বাংলাদেশে মেয়েদের ফুটবলে তার পরিচয় ‘গোল মেশিন’ নামে। ম্যাচের পর ম্যাচে মুড়ি-মুড়কির মতো গোল করেই খেতাবটা পেয়েছেন সাবিনা খাতুন। দেশের প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে খেলেছেন বিদেশি পেশাদার লিগে। ফুটবল পায়ে এমন আরও অনেক প্রথমের জন্ম দিয়েছেন সাতক্ষীরার এই ২৮ বছর বয়সি মেয়ে। রোববার মেয়েদের প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় পর্ব শুরুর দিনেই প্রথম ফুটবলার হিসেবে লিগে ১০০ গোলের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। তবে দেশে এবং দেশের বাইরে ঘরোয়া অন্য প্রতিযোগিতা আর জাতীয় দল মিলিয়ে সাবিনার গোলসংখ্যা এখন ২৯৭টি। ১৯৯৩ সালের ২৫ অক্টোবর সাতক্ষীরায় মোহাম্মদ সাইদ গাজী আর মুমতাজ বেগমের ঘরে জন্ম নেওয়া সাবিনা অনাগত দিনগুলোতেও গোল করে যেতে চান ধারাবাহিকভাবে। ক্যারিয়ার শেষে নিজের নামের পাশে অন্তত ৫০০ গোল দেখতে চান এই স্ট্রাইকার। সময়ের আলোকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন এমনটাইÑ
প্রশ্ন : প্রথম ফুটবলার হিসেবে মেয়েদের লিগে ১০০ গোল, অনুভূতিটা কেমন?
সাবিনা : অনুভূতি আসলে অন্যরকম ছিল। কারণ, এটা অনেক বড় একটা পাওয়া।
প্রশ্ন : আপনার ক্লাব বসুন্ধরা কিংস যেভাবে উপলক্ষটা উদযাপন করল, সেটা মনে ধরেছে নিশ্চয়ই?
সাবিনা : বসুন্ধরা কিংস যেভাবে উদযাপন করল, টিমটাকে আরও সুন্দর করে দিয়েছে, এটাতে আসলে মনটা ভরে গেছে। ক্লাবকে ধন্যবাদ জানালে আসলে ছোট করা হবে। তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাচ্ছি।
প্রশ্ন : আপনার এই কীর্তি অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা কি?
সাবিনা : অবশ্যই, অবশ্যই অনুপ্রেরণার। এটা দেখে মেয়েরা ফুটবলের প্রতি আগ্রহী হবে, যারা খেলছে তারা আরও সামনে অগ্রসর হতে চাইবে।
প্রশ্ন : আপনার ফুটবলার হয়ে ওঠার গল্পটা জানতে চাই।
সাবিনা : এটা তো অনেক বড় কাহিনি।
প্রশ্ন : সংক্ষেপে বলুন।
সাবিনা : আমার জেলায় (সাতক্ষীরা) যিনি কোচ ছিলেন, ওনার হাত ধরেই আমার ফুটবলে আসা। ওনার নাম মোহাম্মদ আকবর আলী। আমার ফুটবলার হয়ে ওঠার পেছনে ওনার সব থেকে বড় অবদান। অবদান আছে আমার পরিবারেরও। ২০০৮ সালে আমি ঢাকায় আসি, ন্যাশনাল ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে। সিটিসেল ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ নামে তখন একটা আন্তঃজেলা টুর্নামেন্ট হতো। সেখান থেকেই জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পাই। ২০০৯ সালে ক্যাম্পে উঠি। ওই বছরের শেষদিকে যে সাউথ এশিয়ান গেমস হয়, ওই গেমস থেকেই আসলে (জাতীয় দলে) আমার যাত্রা শুরু।
প্রশ্ন : সাতক্ষীরার মতো একটা জায়গা থেকে মেয়েদের ফুটবলে উঠে আসা, অনুপ্রেরণা পেলেন কোথা থেকে?
সাবিনা : আমার পরিবারই হচ্ছে সব থেকে বড় অনুপ্রেরণা। বিশেষ করে আমার বড় বোন। আমার পরিবার খেলাধুলার ক্ষেত্রে কখনই বাধা দেয়নি বরং উৎসাহ দিয়েছে। খেলাটা ছিল আমার নেশা। আমি ছোটবেলা থেকেই ছেলেদের সঙ্গে খেলতাম। আমার জন্য কাজটা তাই খুব কঠিন ছিল না।
প্রশ্ন : জাতীয় দলের জার্সিতে কোনো লক্ষ্য?
সাবিনা : বাংলাদেশকে একটা ভালো কিছু উপহার দিয়ে যেতে চাই। ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে যেতে চাই। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে চাই।
প্রশ্ন : ক্লাব আর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার মিলিয়ে আপনার গোলসংখ্যা ৩৫০ ছাড়িয়ে গেছে। ক্যারিয়ার শেষে নামের পাশে কত গোল দেখতে চান?
সাবিনা : (৫০০ গোল করার) একটা লক্ষ্য তো আছেই। আমি এখন যেভাবে খেলে যাচ্ছি, এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখব, সেটাই এখন চাই। গোল করে যেতে চাই।
প্রশ্ন : মেয়েদের যে লিগটা হচ্ছে, এই লিগ নিয়ে আপনার অভিমত?
সাবিনা : সত্যিকার অর্থে লিগটা খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নয়। তবে মেয়েদের ফুটবল মাঠে গড়ানোটা খুবই জরুরি ছিল। এটা চলমান থাকলে অবশ্যই দিনকে দিন আরও ভালো হবে এবং আমি সেই প্রত্যাশাই রাখি।