা চোর চক্রের সাথে জড়িত বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মূল ছিনতাই,চুরির পেশাদার অপরাধীদের নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হাফিজের মোবাইলের দোকানটি। সূত্র জানায়, হাফিজের নেতৃত্বে চলে শহরে ও বাইরে প্রায় ১০ টির বেশী মোবাইল চোর চক্র। যারা মুঠোফোনে যোগাযোগ করে সরাসরি লককরা মোবাইল গুলো পাঠিয়ে দেয় তার কাছে। হাফিজ নিজের দোকান ছাড়াও বাইরের গোপন একাধিক দোকানে মেশিন রেখে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে চোরদের কাজ হালাল করে দেয়। এছাড়াও হাফিজের বাসায়ও মেশিন রয়েছে বলে জানায় সূত্রটি।
মোবাইল টেকনিশিয়ান ইউনুস বলেন ‘ টোকাইরা, ছিনতাইকারী, মলম পার্টিসহ চোরদের মোবাইলগুলো আনলক করে ফরমেট করে এসব টেকনিশিয়ানরা। আবার সেই সেট আইএমই কোড বদল করে গ্রাহকদের দিয়ে ছিনতাইকারীদের কাজ হালাল করে হাফিজদের মত টেকনিশিয়ান রা।ফলে পুলিশ মিসগাইড হয়ে সর্বশেষ গ্রাহকদের চোর বলে ধরে নেন। এদিকে হাফিজরা ৫০০ টাকা থেকে আইফোনের লক খোলা পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকাও নেয়’
উজিরপুরের মা টেলিকম এর সত্ত্বাধিকারী আনিচ বলেন ‘ চোরাই সেটের গ্যাং পুলিশ ধরছেনা কেন? হাফিজের ঘটনা কে না জানে? ‘
এ বিষয়ে অভিযুক্ত হাফিজকে জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘ প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ বরিশালে আমিই করি। আর এরকম অবৈধভাবে কাজ অনেকেই করে এই মার্কেটে। ‘
মার্কেটের মোবাইল টেকনিশিয়ান সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন ‘ চোরাই ফোনের বিষয়টি শুনেছি। ঠিক কারা করে জানিনা’
এই চোর চক্র ও জড়িত টেকনিশিয়ানদের গ্রেফতারের দাবী ভুক্তভোগীদের।