সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৮:২০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কালাই উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক (কলেজ) নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুল মান্নান মানুষের মনকে পুলকিত করছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য কৃষ্ণচূড়া ফুল মধুপুরে চুরি করতে গিয়ে গৃহবধূকে হত্যার চেষ্টা- চোর গ্রেফতার দুপচাঁচিয়ায় বার্মিচ চাকু সহ এক যুবক ও মাদক বিক্রেতা সহ গ্রেপ্তার ৯ জন শপথ নিলেন লালমনিরহাট জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শ্যামল গাইবান্ধার সাঘাটায় হারভেস্টার মেশিনে ধানের গাছ কর্তন আনন্দে কৃষক  মাগুরা মহম্মদপুরে স্ত্রীর নির্যাতনে স্বামীর মৃত্যুর অভিযোগ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও তার স্ত্রীকে নিয়ে ওমরাহ পালন নওগাঁর পোরশায় বিভিন্ন এতিমখানায় ৩৬ লক্ষ চব্বিশ হাজার টাকা চেক বিতরণ দুপচাঁচিয়ায় জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী জনাব আলহাজ্ব মোঃ আবুল কালাম আজাদ এর মতবিনিময় সভা নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহক কল্যাণ সমিতির কমিটি গঠন মধুপুরে কৃষকের মাঝে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মে‌শিন বিতরণ নওগাঁর পোরশায় পুলিশ সুপারের বাড়িতে চুরি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে দিন-দুপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ২ প্রথম মুক্তি যোদ্ধা নারী হলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জন্মদিন নওগাঁ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে গরুর ল্যাম্পি ডিজিজ রোগ নওগাঁসহ বিভিন্ন উপজেলায় ঔষধ ব্যবসায়ীদের দোকান বন্ধ রেখে সকাল-সন্ধা প্রতিকী ধর্মঘট মধুপুরে ছরোয়ার আলম খান আবু’র নির্বাচনী কর্মীসভা জনসভায় পরিনত নওগাঁর রাণীনগ-আত্রাই উপজেলায় তৃতীয় ধাপে ৩৮ জনের মনোনয়ন দাখিল

সাপের ‘বন্ধু’ রোমন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ১৭৬ বার পঠিত

একটা সাপেরও বিষদাঁতা ভাঙা নেই। তারপরও অনায়াসে এসব সাপ ধরেন বোরহান বিশ্বাস রোমন। সাপেরা কিলবিল করে তার হাত পেঁচিয়ে ধরে, হাতের ওপর খেলা করে, ফনা তুলে মুখের দিকে তাকায়। কিন্তু ছোবল দেয় না। সাপেরা রোমনের সঙ্গে ঠিক বন্ধুর মতো আচরণ করে।

প্রায় এক যুগ ধরে সাপের সঙ্গে রোমনের এমন বন্ধুত্ব। রোমন আহত সাপ উদ্ধার করে চিকিৎসা দেন। তারপর প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে দেন। এ জন্য একটা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন তিনি। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘সাপ উদ্ধার ও সংরক্ষণ কেন্দ্র’। রাজশাহীর পবা উপজেলার ধর্মহাটা গ্রামে এই প্রতিষ্ঠানটি। রোমন ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেছেন।

সম্প্রতি পঞ্চগড়ে পাওয়া দেশের একমাত্র ‘রেড কোরাল কুকরি’ সাপটি রোমনের সাপ উদ্ধার ও সংরক্ষণ কেন্দ্রেই আছে। শরীরে গুরুতর জখম থাকা সাপটির পরিচর্যা চলছে। কমলা রঙের এই সাপটির বাংলা কোন নামও ছিল না। রোমন এর বাংলা নাম রেখেছেন ‘কমলাবতী’। সুস্থ হলে সাপটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ভেনম রিসার্চ সেন্টারে নেয়া হবে। রোমন সেখানকার একজন প্রশিক্ষক। বনবিভাগ প্রতিনিয়তই সাপটির খোঁজখবর রাখছে।

রোমন বনবিভাগের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে সাপ ধরার কলাকৌশল শেখান। অথচ সাপ রাখার জন্য বনবিভাগ ২০১১ সালে তার নামে মামলা করেছিল। বন্যপ্রাণী নিজ হেফাজতে রেখে বিষ সংগ্রহ করে অভিযোগ আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২০১৬ সালে আদালত রোমনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। এখন রোমনই ভরসা হয়ে উঠেছে সবার। বাসাবাড়িতে সাপ ঢুকে পড়লে তার কাছে কল আসে। রোমন সাপটিকে মেরে না ফেলার অনুরোধ করেন। তারপর যেখানে যেখানে যাওয়া সম্ভব তিনি ছুটে যান। সাপটিকে উদ্ধার করে নিজের প্রতিষ্ঠানে আনেন। গবেষণা করেন। তারপর ছেড়ে দেন।

রোমন বলছিলেন, কিশোর বয়স থেকেই তিনি বন্যপ্রাণীদের বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। ১৫-১৬ বছর আগে তিনি বন্যপ্রাণীদের নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। খেয়াল করলেন, সবাই পাখি আর স্তন্যপায়ী প্রাণীদের নিয়ে কাজ করছে। কেউ সরীসৃপের বিষয়ে আগ্রহী নয়। তিনি ঠিক করলেন, সরীসৃপদের নিয়ে তিনিই কাজ করবেন। এরপর ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে সাপ ধরার প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন। তারপরই নিজেদের গ্রামে গড়ে তোলেন সাপ উদ্ধার ও সংরক্ষণ কেন্দ্র। সাপ উদ্ধার করে এখানে রাখতে শুরু করেন। চলতে থাকে চিকিৎসা। কিন্তু গ্রামের মানুষ এটিকে ‘সাপের খামার’ হিসেবে ডাকতে শুরু করেন। দিনে দিনে সবখানেই ছড়িয়ে পড়ে যে এটি সাপের খামার। প্রশাসনে এর খারাপ প্রভাব পড়ে।

২০১১ সালে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ রোমনের সাপ উদ্ধার ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে অভিযান চালায়। তারা সেখানে ৮৫টি সাপ পান। সাপগুলোকে জব্দ করে রোমনের কাছেই রাখা হয়। কারণ, সাপ ধরার মতো কর্মী এবং সংরক্ষণ করার মতো কোন জায়গা তাদের ছিল না। পরে সেদিনই রোমনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। জব্দ করা সাপগুলোর বিষয়ে পরে অবশ্য আর কেউ কোনদিন খোঁজ নেয়নি। বয়সের কারণে বেশিরভাগ সাপ মারা যায়। আর কিছু সাপকে ছেড়ে দিয়ে রোমন পড়াশোনায় মনোযোগী হন। মাঝে এমফিল করতে যান সিঙ্গাপুরেও। এর আগে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মলিকুলার বায়োলজিতে অনার্স এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে মাস্টার্সও শেষ করেন। পড়াশোনা শেষ করে রোমন আবার সাপ উদ্ধার, চিকিৎসা, গবেষণা এবং পরে ছেড়ে দেয়ার দিকে মনোযোগী হন।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিকালে রোমনের সাপ উদ্ধার ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, এখানে রয়েছে লেজার ব্ল্যাক রেইট, রাসেল ভাইপারসহ কয়েক প্রজাতির বিষধর সাপ। দুটি মৃত সাপকে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে গবেষণার জন্য।

বিরল রেড কোরাল কুকরি সাপটির জখমের স্থানে অনেকগুলো সেলাই দেয়া হয়েছে।

রোমন জানালেন, এক্স-রে করার ব্যবস্থা থাকলে সাপটির ভেতরের অবস্থা জানা যেত। কিন্তু সেই ব্যবস্থা নেই। বিদেশে অনেক ভাল ভাল ওষুধও আছে। বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। পেলে আহত সাপটি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠত।

রোমন জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্রকল্পে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভেনম রিসার্চ ইনস্টিটিউট করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন কর্মকর্তা যিনি জার্মানির একজন শিক্ষক তিনি তার সম্পর্কে জানতেন। তিনিই রোমনকে ভেনম রিসার্চ ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষক হিসেবে নেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি চাকরি করতে রাজি হননি। তবে চুক্তিভিত্তিক তিনি কাজ করতে আগ্রহী হন। সেভাবেই সেখানে কাজ করছেন। পুলিশের জরুরি সেবা কেন্দ্রে তার মোবাইল নম্বরটি রাখা হয়েছে। কোথাও সাপ নিয়ে কেউ বিড়ম্বনায় পড়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে রোমেনের নম্বর দেয়া হয়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে এত বেশি পরিমাণ কল আসে যে রোমন সবখানে যেতে পারেন না। তাই দেশের সবজেলায় অন্তত একজন করে তার কর্মী তৈরির কাজ শুরু করেছেন রোমন।

তিনি বলেন, ‘সাপ ধরতে হলে যেমন সাহসের প্রয়োজন তেমনি সাপের প্রতি অগাধ ভালবাসাও থাকতে হবে। সে রকম লোক খুঁজে পাওয়া আসলেই কঠিন। তারপরও আমি অন্তত ১৫ জেলায় ১৫ জনকে তৈরি করতে পেরেছি। রাজশাহী ও চট্টগ্রামে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আমি চাই দেশের সব জায়গায় এমন কর্মী তৈরি হবে। আমার স্বপ্ন- দেশের একজন মানুষও সাপের কামড়ে মারা যাবে না। মানুষও একটা সাপকে পিটিয়ে হত্যা করবে না।’

সাপের সঙ্গে বন্ধুত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এটা আসলে জানি না কেন, সব বন্যপ্রাণীই আমার সঙ্গে ভাল আচরণ করে। একবার ভাল্লুকের সামনে পড়লেও সে কিছু বলেনি। এখানে আমার কয়েকজন কর্মী আছে যারা সাপ দেখাশোনা করে, তাদের সঙ্গে সাপ অন্যরকম আচরণ করে। কিন্তু আমি গেলেই তারা শান্ত হয়ে যায়। আমার কাছে মনে হয়, সাপের সঙ্গে আমি চোখে চোখে কথা বলতে পারি। সাপ আমার চোখের ভাষা বোঝে। সাপ খুব ভীতু। ভয় পেলেই সে আক্রমণাত্বক হয়। আমি এটা বুঝি যে, কীভাবে ধরলে সে ভয় পাবে না।’

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান বলেন, বোরহান বিশ্বাস রোমন আমাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। তাকে আমরা আমাদের কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে ডাকি। তার কাছ থেকে আমরা নানা পরামর্শ নিয়ে থাকি। কারণ, এখনও পর্যন্ত রাজশাহীতে আমাদের একজনও সাপ ধরার এক্সপার্ট নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Developed By cinn24.com
themesbazar24752150