শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় দিয়ে শুরু করেছিল টাইগাররা। গতকাল দ্বিতীয় ম্যাচে জিতে টানা দুই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। গতকাল বাংলাদেশ ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে জয় পেয়েছে ১০৩ রানে। প্রথমে ব্যাট করে মুশফিকের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ অলআউট হয় ২৪৬ রানে। ফলে জয়ের জন্য শ্রীলংকা পায় ২৪৭ রানের টার্গেট। ব্যাট করতে নেমে শ্রীলংকা ৩৮ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৬ রান করার পর বৃষ্টির কারনে খেলা বন্ধ হয়। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে দলটির সামনে নতুন টার্গেট দাড়ায় ৪০ ওভারে ২৪৫ রান। দলটির হাতে ছিল এক উইকেট। শেষ পর্যন্ত ৪০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪১ রান করলে বাংলাদেশ জয় পায় ১০৩ রানে। জয়ের জন্য শ্রীলংকার সামনে টার্গেট ছিল ২৪৭ রান। টার্গেটটা খুব কঠিন ছিল না সফরকারীদের সামনে। কিন্তু ব্যাট করতে নেমে টাইগার বোলারদের সামনে ভালো করতে পারেননি কোন ব্যাটসম্যান। অবশ্য শুরুতে দেখে শুনেই ব্যাট করছিলেন দুই ওপেনার দানুশকা গুনাথিলাকা ও কুশল পেরেরা। কিন্তু অভিষিক্ত পেসার শরিফুলের গতির কাছে টিকতে পারলেন না পেরেরা। পেরেরা ফিরেছেন ১৪ রানে। এর পর গুনাথিলাকা ও পাথুম নিসাঙ্কা জুটি গড়ে সেই ধাক্কা সামাল দিতে থাকেন। তবে মোস্তাফিজের আঘাতে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি এই জুটি। মোস্তাফিজের বলে ক্যাচ দিয়ে ২৪ রানে ফিরেছেন গুনাথিলাকা। মোস্তাফিজের পর সফল আঘাত হানেন সাকিব। পাথুম নিসাঙ্কার উইকেট তুলে নিয়ে সাকিব শ্রীলংকাকে চাপে ফেলে দেন। ২০ রানে ফিরেন নিসাঙ্কার। শ্রীলংকার বিপদ আরও বাড়িয়ে দেন মেহেদী মিরাজ। এলবির ফাঁদে ফেলে ১৫ রানে কুশল মেন্ডিসকে ফেরান মিরাজ। মিরাজের পর আবার সাকিবের সফল আক্রমন। এবার ১০ রান করা ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা এলবি আউট করেন সাকিব। ফলে ৮৯ রানে প্রথম ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ক্রমেই ছিটকে পড়ে লংকানরা। আশেন বান্দারার সাথে জুটি করে ব্যাট করতে নেমে দাসুন শানাকা দলকে শতরানে নিয়ে গেলেও বেশি টিকতে পারেননি। দলীয় ১০৬ রানে ফিরতে হয়েছে তাকেও। মিরাজের বলে মাহমুদুল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে শানাকা করেন ১১ রান। দলীয় ১১৪ রানে আরো একটি উইকেট হারায় শ্রীলংকা। এবার হাসারাঙ্গাকে বিদায় করেন মিরাজ। ৬ রানে তাকে বোল্ড করেন মিরাজ। দলীয় ১১৬ রানে বান্দারাকে আর দলীয় ১২২ রানে সান্দারানকে ফিরিয়ে মোস্তাফিজ দলের জয় প্রায় নিশ্চিত করেন। কারণ ১২২ রানেই ৯ উইকেট হারায় শ্রীলংকা। বান্দারা আউট হন ১৫ রান করে। তবে বাংলাদেশের নিশ্চিত জয়ের পথে বৃষ্টির কারনে ৩৮ ওভারের পর খেলা সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। শ্রীলংকা তখন ৯ উইকেটে ১২৬ রানে ব্যাট করছিল। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে জয়ের জন্য শ্রীলংকার সামনে নতুন টার্গেট দাড়ায় ৪০ ওভারে ২৪৫ রান। কিন্তু দলটি ৯ উইকেটে করতে পারে ১৪১ রান। বাংলাদেশের পক্ষে মেহেদী হাসান মিরাজ আর মোস্তাফিজ নেন ৩টি করে উইকেট। সাকিব নেন দুটি উইকেট। এরআগে, টস জিতে ব্যাট করতে নেমে সবকটি উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করে ২৪৬ রান। সেঞ্চুরিসহ ১২৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন মুশফিক। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নিয়ে অধিনায়ক তামিম সতীর্থ লিটন দাসকে নিয়ে ইনিংস শুরু করেন। প্রথম ওভারে ১৫ রান তুলেন দারুণ শুরু করেন তামিম-লিটন জুটি। তবে এই ওপেনিং জুটি বেশি সময় টিতে থাকতে পারেনি। দ্বিতীয় ওভারে পেসার দুশমন্থ চামিরার প্রথম বলেই লেগ বিফোর হন তামিম। রিভিউ নিয়ে তামিমকে শিকার করেন চামিরা। ৬ বলে ৩টি চারে ১৩ রান করেন টাইগার অধিনায়ক। তামিমের বিদায়ের পর উইকেটে গিয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিন নম্বরে নামা সাকিব আল হাসান। রানের খাতা খোলার আগে তিন বল খেলে থামতে হয় তাকে। চামিরার বলে সাকিবও লেগ বিফোর হন। ফলে ১৫ রানেই প্রথম দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তৃতীয় উইকেটে ৩৪ রানের জুটি গড়ে শুরুর ধাক্কা সামালে উঠার চেষ্টা করেন লিটন ও মুশফিক। লিটনকে ব্যক্তিগত ২৫ রানে থামিয়ে জুটি ভাঙ্গেন শ্রীলংকার স্পিনার লক্ষণ সান্দাকান। কিছুক্ষণ বাদে আবারো বাংলাদেশ শিবিরে আঘাত হানেন সান্দাকান। এবার সান্দাকানের শিকার হন মোসাদ্দেক হোসেন। ১২ বলে ১০ রান করেন মোসাদ্দেক। ফলে ৭৪ রানে চার উইকেট হারিয়ে আবারো চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে প্রথম ম্যাচের মতো এবারও নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন মুশফিক-মাহমুুদুল্লাহ। পরিস্থিতিকে সামলে নিয়ে উইকেট ধরে খেলতে থাকেন মুশফিক-মাহমুুদুল্লাহ। এরপর রানের গতি সচল করে বাংলাদেশের স্কোর দেড়শ পার করেন মুশফিক-মাহমুুদুল্লাহ। তবে সান্দাকান বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৫৮ বলে ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪১ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। মুশফিকের সাথে পঞ্চম উইকেটে ১০৮ বলে ৮৭ রান যোগ করেন তিনি। ১৬১ রানে মাহমুদুল্লাহর আউটের পর দ্রুত আরও দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ১৮৪ রানের মধ্যে পতন হয় আফিফ হোসেন ও মেহেদি হাসান মিরাজের। আফিফ ১০ ও মিরাজ শুন্য রানে ফিরেন। এরপর মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন মুশফিক। দু’দফায় বৃষ্টিতে বন্ধও হয় খেলা। বৃষ্টিতে বন্ধ হবার আগে ৯৬ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। আর বাংলাদেশের রান ছিলো ৪৩ দশমিক ৩ ওভারে ২১৩। বিকেল ৫টা ১৭ মিনিটে পুনরায় খেলা শুরু হলে শ্রীলংকার পেসার চামিরার বলে বাউন্ডারি মেরে ২২৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে অষ্টম সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক। ১১৩ বলে সেঞ্চুরি পুর্ন করেন তিনি। মুশফিকের সেঞ্চুরির পর সাইফুদ্দিন থামেন ১১ রানে। ৩০ বল খেলেছেন তিনি। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা শরিফুল ইসলাম রানের খাতা খুলতে পারেননি। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে আউট হন মুশফিক। চামিরার তৃতীয় শিকার হবার আগে ১২৭ বলে ১২৫ রান করেন তিনি। ৪৮.১ ওভারে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রান করে বাংলাদেশ। শ্রীলংকার চামিরা-সান্দাকান ৩টি করে উইকেট নেন।