রেলমন্ত্রী মো: নুরুল ইসলাম সুজন এমপি বলেছেন, সেবার মান বাড়াতে জনবল নিয়োগে রেলের নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ হাজার জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, জনবল ও কাঠামোর অভাব ঘুচিয়ে সার্মথ্য বাড়ানো গেলে ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে রেল যোগাযোগ আরো ত্বরান্বিত হবে। এটি রেলের ইতিহাসে আরো একটি নতুন মাইলফলক হবে।
শুক্রবার দুপুরে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ও রেলওয়ের বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বিভিন্ন পক্ষ রেলের জায়গা দখল করছে অভিযোগ তুলে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘অবৈধভাবে দখল করা জায়গা উদ্ধার করে শিগগিরই মালামাল রাখার জন্য আইসিটি টার্মিনাল স্থাপন করা হবে। রেলের জায়গা আর বেদখল রাখা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘রাজশাহী থেকে ভারতের সাথে রেল যোগাযোগের সম্ভাবতা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। সবাই তো ব্যবসায়ীক চিন্তা করে। আমাদের বাংলাদেশের ওপর দিয়ে কতোটুকু এলাকা চলবে, তার উপরে ট্যারিফ হবে, ভাড়া হবে। ভারতের জমির ওপর দিয়ে নেপাল যেতে হলে বহু অংশ যাবে। তাই এটি যদি দিনাজপুরের বিরল হয়ে করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ বেশি লাভবান হবে। ব্যবসাটা আমাদের চিন্তুা করতে হয়।’
রাজশাহী হয়ে ভারত পর্যন্ত রেল যোগাযোগ আপাতত না হলেও পণ্য পরিবহন বেড়েছে বলে জানান রেলমন্ত্রী। তিনি বলেন, আগের চেয়ে রেলপথে পণ্য আনা-নেয়া বেড়েছে। আগে অল্প সংখ্যক ট্রেন পণ্য নিয়ে আসতো। এখন প্রতিমাসে দেড় শ’র বেশি ট্রেন পণ্য আনা-নেয়া করছে। পণ্য নামানোর জন্য রেলওয়ের সক্ষমতার অভাব আছে। সেটি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, রেল ব্যবস্থাকে আরো কীভাবে আধুনিক, যুগোপযুগী এবং মানুষের জন্য সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলা যায়। রাজশাহী থেকে আব্দুলপুর পর্যন্ত রেললাইন ডাবল করার পরিকল্পনা আমাদের আছে। ধীরে ধীরে প্রত্যেকটা লাইনকে আমরা ডাবল লাইন করছি। খুলনা থেকে দর্শনা পর্যন্ত রেললাইন ডাবল করতে ডিপিপি তৈরির কাজ চলছে। জয়দেপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডাবল লাইন করার কাজ চলছে। যমুনা নদীর উপর ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন ব্রিজ হচ্ছে, সেই ব্রিজের ওপর দিয়ে ১০০ কিলোমিটার মিটারগেজ ও ১২০ কিলোমিটার ব্রডগেজ গতি নিয়ে চলাচল করতে পারবে। কোনো ট্রেনকে অপেক্ষা করতে হবে না, এক দিকে ট্রেন যাবে, আরেক দিকে আসবে। অন্যান্য লাইনও সেভাবে করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে রেলের গতি যাতে ১২০ কিলোমিটারের নিচে না নামতে হয়, সেই লক্ষ্যে আমরা রেলপথ সাজাচ্ছি।’
রাজশাহী থেকে কলকাতা সরাসরি যাত্রীবাহী ট্রেন চালুর ব্যাপারে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যে রাজশাহী থেকে কলকাতা সরাসরি যাত্রীবাহী ট্রেন চান, সেটি শোনার জন্যই এখানে এসেছি। আমরা দাবির কথা শুনছি। সিটি মেয়র ইতোমধ্যে ডিও প্রদান করেছেন, সেগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।’
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনকে জাতীয় চার নেতার একজন শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামানের নামে নামকরণ করার দাবির প্রেক্ষিতে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান শুধু আমাদের জাতীয় নেতাই নন, তিনি আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসের অংশ। এ ব্যাপারে আমাকে ফরমালি প্রস্তাব দেয়া হলে, আমরা অনুমোদন দিবো।’
পরিদর্শনকালে রাজশাহী সিটি মেয়র এ.এইচ.এম. খায়রুজ্জামান লিটন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের এমপি সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি আদিবা আনজুম মিতা, রেল কর্মকর্তারা, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও রেলওয়ে শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রাজশাহী পৌঁছানোর পর রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন এবং উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান সিটি মেয়র এ.এইচ.এম. খায়রুজ্জামান লিটন। এসময় রেলওয়ে শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা আলাদাভাবে রেলমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।