নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চাপরাশিরহাট বাজারে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ চলাকালীন সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির অস্ত্রধারীদের ছবি তোলায় ইচ্ছাকৃৃতভাবে তাকে গুলির নিশানা করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন মুজাক্কিরের বড় ভাই নুর উদ্দিন মুহাদ্দিস। তিনি জানান, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। মুজাক্কির গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তার মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে গোলাগুলির সময় মুজাক্কির অস্ত্রধারীদের ছবি ও ভিডিও ধারণ করছেন। সেই বিষয়টি টের পেয়ে অস্ত্রধারীদের র্টাগেট হন মুজাক্কির।
নুর উদ্দিন মুহাদ্দিস বলেন, ময়নাতদন্তের পর কর্তব্যরত ডাক্তার জানিয়েছেন মুজাক্কিরের শরীর শর্টগানের গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শরীরে গুলির ৬২টি স্প্রিন্টার আঘাত করে। ঘটনাটি পরিকল্পিত না হলে মুজাক্কিরের শরীরে এতগুলো গুলি ঢুকত না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, মনে হচ্ছে মুজাক্কিরের ফেসবুক আইডি থেকে অনেক পোস্ট ডিলিট হয়ে গেছে। গোলাগুলির ঘটনার পর তার যে মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেই মোবাইল ফোনেই মুজাক্কির ফেসবুক ব্যবহার করত। এতে তার পেশাগত অবস্থানের অনেক কিছুই অস্পষ্ট হয়ে যাবে।
এদিকে সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির হত্যার ঘটনার পর এখনো কোনো মামলা হয়নি। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি জায়েদুল হক রনি বলেন, মুজাক্কিরের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ করা হয়নি। তবে তার পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা আগামীকাল (মঙ্গলবার) অভিযোগ নিয়ে থানায় আসবেন।
এ ব্যাপারে মুজাক্কিরের বড় ভাই নুর উদ্দিন মুহাদ্দিস বলেন, মামলার বিষয়ে আজ (সোববার) আমার ছোট ভাই ফখরুদ্দিন থানায় গিয়ে ওসিকে পাননি। বসুরহাটে ১৪৪ ধারা জারি হওয়ায় তিনি ওই দিকে ব্যস্ত ছিলেন বলেন জানিয়েছেন। আগামীকাল (মঙ্গলবার) সকালে আমাদের থানায় যাওয়ার জন্য বলেছেন।
অন্যদিকে, সাংবাদিক মুজাক্কিরের রক্তাক্ত অবস্থার ৩১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, উপজেলার চাপরাশিরহাটে গুলিবিদ্ধ মুজাক্কিরের বাঁচার আকুতি। রক্তাক্ত ওই সাংবাদিক ‘ভাই, আমাকে বাঁচান, প্লিজ আমাকে বাঁচান’ বলে
আর্তনাদ করছিলেন। গত শুক্রবার বিকালে চাপরাশিরহাট বাজারে আওয়ামী লীগের দুপক্ষে গোলাগুলির সময় মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও এটি। সেখানে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘মোবাইলে আছে, আছে…।’
সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির হত্যার ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পরও কোনো মামলা না হওয়া এবং আসামি চিহ্নিত না হওয়ায় জেলার সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজ হতাশা প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির মহাসচিব মনিরুজ্জামান চৌধুরী উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, আমরা কোন দেশে আছি জানি না, যে দেশে সাগর-রুনির হত্যার বিচার হয় না। যে দেশে প্রকাশ্য গুলি করে সাংবাদিককে হত্যার ৭২ ঘণ্টা পরও মামলা হয় নাÑ আমরা বিচার চাইব কার কাছে?
সাংবাদিক মুজাক্কির হত্যার প্রতিবাদে আজ সকাল ১১টায় নোয়াখালী প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ রিপোর্টার্স ক্লাব নোয়াখালী জেলা শাখা ও বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম, নোয়াখালী শাখা।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন গতকাল জানান, ভিকটিমের পরিবার এখনো মামলা না দেয়ায় তদন্ত শুরু করা যাচ্ছে না। মামলার পরেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বসুরহাট পৌরসভার মেয়র কাদের মির্জার বিরুদ্ধে গত শুক্রবার বিকালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল এবং বসুর হাট পৌর মেয়র কাদের মির্জার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির সময় গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির। শনিবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।
কোম্পানীগঞ্জে আরেক সাংবাদিকের ওপর হামলা : এদিকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে চরফকিরা ইউনিয়নে সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরের দাফন সম্পন্ন হওয়ার কিছুক্ষণ পরই আরেক সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বসুরহাট রূপালী চত্বর এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলার শিকার অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তা ২৪ ও স্বদেশ প্রতিদিন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দিন রনি অভিযোগ করে বলেন, রূপালী চত্বর সংলগ্ন তার অফিসের সামনে তাকে মারধর করেছে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র কাদের মির্জার সমর্থকরা। এ সময় কাদের মির্জা নিজেই তাকে গালমন্দ করতে করতে সাংবাদিকের অফিসের দিকে এগিয়ে যান।
সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন বলেন, কাদের মির্জার উপস্থিতিতে তার কয়েকজন অনুসারী কিল-ঘুষি দিতে থাকেন। এ সময় তার হাতে থাকা দুটি মুঠোফোন রাস্তায় পড়ে গেলে কাদের মির্জার অনুসারীরা তা নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর সাংবাদিক রনিকে তার অফিস থেকে চলে যেতে বাধ্য করেন হামলাকারীরা।
এ ব্যাপারে কাদের মির্জার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।