স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, লকডাউন নয়, টিকা নির্ভরশীল হতে চায় বাংলাদেশ। দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনে আমরা খুব আগ্রহী। এ বিষয়ে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে কথা হচ্ছে। বাংলাদেশে টিকা উৎপাদন কারখানা হবে গোপালগঞ্জে। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মানিকগঞ্জের গড়পাড়া গ্রামে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কারণেই সর্বাত্মক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য দেশও কঠোরভাবে লকডাউন দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তবে লকডাউনে অর্থনীতিসহ বিভিন্নভাবে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু যতদিন অধিকাংশ মানুষকে টিকার আওতায় না আনা যাচ্ছে ততদিন এর বিকল্প নেই।
জাহিদ মালেক বলেন, আপনারা জানেন, কয়েকদিন ধরে দেশে মৃত্যুর হার অনেক বেড়ে গেছে।
গতকালও ১০৮ জন মৃত্যুবরণ করেছে এবং সংক্রমণের হারও প্রায় ২২ শতাংশের কাছে চলে গেছে। দেশের প্রায় প্রত্যেকটি জেলায় করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে রাজশাহী ও খুলনায় বেশি মৃত্যু হচ্ছে। জাহিদ মালেক বলেন, দেশে এখন সংক্রমণের হার প্রায় ২২ শতাংশ। অথচ মানুষ এখনও লকডাউন মানতে চায় না। নিয়মিতভাবে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানে না। এ অবস্থা থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, অতি দ্রুত চীন থেকে টিকা আসছে। তবে গোপনীয়তার কারণে কবে এবং কী পরিমাণ আসছে সে বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। রাশিয়ার সঙ্গেও ভ্যাকসিন আনার বিষয়ে কথা হচ্ছে বলে তিনি জানান। তবে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বেশি নয় বলে পরিমাণটা খুব বেশি হবে না বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
এদিকে গত কয়েক দিন ধরে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড গড়েছে শুক্রবার। গতকাল মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমলেও সংক্রমণের হার বেড়েছে। মাঝে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ বেশি থাকলেও এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। ফলে প্রায় সবগুলো জেলা হয়ে ওঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেন্টার ফর রিসার্চ, ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাকশন (সিআরআইডিএ) জানিয়েছে, দেশে মোট ৬৪ জেলার ৫৯টিই অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। আর পাঁচটি জেলা আছে উচ্চ ঝুঁকিতে।
শনিবার প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. শাহরিয়ার রোজেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মেথডোলজি ব্যবহার করে সাত দিনের গড় শনাক্তের হারকে সূচক হিসেবে ব্যবহার করে তথ্যচিত্রটি প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানান ডা. রোজেন।
এর আগে ১৪ থেকে ২০ জুনের করোনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেশের ৪০ জেলা অতি উচ্চ ঝুঁকিতে আছে বলে জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে সিআরআইডিএ বলছে, ২০ জুনের পর সংক্রমণের মাত্রা আরও অনেক বেড়ে গেছে। ফলে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলার সংখ্যাও বেড়েছে।
সংগঠনটির তথ্যমতে, ২০ জুনের পর সংক্রমণের মাত্রা আরও অনেক বেড়ে গেছে। সর্বশেষ তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে (১৮-২৪ জুন) দেখা যায়, দেশের ৫৯টি জেলা অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে (সাপ্তাহিক শনাক্তের হার ১০ শতাংশের বেশি)। এর মধ্যে ৩৯টি জেলায় সংক্রমণের হার ভয়াবহ পর্যায়ের (সাপ্তাহিক শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি)।
প্রতিষ্ঠানটি জানায়, মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে মৃত্যুহার বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। জুনের ১৮ তারিখে দৈনিক মৃত্যু ছিল ৫৪, যা সাত দিনের ব্যবধানে বেড়ে ১০৮ হয়েছে।
করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলো হলো- পাবনা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙামাটি। আর বাকি জেলাগুলো অতি উচ্চ ঝুঁকিতে। করোনার থাবা থেকে রক্ষা পেতে বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছে সংগঠনটি।
সংক্রমণ বাড়ার কারণ জানিয়ে সিআরআইডিএ বলছে, ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে বাংলাদেশে সংক্রমণ হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। বিপজ্জনক ভ্যারিয়েন্টগুলোর মধ্যে ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টটিই সবচেয়ে বেশি সংক্রামক। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অধিক সংক্রমণক্ষম যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট থেকেও কমপক্ষে ৪০ শতাংশ বেশি সংক্রামক এবং হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়।
ডা. শাহরিয়ার রোজেন বলেন, ‘ফাইজার এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার দুটি ডোজ ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিপক্ষে কার্যকর। তবে বাংলাদেশে খুব অল্প মানুষ ভ্যাকসিনের আওতায় আসায় (৪ শতাংশের কম) অধিকাংশ মানুষ প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে আছে। সংক্রমণের হার যদি ক্রমাগত বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা দিয়ে তা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে যাবে।