করোনাভাইরাস দমনে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা চলতি মাস শেষ হওয়ার আগেই অনুমোদন পাওয়ার ‘প্রবল’ সম্ভাবনা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিষেধকটির প্রধান আবিস্কারক। টিকাটির কার্যকারিতা নিয়ে নানা সংশয়ের মধ্যেই তিনি এ আশার বাণী শোনালেন। কভিশিল্ড নামের এই টিকাটিই মূলত উন্নয়নশীল দেশগুলোর মূল ভরসা।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিনোলজির অধ্যাপক এবং টিকাটির প্রধান আবিস্কারক সারা গিলবার্ট বিবিসিকে বলেছেন, যুক্তরাজ্য সরকার টিকাটির পরীক্ষার তথ্য পর্যালোচনা করছে। চলতি মাসের শেষ নাগাদ এটির অনুমোদন পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাজ্য সরকার ইতোমধ্যে এ টিকার ১০ কোটি ডোজ কিনে নিয়েছে। অনুমোদন না পেলেও এর ৪০ লাখ ডোজ বিতরণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ টিকার দাম প্রতিযোগীগুলোর চেয়ে অনেক কম। অক্সফোর্ডের প্রতি ডোজের দাম পড়বে দুই ডলার (১৭০ টাকা) এবং ২ থেকে ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এটি সংরক্ষণ করা যায়।
অধ্যাপক গিলবার্ট বলেন, করোনা মহামারি মোকাবিলার জন্য একাধিক টিকা দরকার। সম্ভব হলে বিভিন্ন প্রযুক্তিতে তৈরি কয়েকটি টিকা থাকাই ভালো। তিনি বলেন, এক ধরনের টিকা হলে এর কাঁচামালের সংকট দেখা দিতে পারে। যত বেশি টিকা হবে কাঁচামাল সংকটও তত কম হবে।
ভারত-অস্ট্রেলিয়াতেও অনুমোদনের আশা: অক্সফোর্ডের বহুল প্রত্যাশিত টিকা নিয়ে ভারত ও অস্ট্রেলিয়াও আশা জাগানিয়া খবর দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় জানুয়ারির শেষ দিকে টিকাটির অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেগ হান্ট রোববার জানিয়েছেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা সরকারকে টিকার প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করছে। এই টিকাটি ৭০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর বলে পরীক্ষায় দেখা গেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকার কার্যকারিতা কিছুটা কম হলেও বেশি মানুষকে তা দেওয়া হলে একটি সুফল দেবে।
এদিকে বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট বলেছে, আগামী বছরের প্রথমার্ধেই ভারতে অক্সফোর্ডের টিকা বিতরণ শুরু হবে। ভারতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার কান্ট্রি প্রেসিডেন্ট গগনদীপ সিং বলেছেন, তাদের কোম্পানি ৩০০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহের জন্য ১৬০টি দেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে। বাংলাদেশও সিরামে উৎপাদিত অক্সফোর্ডের টিকা কেনার জন্য চুক্তি করেছে।
হোয়াইট হাউসের কর্মীদের এখনই টিকা নয়- ট্রাম্প: যুক্তরাষ্ট্রে গতকাল থেকে টিকাদান শুরু হচ্ছে। প্রথম দফায় হোয়াইট হাউসের কর্মীদের টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনই হচ্ছে না। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউসের কর্মীদের আরও কিছুদিন পরে টিকা দেওয়া হবে।
এর আগে কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন যে, ট্রাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের প্রথম দফায় টিকা দেওয়া হবে। টিকা বিতরণ তদারকির দায়িত্বে থাকা জেনারেল গুস্তাভ পার্না জানান, প্রথম দফায় হোয়াইট হাউস কর্মীদের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল। কিন্তু এই পরিকল্পনা সমন্বয় করার কথা বলছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
আমিরাতে চীনের টিকাদান শুরু: সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে চীনের সিনোফার্মের তৈরি টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে বলে গতকাল দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আগেই এ টিকা অনুমোদন করেছিল উপসাগরীয় ধনী দেশটি। আমিরাত ছাড়াও বাহরাইন, তুরস্ক, ব্রাজিলসহ বেশকিছু দেশে সিনোফার্মের টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা হয়েছে। আমিরাতে পরীক্ষায় টিকাটি ৮৬ শতাংশ কার্যকর বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। চীন মোট চারটি টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চালাচ্ছে।
কানাডায় টিকাদান শুরু: কানাডায় পৌঁছেছে ফাইজারের কভিড-১৯ টিকা। রোববার রাতে টিকার ডোজ নিয়ে একটি কার্গো বিমান কানাডায় অবতরণ করেছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক টুইট বার্তায় এ কথা জানিয়েছেন। গতকাল থেকে দেশটিতে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে কানাডার ১৪টি স্থানে টিকার ৩০ হাজার ডোজ পাঠানো হবে। শুরুতে করোনায় বেশি ঝুঁকিতে থাকা লোকজন বিশেষ করে বয়স্কদের এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের আগে টিকা দেওয়া হবে। এর আগে শুক্রবার বেলজিয়াম থেকে টিকার ডোজ পাঠানো হয়। সেখান থেকে তা জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র হয়ে কানাডায় পৌঁছায়।
সিঙ্গাপুরে ফাইজারের টিকা অনুমোদন: ফাইজার-বায়োএনটেকের কভিড-১৯ টিকা অনুমোদন করেছে সিঙ্গাপুর। ডিসেম্বরের শেষেই দেশটিতে টিকা দেওয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং।
তিনি জানান, এই টিকার প্রথম চালান সিঙ্গাপুরে পৌঁছাতে পারে এ মাসের শেষের দিকে। আর ২০২১ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের মধ্যেই সিঙ্গাপুরে প্রত্যেকের জন্য পর্যাপ্ত টিকা পাওয়ার আশা আছে। সিঙ্গাপুরের সব নাগরিক এবং সেখানে দীর্ঘ সময় বসবাসকারীদের বিনামূল্যে এই টিকা দেওয়া হবে বলেও লি জানিয়েছেন।
সিঙ্গাপুরে স্বাস্থ্যসেবাকর্মী, সামনের সারিতে থেকে কাজ করে যাওয়া কর্মী, বয়স্ক এবং কভিড-১৯ এর ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের সবার আগে টিকা দেওয়া হবে। তারপর টিকা নেবেন প্রধানমন্ত্রী ও অন্য কর্মকর্তারা। সূত্র :এএফপি, রয়টার্স, পিটিআই, ডেইলি মেইল ও আলজাজিরা।