ইবরাহীম খলিল :
আজ ১২ ডিসেম্বর সোমবার। একাত্তরের এই দিনে মুক্তিবাহিনী পাবনার ডেমরা এলাকা মুক্ত করেছিল। এছাড়া রংপুর ও সৈয়দপুরের দু’টো ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া বৃহত্তর রংপুর অঞ্চল মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ফরিদপুরের ভাটিয়াপাড়া ও সিলেটের হরিপুরে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রু সেনাদের ওপর চূড়ান্ত হামলা চালায়। এদিন বাংলাদেশের দক্ষিণে গভীর সমুদ্রে এসে থেমে ছিল মার্কিন সপ্তম নৌবহর। এদিন ভারতীয় সৈন্যদের সাথে নিয়ে ঢাকার দিকে এগিয়ে আসেন মুক্তিযোদ্ধারা।
এদিন লন্ডনের সান্ডে টাইমস পত্রিকায় তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সাংবাদিক নিকোলাস ক্যারল-এর নেয়া ঐ সাক্ষাৎকারে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, আমি সংসদে এবং জনসভায় অনেকবার পরিষ্কারভাবে বলেছি, আমাদের কারো কোনো ভোগ- দখল করার ইচ্ছা নেই।
পাকিস্তান যে সকল অঞ্চল জোর করে দখল করে রেখেছে, তুমি নিশ্চয়ই জানো, তা ভারতেরই অংশ সে অঞ্চলগুলোর ওপরও একই নিয়ম বর্তাবে। ….বাংলাদেশে, তাদের নেতা শেখ মুজিবকে বিশেষভাবে প্রয়োজন। ভারত কি করছে জানো, তাকে মুক্ত করার চেষ্টা করছে। বিজয়ের মাসের এদিন টাঙ্গাইলের অব্যবহৃত বিমানবন্দর ব্যবহার করে নামানো হয় ভারতীয় সেনা। ঢাকায় চারদিক ঘিরে মুক্তিযোদ্ধারা, মুক্তিসেনারা ঢাকা দখলের জন্য অবস্থান নেয়। বিমান থেকে অবতরণ করা ছত্রীসেনারা নাগরার বাহিনীর সাথে মিলিত হয়। মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর সঙ্গে হানাদারদের প্রচ- যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাদের হাতে ১৫ জন ভারতীয় সৈন্য এবং ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়। এ সময় মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর হাতে এক মেজরসহ শত্রুবাহিনীর ১৯ জন ধরা পড়ে। এদিন ফেনী থেকে চট্টগ্রাম যাবার পথে কুমীরা শত্রু ঘাঁটি থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর ওপর আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের আগমনের খবর পেয়ে বগুড়া শহরের এতিমখানা থেকে এলোপাতাড়ি গোলাবর্ষণ করে। বেশ কিছু নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায় এই বেপরোয়া গুলীবর্ষণে। এদিন নীলফামারীও মুক্ত হয়।
এদিকে নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমিন এদিন অত্যন্ত কঠোর ভাষায় ভারতকে পাকিস্তান ছেড়ে যেতে বলেন। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করতে গিয়ে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মাতৃভূমি রক্ষায় শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে সংকল্পবদ্ধ। তিনি ঘোষণা করেন, কোনো শক্তি নেই পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে পারে।