রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৭:৪৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
মধুপুরে কৃষকের মাঝে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মে‌শিন বিতরণ নওগাঁর পোরশায় পুলিশ সুপারের বাড়িতে চুরি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে দিন-দুপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ২ প্রথম মুক্তি যোদ্ধা নারী হলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জন্মদিন নওগাঁ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে গরুর ল্যাম্পি ডিজিজ রোগ নওগাঁসহ বিভিন্ন উপজেলায় ঔষধ ব্যবসায়ীদের দোকান বন্ধ রেখে সকাল-সন্ধা প্রতিকী ধর্মঘট মধুপুরে ছরোয়ার আলম খান আবু’র নির্বাচনী কর্মীসভা জনসভায় পরিনত নওগাঁর রাণীনগ-আত্রাই উপজেলায় তৃতীয় ধাপে ৩৮ জনের মনোনয়ন দাখিল নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলায় ইরি বোরো ধান কাটা-মাড়াইকরা শুরু বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতি ২০২৪-২০২৬ নির্বাচনে ঔষধ ব্যবসায়ী সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থীদের পূর্ণ প্যানেলে ভোট দিন মনোহরদীতে উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ,মাদ্রাসা ও ক্লাবের শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে উপজেলা সেচ্ছাসেবী পরিষদের অর্থায়নে অসহায় পরিবারের হাতে নির্মাণাধীন ঘরের চাবি হস্তান্তর কালাইয়ে হয়েছে রহমতের বৃষ্টি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দখল ও গাছ কাটার অভিযোগ লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাচনে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ১০ মাগুরায় প্রতিবেশীর হামলায় আহত ৪ চাঁদাবাজি,ভাংচুরের প্রতিবাদে ব্যবসায়ীর সংবাদ সম্মেলন নওগাঁর পত্নীতলায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় বিএনপি ২ নেতাকে শোকোজ ঘোষণা নওগাঁ দুর্ঘটনায় এনজিও কর্মী সঞ্জয় কুমার নিহত দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৮ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে

রাজধানীতে ২ দিনেে ৩ বস্তিতে আগুন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০
  • ১৯৭ বার পঠিত

রাজধানীতে দুই দিনে তিন বস্তিতে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। পরপর তিন বস্তিতে লাগা আগুনের ঘটনাকে রহস্যজনক বলে মনে করছেন বস্তিবাসীরা। আগুনে তিন বস্তির কয়েকশ ঘর পুড়ে গেছে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে- এসব বস্তিতে থাকা নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের সব স্বপ্ন। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন সহস্রাধিক মানুষ। খোলা আকাশের নীচে কোনো রকমে এখন তাদের বসবাস।
গত সোমবার রাতে অগ্নিকান্ড ঘটে মহাখালীর সাততলা বস্তিতে। পরদিন মোহাম্মদপুর বাবর রোডের বিহারিপট্টির পাশের বস্তিতে ও মিরপুরের কালশী বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন বাউনিয়াবাদের বস্তিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও পথে বসেছেন বস্তির নিম্ন আয়ের বহু মানুষ। শীতের রাতে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারিয়ে রাস্তার পাশে ফুটপাতে এখন তাদের আশ্রয়। দু‘মুঠো খাবারও জোটাছে না অনেকের। শিশু, নারী, বৃদ্ধরা সব চেয়ে বেশি কষ্টে আছেন। পোড়া বস্তির এমন অনেকে আছেন- যারা এক কাপড়েই দু‘দিন ধরে কাটাচ্ছেন। আগুন লাগার পর পরনের কাপড়টি ছাড়া আর কিছুই ঘর থেকে বের করে আনতে পারেননি। বস্তিবাসীদের অভিযোগ, এসব অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি এবং উচ্ছেদের কৌশল। প্রতি বছরই এসব অপতৎপরতার শিকার হচ্ছেন তারা। কিন্তু তাদের পুনর্বাসনে এগিয়ে আসছে না সরকার। আগুন লাগার পর কোনো কোনো নেতা এসে তাৎক্ষনিক শান্তনা দিলেও পরে আর কেউ খোঁজ নেয় না।
সর্বশেষ আগুন লাগে রাজধানীর মিরপুরের কালশী বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন বাউনিয়াবাদের বস্তিতে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া দুইটার লাগা আগুনে ৪৩টি ঘর পুড়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন পুড়েছে কয়েকশ ঘর। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মকর্তা রাসেল শিকদার বলেন, আগুনে ৪৩টি বসতঘর ও ১২টি দোকান পুড়ে গেছে। তবে এতে হতাহত হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি তদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।
গভীর রাতে একটি আধাপাকা ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। যা নিমিষেই সব পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। এতে সহায় সম্বলহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে হয়েছে শতাধিক মানুষকে। অগ্নিকাণ্ডের খবরে দ্রুত তা নির্বাপনে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় যখন আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে ততক্ষণে সব পুড়ে ছাই। মহাখালীর সাততলা বস্তির অগ্নিকাণ্ডের এক দিনের পার্থক্যে অসহায় সম্বলহীন হলো আরও অর্ধশত পরিবার। আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে সঠিক কোন ধারণা না দিলেও গ্যাস ও বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগকে দায়ী করছে ফায়ারসার্ভিস।
৭ বছর ধরে এই বস্তিতে থাকেন গার্মেন্ট শ্রমিক জুলহাস মিয়া। তিনি বলেন, দুই-এক বছর পরপরই এই বস্তিতে আগুন লাগে। কিন্তু এসব ঘটনার সুনির্দিষ্ট কারণ কখনোই জানা যায় না। জুলহাস আরও বলেন, বস্তির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কয়েকটি গ্রুপ আছে বলে জানি। তারা বিভিন্ন সময় বস্তির ঘর ভাড়া, পানি, গ্যাস এবং বিদ্যুৎ বিল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব লিপ্ত হন। বস্তিতে তাদের লোকজন মহড়া দেয়। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের কোন নেতারা বস্তি নিয়ন্ত্রণ করেন, তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি। স্থানীয় বাসিন্দা রাকিব হাসান বলেন, এই বস্তির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী দুটি গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এই বস্তির একক নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিকল্পিতভাবে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের পর বস্তি পরিদর্শনের সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বস্তির ভেতর অনেকগুলো ব্যাটারিচালিত রিকশার গ্যারেজ ছিল। এসব গ্যারেজে অবৈধভাবে বৈদ্যুতিক সংযোগ নেয়া হয়েছে।’ এর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে একই বস্তিতে মধ্যরাতে আগুন লাগে।
সাততলা বস্তিতে আগুন: সোমবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে মহাখালীর সাততলা বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় বস্তিটির ৬০-৭০টি বসতঘর ও দোকান পুড়ে যায়। এতে কেউ হতাহত হয়নি। গতকাল পর্যন্ত এ অগ্নিকাণ্ডের কারণ বের করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের তেজগাঁও স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মাহমুদুল হাসান বলেন, সাত তলায় আগুনের সূত্রপাত এখনও বের করা যায়নি। বস্তিবাসীও সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারছেন না। ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুনের সূত্রপাত। এদিকে আগুনে নিঃস্ব হয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়েছেন সাততলা বস্তির ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা থেকে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে তারা কোনো ধরনের সহায়তা পাননি। রিকশাচালক স্বামী ও দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এই বস্তির ছোট্ট একটি ঘরে থাকতেন রানু বেগম। গতকাল বুধবার সকালে তিনি জানান, আগুনে তার ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, কিছুই অবশিষ্ট নেই। ঘরে থাকা ৪০ হাজার টাকাও পুড়ে গেছে। এই শীতের রাতে বস্তির পাশে ফাঁকা জায়গায় বিছানা পেতে ঘুমিয়েছেন। আরেক বাসিনদা বলেন, আমি বৃদ্ধ মানুষ। কিছু নেই, ৫০ হাজার টাকা অনেক কষ্ট করে রেখেছিলাম, তাওপুড়ে ছাই হয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনের অভিযোগ, এই বস্তির প্রতিটি ঘর এবং দোকান অবৈধ। এসব দোকান ও ঘর থেকে প্রতিমাসে ভাড়া, বিদ্যুৎ এবং গ্যাস বিল বাবদ কয়েক লাখ টাকা চাঁদা তুলতেন স্থানীয় কাউন্সিলর সমর্থক ও যুবলীগের কয়েকজন নেতা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব রয়েছে। ভুক্তভোগীদের ধারণা, পরিকল্পিতভাবে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
বিহারী পট্টির পাশের বস্তিতে আগুন: সাততলা বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ১৫ ঘণ্টার মাথায় মোহাম্মদপুরে বাবর রোডের বিহারী পট্টি জহুরি মহল্লার পাশে বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে পুড়ে যায় শতাধিক ঘর। কিন্তু এই ঘটনার সূত্রপাতও উদঘাটন করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। সেখানকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এই বস্তির অধিকাংশ লোকজন মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগের বিভিন্ন গার্মেন্টস, ফ্যাক্টরি, কারখানায় কাজ করেন। অগ্নিকাণ্ডের সময় তাদের অনেকেই বাসায় ছিলেন না। এ ঘটনার পেছনেও বস্তি দখলের দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
আগুন লাগার ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা, না উদ্দেশ্যমূলক, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার বলে মনে করেন নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি গতকাল বুধবার গণমাধ্যমকে বলেন, আগুন লাগার পর কী ঘটে, সেটা দেখতে হবে। যদি দেখা যায়, এসব আগুন লাগার স্থানে আগের অধিবাসীদেরই রাখা হয়েছে, তবে ধরা হবে, এটা দুর্ঘটনা ছিল। আর যদি এসব স্থানে নতুন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে, তবে দুর্ঘটনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল বলে মনে করা যেতে পারে। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আরও বলেন, এসব দুর্ঘটনার ভুক্তভোগীদের সহায়তায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ সিটি করপোরেশনকে এগিয়ে আসতে হবে।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, গত বছর দেশে প্রায় ১৪৪টি বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই ২৫ বার বস্তিতে আগুন লাগে। এসব আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়েছে শত কোটি টাকা। তবে চলতি বছরে দেশে কতগুলো বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তা এখনও সমন্বয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Developed By cinn24.com
themesbazar24752150