নওগাঁয় তিন দিনব্যাপী গ্রামবাংলার ঐতিহ্য গাদন খেলা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) বিকেল ৪টায় সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের চকবিক্রম (কালুর মোড়) এলাকায় এ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। স্থানীয় সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর হাঁপানিয়া আঞ্চলিক কমিটি এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
প্রধান অতিথি হিসেবে খেলার উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রাকিবুল ইসলাম। এ সময় নওগাঁর কৃতি সন্তান প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদেরকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে ও যুব সমাজকে রক্ষা করতে প্রতি বছর এ খেলা আয়োজন করার দাবি জানান স্থানীয়রা।
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা গাদন। একসময় এই খেলা গ্রামাঞ্চলে খুবই জনপ্রিয় ছিল। গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও খেটে খাওয়া মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে খেলাটি হারিয়ে যেতে বসেছে।
গ্রামীণ এ খেলা দেখতে মাঠের চারপাশে ভিড় করেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ। লখাইজানি গ্রামের ৯০ বছরের বৃদ্ধ আবেদ আলী গাদন খেলা দেখতে এসেছেন। একটি চেয়ারে বসে তিনি মনোযোগ সহকারে খেলা দেখছিলেন আর যুবক বয়সের খেলার স্মৃতিচারণ করছিলেন।
তিনি বলেন, ‘প্রায় ৪০ বছর গাদন খেলেছি। পাশাপাশি হাডুডু খেলা হতো। সে সময় প্রতিটি গ্রামেই শীত, বর্ষা ও গ্রীষ্ম সারা বছরই এ খেলা হতো। সেসব খেলা এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। এখন শুধুই স্মৃতি হয়ে আছে। এ যুগের ছেলেরা শুধু লাঠি (ক্রিকেট) খেলছে।’
হাঁপানিয়া গ্রামের রুপান্তর পাঠাগারের পরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘গাদন হচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী একটি বিলুপ্তপ্রায় খেলা। নতুন প্রজন্ম জানে না গাদন খেলা আসলে কি। তাদের কাছে মনে হতে পারে এটি একটি হাস্যকর খেলা। মাদকাসক্তির পাশাপাশি যুবসমাজ বা তরুণসমাজ এখন মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়েছে। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে ও তরুণদের রক্ষা করতে খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই।’
একুশে পরিষদ নওগাঁর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আল মেহমুদ রাসেল বলেন, হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ গাদন খেলা নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করতে গত তিন বছর ধরে এ আয়োজন করা হচ্ছে।
গাদন খেলতে পক্ষ-বিপক্ষ মিলে ১০ জন খেলোয়াড় লাগে। খেলার শুরুতে গাদনের একটি ঘরে একটি পক্ষের পাঁচজন অবস্থান নেন। এ ঘর থেকে তারা বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
আরেকটি পক্ষের দুই খেলোয়ার গাদনের ঘরের খেলোয়াড়দের আটকানোর চেষ্টা করেন। একসময় তারা ঘর থেকে বেরিয়ে যান। বাকি তিনজন তিন ঘরে প্রতিজনকে আটকানোর চেষ্টা করেন।
ঘর থেকে যেসব খেলোয়াড় বেরিয়ে যান তাদের যে কেউ একজন সব ঘর ঘুরে এসে গাদনের ঘরে প্রবেশ করলে এক পয়েন্ট যোগ হয় বা এক গাদন হয়েছে বলা হয়।
খেলার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গাদনের ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় যদি প্রতিপক্ষ স্পর্শ করতে পারেন তাহলে যাকে স্পর্শ করা হয়েছে তিনি বাদ পড়ে যান। এমনটা হলে যারা গাদনের ঘর প্রতিরক্ষা করার চেষ্টা করছিলেন তারা ঘরে প্রবেশ করবেন। আর যারা ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তারা ঘর প্রতিরক্ষা করবেন।।