বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৯৭/৬
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৪.২ ওভারে ১৭৭
ফল: বাংলাদেশ ১২০ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০তে জয়ী
স্পোর্টস রিপোর্টার : শেষ পর্যন্ত টাইগারদের কাছে হোয়াইটওয়াশই হলো সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গতকাল শেষ ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ১২০ রানে। এই জয়ের ফলে টানা তিন ম্যাচে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাল ৩-০ ব্যবধানে। এটা নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। এই জয় দিয়েই আবার ওয়ানডেতে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে টানা অষ্টম জয় পেয়েছে তামিমরা। এই জয়ে ফলে আইসিসি সুপার লিগের টানা তিন ম্যাচ জিতে পূর্ণ ৩০ পয়েন্ট পেল বাংলাদেশ। গতকাল আগে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ২৯৭ রানের বিশাল স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে তামিম,সাকিব,মুশফির আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ হাফসেঞ্চুরি করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিপদে ফেলে দেয়। কারণ জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের টার্গেট ছিল ২৯৮ রান। ব্যাট করতে নেমে ৪২,২ ওভারে ১৭৭ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলে ১২০ রানের বড় জয় পায় টাইগাররা। আর তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ সিরিজ জয় করে ৩-০ ব্যবধানে।
জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে ২৯৭ রানের টার্গেটা কঠিনই ছিল। ব্যাট করতে নেমে দলীয় ৭ রানে প্রথম উইকেট হারায় দলটি। ওপেনার কির্জন ওটেলিকে ১ রানে থামিয়ে দেন বাংলাদেশের পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। আরেক ওপেনার সুনীল অ্যামব্রিসকেও শিকার করেন মুস্তাফিজ। লেগ বিফোর হবার আগে ১৩ রান করেন তিনি। এরপর মুস্তাফিজের সাথে উইকেট শিকারের আনন্দে মাতেন আগের ম্যাচের হিরো স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। চার নম্বরে নামা কাইল মায়ারসকে ১১ রানে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন তিনি। এতে ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে সফরকারীরা। সেই চাপ আরও বাড়িয়ে দেন শেষ ম্যাচে সুযোগ পাওয়া সাইফউদ্দিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক মোহাম্মেদ ও এনকুমার বোনারকে বিদায় দেন সাইফউদ্দিন। বুনার ৩১ ও মোহাম্মেদ ১৭ রান করে আউট হন। ৯৩ রানে পাঁচ ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে ফিরে যাওয়ায় ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলকে ম্যাচে ফেরাতে এক প্রান্ত আগলে লড়াই করেন রোভম্যান পাওয়েল। তবে অপরপ্রান্ত দিয়ে একে একে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেট তুলে নিতে থাকেন বাংলাদেশের বোলাররা। সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন পাওয়েল। তাকে ৪৭ রানে বিদায় করেন সাত নম্বর বোলার হিসেবে আক্রমনে আসা মিডিয়াম পেসার সৌম্য সরকার। পাওয়েলের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে কিছুটা লড়াই করেন রেইফার। তার ২৭ রান হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। রেইফারকে নিজে ডেলিভারি নিজেই ক্যাচ নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের ইতি টানেন সিরিজে প্রথমবারের মত খেলতে নামা পেসার তাসকিন আহমেদ। শেষ পর্যন্ত ৪৪ দশমিক ২ ওভারে ১৭৭ রানে অলআউট হয় ক্যারিবীয়রা। বাংলাদেশের পক্ষে সাইফউদ্দিন শেষ পর্যন্ত পেয়েছেন তিন উইকেট। মিরাজ আর মোস্তাফিজ নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। এছাড়া তাসকিন আহমেদ উইকেট নিয়েছেন। এরআগে. উইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ টস জিতে টাইগারদের প্রথমে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায়। অধিনায়ক তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অর্ধধতকে ভর করে ৬ উইকেটে ২৯৭ রানের সংগ্রহ দাঁড়ায় বাংলাদেশ। তবে প্রথম ওভারেই লিটন দাসকে এলবি’র ফাঁদে ফেলেন আলজারি জোসেপ। লিটন দ্রুতই ফেরার পর শান্তকে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ওঠেন তাইম ইকবাল। তবে ৯ম ওভারে কাইল মায়ার্সের বলে এলবি হয়ে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্তু ২০ রান করে। আর তাতেই মাত্র ৩৮ রানে টপ অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যানকে হারায় বাংলাদেশ। এরপর উইকেটে আসেন সাকিব আল হাসান। তার সঙ্গে দুর্দান্ত জুটি গড়ে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দিয়ে বড় জুটির দিকে যান অধিনায়ক তামিম। এরপর অর্ধশতক তুলে নেন তামিম ইকবাল। তবে অর্ধশতক হাঁকানোর পর আর বেশি সময় উইকেটে থাকতে পারেননি টাইগার অধিনায়ক। আলজারি জোসেপের বলে আকিল হোসেনের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন তামিম। এর আগে অবশ্য সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৯৩ রানের বিশাল জুটি গড়েন তিনি। তামিম ফেরেন ৮০ বলে তিনটি চার ও একটি ছয়ে ৬৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। তামিম ফিরলে মুশফিকের সঙ্গে ৪৮ রানে জুটি গড়েন সাকিব। ৩৭তম ওভারে রেইফ্রি বলে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে ৮১ বলে ৫১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন সাকিব। সাকিব ফিরলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে বড় জুটি গড়েন মুশফিক। মুশফিকুর রহিম তুলে নেন নিজের ৩৯তম অর্ধশতক। অন্য প্রান্ত থেকে দুর্দান্ত সমর্থন দেন রিয়াদ। কিন্তু শেষ দিকে ঝড়ো ব্যাট করতে গিয়ে মুশফিক ফেরেন ৫৫ বলে ৬৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে। মুশফিক তার ইনিংস সাজান ৪টি চার ও দুটি ছয়ে। এরপর রিয়াদ অর্ধশতক তুলে নেন। শেষ দিকে সৌম্য ৭ রানে আউট হলেও মাত্র ৪৩ বলে তিনটি চার ও তিনটি ছয়ে ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন রিয়াদ। উইন্ডিজের পক্ষে দুটি করে উইকেট নেন আলজারি জোসেপ আর রেমন রেইফি। এছাড়া একটি উইকেট নেন কাইলা মায়ার্স।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৯৭/৬ (তামিম ৬৪, লিটন ০, শান্ত ২০, সাকিব ৫১, মুশফিক ৬৪, মাহমুদউল্লাহ ৬৪*, সৌম্য ৭, সাইফ ৫*;।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৪.২ ওভারে ১৭৭ (ওটলি ১, আমব্রিস ১৩, বনার ৩১, মেয়ার্স ১১, জেসন ১৭, পাওয়েল ৪৭, হ্যামিল্টন ৫, রিফার ২৭, জোসেফ ১১, আকিল ০, হার্ডিং ১*।
ফল: বাংলাদেশ ১২০ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০তে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম।
ম্যান অব দা সিরিজ: সাকিব আল হাসান।